০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`


ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে ছোট গাড়ির রাজত্ব ভোগান্তিতে যাত্রীরা

আবদুল্লাহপুরে যানবাহনের অপেক্ষায় মানুষ। ঈদ শেষে রাজধানীতে ফিরতেও ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে : নয়া দিগন্ত -

ঈদের ছুটি শেষে রাজধানীর কর্মস্থলে ফিরছে মানুষ। চাপ বাড়ছে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে। দূরপাল্লার গণপরিবহন বন্ধ থাকলেও ব্যক্তিগত ছোট গাড়ি, ভাড়ায় চালিত প্রাইভেট কার, অটো, সিএনজি, মোটরসাইকেলে কর্মস্থলের গন্তব্যে ছুটছে এসব যাত্রী। এসব ছোট ছোট গাড়িই এখন মহাসড়কে রাজত্ব করছে। তবে নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে অতিরিক্ত ভাড়া গুনতে হচ্ছে যাত্রীদের। এতে করে বিপাকে পড়েছে নিম্ন আয়ের মানুষ। পরিবার পরিজন আর ব্যাগ-পত্র নিয়ে ভোগান্তিতে পড়ে মানুষ।
গতকাল সোমবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের ঘিওর উপজেলাধীন তরা বাসস্ট্যান্ডে অপেক্ষায় থাকতে দেখা যায় জেলার অভ্যন্তরীণ চলাচলের একটি বাস, একটি প্রাইভেটকার ও কয়েকটি মোটরসাইকেল চালকদেরকে। রিকশা ও ভ্যানে করেও যাচ্ছেন যাত্রীরা।
মহাসড়কের পুখুরিয়া স্টেশনের কসমেটিকস দোকানদার কাইয়ুম এবং নির্মাণসামগ্রী বিক্রেতা মো: মিন্টু মিয়া জানান, ভোরের দিকে পাটুরিয়া থেকে নবীনগর পর্যন্ত যাত্রী নিয়ে চলে গেছে সেলফি, নিলাচল, শুভযাত্রা, নূরে কাবাসহ বিভিন্ন বাস। পরে পুলিশের টহল ও চেকপোস্টের জন্য ঢাকামুখী যাত্রীবাহী বাস আর দেখা যায়নি। এরপর থেকে জেলাভিত্তিক যাত্রী বহন করে বাস শ্রমিকরা। কিন্তু ভাড়ায় চালিত ছোট গাড়ি এবং মোটরসাইকেল চালকরা যাত্রী নিচ্ছে নির্দিষ্ট গন্তব্যেই।
ঘিওর উপজেলার রাথুরা গ্রামের মাহফুজ আহমেদ নামে এক পোশাকশ্রমিক স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে বানিয়াজুরী বাসস্ট্যান্ডে এক ঘণ্টার বেশি সময় দাঁড়িয়ে রয়েছেন। গন্তব্য সাভারের ইপিজেড এলাকায় তার কর্মস্থল। তিনি বলেন, সকাল ৯টা থেকে ঘণ্টাখানেক অপেক্ষা করার পরও কোনো বাসে উঠতে পারিনি। যেখানে বাসে গেলে ভাড়া হতো ২ শত টাকার মতো। এখন সিদ্ধান্ত নিয়েছি ভাড়ায় চালিত প্রাইভেট কারে রওনা দেবো, এরপর একটি প্রাইভেট কারে অনেক দরদাম করে ভাড়া মিটালেন দুই হাজার পাঁচ শত টাকা।
শামিম আনসারী নামে এক মোটরসাইকেল চালক বলেন, সকালে বরংগাইল স্টেশন থেকে নবীনগর পর্যন্ত দুইজন যাত্রী নিয়ে এক হাজার টাকা ভাড়ায় নিয়ে যাচ্ছেন। ভাড়ায় মোটরসাইকেল চালক ধামরাইয়ে সুয়াপুর এলাকার বাদল মিয়া জানান, পাটুরিয়া ফেরিঘাট থেকে গাবতলী পর্যন্ত দুই হাজার টাকা ভাড়ায় যাত্রী নিচ্ছেন তিনি। এতে একজন গেলেও দুই হাজার আবার দুইজন গেলেও দুই হাজার টাকা ভাড়া। মাগুরা থেকে আসা সাজিবর শেখ নামের এক যাত্রীর সাথে কথা মহাসড়কের জোকা এলাকায়। চাকরি করেন রাজধানীর আগারগাঁওয়ে। রোববারই তার কর্মস্থলে যোগদানের কথা ছিল। কিন্তু পরিবহন ঝামেলাজনিত কারণে সোমবার বাড়ি থেকে রওনা দিয়েছেন। তিনি বলেন, বাড়ি থেকে দৌলতদিয়া পর্যন্ত অনায়াসেই আসতে পেরেছন। বিপত্তি বাধে পাটুরিয়া ঘাটে এসে। অনেক যাত্রী থাকলেও, নেই ঢাকা যাওয়ার কোনো বাস। প্রাইভেটকার করে গাবতলী বা নবীনগর ৬০০ টাকা। আর মোটরসাইকেলে এক হাজার টাকা। ১০০ টাকার ভাড়া এক বা দুই হাজার টাকা দিয়ে উচ্চবিত্তের লোকজন যাতায়াত করতে পারলেও নিম্নবিত্তের লোকজন বাসে করে ভেঙে ভেঙে গন্তব্যে যাওয়া ছাড়া কোনো বিকল্প নেই বলে জানান তিনি। তাই তিনি প্রথমে অটোরিকশা ও পরে জেলাভিত্তিক অভ্যন্তরীণ চলাচলের একটি বাসে করে মানিকগঞ্জ পর্যন্ত যাচ্ছেন। এরপর আরো কয়েকটি পরিবহনে ভেঙে ভেঙে গন্তব্যে যাবেন।
অভ্যন্তরীণ বাসচালক মানিকগঞ্জের পশ্চিম সেওতা এলাকার ইউসুফ আলী বলেন, মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ঘাট থেকে বারবারিয়া এলাকা পর্যন্ত ঢাকামুখী বাসগুলো চলাচল করছে। আমরা নির্ধারিত ভাড়া এক শ’ টাকাই নিচ্ছি। আর বারবারিয়া ব্রিজ পার হলেই আবার ঢাকার দিকের বাস আছে। যাত্রীরা ভেঙে ভেঙে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার কর্মস্থলে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
সার্বিক পরিস্থিতির বিষয়ে জানতে চাইলে গোলড়া হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম বলেন, জেলাভিত্তিক বাস চলাচলের বিষয়টি জেলা পুলিশ দেখভাল করছে। ঢাকা আরিচা মহাসড়কে কর্মমুখী মানুষের চাপ থাকলেও মহাসড়কের কোথাও কোনো যানজট নেই। পুরো মহাসড়ক এলাকাজুড়ে হাইওয়ে পুলিশের টহল টিম কাজ করছে বলে জানান তিনি।


আরো সংবাদ



premium cement