করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সরকারঘোষিত কঠোর লকডাউন তদারকির যেন কেউ নেই। মাঝে মধ্যে দু-একটি মোবাইল কোর্ট পরিচালনা ছাড়া সরকারি আর কোনো পদক্ষেপ চোখে পড়ছে না। এ দিকে মার্কেট শপিংমল খুলে দেয়া ও বিভিন্ন ধরনের যানবাহন চলাচলের ওপর থেকে বিধিনিষেধ তুলে নেয়ায় হযবরল অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে। স্বাস্থ্যবিধি না মেনেই মার্কেটগুলোতে হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন ক্রেতারা। মুভমেন্ট পাস দেখা দূরে থাক রাস্তার যানজট সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে পুলিশ। বাজার- ঘাট, পাড়া-মহল্লায় চলছে মানুষের অবাধ চলাফেরা। এতে শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন অনেকেই। তারা বলছেন, পার্শ্ববর্তী ভারতে করোনাভাইরাসের ভয়াবহতা দেখে আমরা শঙ্কিত। আমাদের উচিত জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের না হওয়া। কিন্তু দুর্ভাগ্য, অনেকেই শপিংয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। আবার সরকার লকডাউন দিয়ে রাখলেও দূরপাল্লার যানবাহন ছাড়া সব কিছু খুলে দিচ্ছে। লকডাউন তদারকি করার কাউকে পাওয়া যাচ্ছে না।
সূত্র মতে, জরুরি প্রয়োজনে ঘর থেকে বের হওয়া এবং ফিরে আসার জন্য পুলিশের অনুমতি নেয়ার ঘোষণা দেয়া হয়। যার প্রেক্ষিতে গত ১৪ এপ্রিল থেকে পুলিশের তৈরি বিশেষ অ্যাপ ব্যবহার করে ‘মুভমেন্ট পাস’ নিয়েই চলাচল করার অনুমতি দেয়া হয়। মুভমেন্ট পাস নেয়ার আগ্রহে পুলিশের এমন নির্দেশনার পর প্রথম দিনে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ২০ লাখ হিট পড়েছিল। কিন্তু সেই লকডাউন চলমান থাকলেও মুভমেন্ট পাস নিতে আগ্রহ হারিয়েছে মানুষ। উল্টো মুভমেন্ট পাস ছাড়াই রাজধানীতে গাড়ির চাপে তীব্র যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। পুলিশ মুভমেন্ট পাস চেক করা দূরে থাক গাড়ির চাপ সামলাতেই হিমশিম খাচ্ছে। তুলে ফেলা হয়েছে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে থাকা ব্যারিকেডগুলো। একইভাবে লকডাউনে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল মার্কেট শপিংমলগুলো। কিন্তু লকডাউন চললেও সেগুলোও খুলে দেয় সরকার। এরপর থেকে মানুষ হুমড়ি খেয়ে পড়তে থাকে শপিংমলগুলোতে। কেউ কেউ মাস্ক ব্যবহার করলেও সামাজিক দূরত্বের কথা বেমালুম ভুলে যাচ্ছেন সবাই। একই দোকানে ১০-১২ জন ঠাসাঠাসি করে পণ্য দেখছেন। আবার প্রথম দিকে ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে ক্রেতাদের হাতে সেভলনের পানি ছিটিয়ে দিতে দেখা গেলেও মানুষের ভিড়ে এখন আর সেগুলো করা হচ্ছে না। গতকাল বুধবার নিউমার্কেট, ধানমন্ডি হকার্স মার্কেট গাউছিয়া, চাঁদনীচকসহ আশপাশের কয়েকটি মার্কেটে গিয়ে দেখা যায় ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড়। এসব ক্রেতার মধ্যে বেশির ভাগই বিভিন্ন বয়সী নারী। বিক্রিও হচ্ছে নারীদের পোশাকই। তাদের অনেকেই দলবেঁধে কেনাকাটা করছেন।
মিরপুরের ফার্মেসি মালিক আনোয়ার হোসেন বলেন, করোনা প্রতিরোধ খুবই জরুরি। ভারতের অবস্থা আমাদের ভাবিয়ে তুলেছে। সরকার লকডাউন ঘোষণা করে সঠিক পদক্ষেপ নিয়েছে। কিন্তু লকডাউন তদারকি করার কেউ নেই। প্রথমদিকে বেশ কড়াকড়ি করা হলেও বর্তমান অবস্থা দেখে করোনা আক্রান্ত দেশে লকডাউন চলছে এমন মনেই হয় না। তিনি বলেন, দেশের মানুষ করোনার চাইতে শপিংকে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে।
এ দিকে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ ও র্যাবের কয়েকটি ভ্রাম্যমাণ আদালত ছাড়া লকডাউন তদারকির আর কেউ নেই। আদালতগুলো প্রথমদিকে রাস্তায় মুভমেন্ট পাস তদারকিতে অভিযান চালালেও বর্তমানে শপিংমলে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। তবে সেটি প্রয়োজনের চেয়ে অনেক কম বলে মনে করছেন মানুষ। ফার্মগেটে কাপড়বোঝাই পিকআপ ভ্যানচালক শফিক জানান, তিনি মুভমেন্ট পাস ছাড়াই গাড়ি চালাচ্ছেন। বিভিন্ন দোকানে পোশাক সরবরাহ করছেন। তিনি বলেন, লকডাউনের শুরুর দিকে একবার মুভমেন্ট পাস নিয়েছিলেন। এরপর আর নেয়া লাগেনি। মাঝে পুলিশ কয়েকবার ধরলেও টাকা দিয়ে ম্যানেজ করেছেন। কিন্তু গত এক সপ্তাহ হলো পুলিশও ধরছে না। শফিকের পরিচিত অনেক চালক রয়েছেন, যারা কেউ এখন আর মুভমেন্ট পাস নিচ্ছেন না।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে একজন পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে মোড়ে চেকপোস্ট আগের মতোই রয়েছে। মার্কেট ও শপিংমল খোলায় ব্যক্তিগত গাড়ির চাপ সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের। এ অবস্থায় মুভমেন্ট পাস দেখা হয়ে উঠছে না। কারণ রাস্তায় একটি গাড়ি দাঁড় করিয়ে মুভমেন্ট পাস চেক করতে গেলে মুহূর্তের মধ্যে তার পেছনে আরো ৩০-৪০টি গাড়ি দাঁড়িয়ে যাচ্ছে। এতে করে যানজট আরো ভয়াবহ হয়ে উঠছে। প্রচণ্ড গরমে আটকে থেকে যাত্রীরাও উল্টো-পাল্টা কথা বলতে শুরু করে, যার কারণে আগের মতো তদারকি সম্ভব হয়ে উঠছে না।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা