০২ মে ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১, ২২ শাওয়াল ১৪৪৫
`


দেড় কিমি ব্রিজে পরামর্শক ব্যয় ৯৭ কোটি টাকা

করোনায় বিদেশ ট্যুরে ব্যয় পৌনে ২ কোটি টাকা; প্রতি কিলোমিটার ব্রিজে সাড়ে ৩০০ কোটি টাকা; প্রতি কিলোমিটার নদী শাসনে ৪০ কোটি টাকা
-

দেশের ভেতরে আঞ্চলিক যোগাযোগ উন্নয়নের জন্য প্রায় শত কোটি টাকা খরচের প্রস্তাব করা হয়েছে পরামর্শক খাতে। বাগেরহাট জেলার পানগুচি নদীর ওপর ১.৪ কিলোমিটার ব্রিজ নির্মাণে পাঁচ ধরনের পরামর্শকসেবা খাতেই খরচ ধরা হয়েছে ৯৬ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। আঞ্চলিক একটি ব্রিজের জন্য এত বিশাল অঙ্কের অর্থ পরামর্শক খাতে ব্যয় করা নিয়ে প্রশ্ন ও আপত্তি খোদ পরিকল্পনা কমিশনের। এমনকি সেতু নির্মাণ এই প্রকল্পে নদী শাসনের কাজটিও সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) করবে দেখে হতভম্ব কমিশন। প্রতি কিলোমিটার নদী শাসনে খরচ ধরা হয়েছে ৪০ কাটি টাকা; যা বিদ্যমান নদী শাসনের চেয়ে অনেক বেশি। করোনা পরিস্থিতিতেও বিদেশে প্রশিক্ষণের নামে প্রায় পৌনে দুই কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য পেশ করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের প্রস্তাবনায় দেখা যায় বাগেরহাট জেলার পানগুচি নদীর ওপর সেতু নির্মাণের মাধ্যমে বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে উপজেলা পর্যায়ে নিরবচ্ছিন্ন সড়ক নেটওয়ার্কের উন্নতি এবং বাগেরহাট জেলার মোরেলগঞ্জ ও শরণখোলা উপজেলার নিরবচ্ছিন্ন সড়ক যোগাযোগব্যবস্থা তৈরি। বর্তমানে সেখানে ফেরির মাধ্যমে যোগাযোগ চলে। আর সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকায় অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও পর্যটন শিল্পের বিকাশ ত্বরান্বিত করার জন্য এই প্রকল্প হাতে নেয়া। প্রকল্পটির নাম হলো, সাইনবোর্ড-মোরেলগঞ্জ-রায়েন্দা-শরণখোলা-বগী সড়কের (আর-৭৭৩) ১৭তম কিলোমিটারে পানগুচি নদীর ওপর পানগুচি সেতু নির্মাণ। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে আগামী ২০২৫ সালের জুন মেয়াদে সোয়া চার বছরে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৯১২ কোটি ৩৩ লাখ ৩ হাজার টাকা। যার মধ্যে কুয়েত ফান্ডের ঋণ ৩৯৯ কোটি ৮২ লাখ ৯৮ হাজার টাকা। আর সরকারি অর্থায়ন ৫১২ কোটি ৫০ লাখ টাকা। প্রকল্পটি চলতি অর্থবছর সংশোধিত এডিপিতে বৈদেশিক সাহায্য প্রাপ্তির সুবিধার্থে বরাদ্দবিহীন অননুমোদিত নতুন প্রকল্পের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
প্রকল্পের মূল কাজগুলো হলোÑ ১.৪ কিলোমিটার দীর্ঘ (১৪০০ মিটার) ব্রিজ নির্মাণ, ১৭.৮৩ হেক্টর জমি অধিগ্রহণ, পুনর্বাসন ও ক্ষতিপূরণ, সোয়া দু’লাখ ঘনমিটার মাটির কাজ, রিভার ট্রেনিং দেড় কিলোমিটার, এক্সেল লোড নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র স্থাপন এবং পরামর্শক সেবা এক হাজার ৩২০ জনমাস।
প্রস্তাবনার ব্যয় বিভাজনে দেখা যায়, ১.৪ কিলোমিটার দীর্ঘ (১৪০০ মিটার) ব্রিজ নির্মাণে খরচ ধরা হয়েছে ৪৯০ কোটি টাকা। যার মধ্যে ব্রিজের সাব-স্ট্রাকচার ১.৪ কিলোমিটারে ২৮০ কোটি টাকা এবং সুপার স্ট্রাকচার ১.৪ কিলোমিটারে ২১০ কোটি টাকা। ফলে প্রতি কিলোমিটার সেতুতে খরচ হবে ৩৫০ কোটি টাকা। আর ১৭.৮৩ হেক্টর জমি অধিগ্রহণে যাবে ৭৬ কোটি ৩২ লাখ ১৬ হাজার টাকা এবং পুনর্বাসনও ক্ষতিপূরণে যাবে পৌনে ২০ কোটি টাকা।
এ ছাড়া, প্রকল্পে পাঁচ ধরনের পরামর্শক প্রয়োজনের কথা বলা হয়েছে। যাদের পেছনে খরচ প্রাক্কলন করা হয়েছে ৯৬ কোটি ৯৬ লাখ ৬০ হাজার টাকা। এর মধ্যে পরিবেশ, সামাজিক, ট্রাফিক খাতে পরামর্শক খরচ ৫৫ লাখ টাকা। ডিজাইন খাতে পরামর্শক খরচ ১১৩ জনমাসে ১৩ কোটি এক লাখ ৭৩ হাজার টাকা। প্রকল্প বাস্তবায়নে পরামর্শক এক হাজার ১০৭ জনমাসে ৭৮ কোটি ৯০ লাখ ১৬ হাজার টাকা। রিসেটেলমেন্টে কাজে এনজিও পরামর্শক খাতে ৯৯ লাখ ৭১ হাজার টাকা এবং প্যানেল এক্সপার্ট পরামর্শক খাতে সাড়ে তিন কোটি টাকা। প্রকল্পের ডিসপুট বোর্ড তৈরিতে যাবে সোয়া কোটি টাকা। আর ব্রিজ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে ৩৫ লাখ টাকা।
অন্য দিকে, ৩৩ জন নিরাপত্তাকর্মী ভাড়া করার জন্য খরচ দুই কোটি ৭০ লাখ ৮৪ হাজার টাকা। চারটি গাড়ির রেজিস্ট্রেশন ফি ধরা হয়েছে ১১ লাখ ১২ হাজার টাকা। হায়ারিং চার্জ দুই কোটি ৩০ লাখ ৮১ হাজার টাকা। এক্সেল লোড নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র স্থানে ধরা হয়েছে ১৫ কোটি ৯৭ লাখ ১১ হাজার টাকা।
জানা গেছে, তৃতীয় প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে প্রকল্পটির সম্ভাব্যতা সমীক্ষা করা হয়েছে। সমীক্ষায় উল্লেখ করা হয়, প্রস্তাবিত সড়কটির বার্ষিক গড় যান চলাচলের সংখ্যা ১১ হাজার ১৭৫টি, যার মধ্যে ভারী যান ৫৮০টি, হালকা যান ১০ হাজার ৫৯৫টি। সেতুটি টোলযুক্ত বিধায় আর্থিকভাবে লাভজনক হবে।
পরিকল্পনা কমিশনের সংশ্লিষ্ট বিভাগ বলছে, মাত্র ১.৪ কিলোমিটার সেতু নির্মাণের জন্য পরামর্শক খাতে ৯৬ কোটি ৯৬ লাখ টাকা খরচ অনেক বেশি। দেড় কিলোমিটার নদী শাসনের জন্য ৬০ কোটি টাকা প্রস্তাব বেশি। আর এই কাজ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নাকি সড়ক ও জনপথ বিভাগের? প্রকল্পে দু’টি জিপ, একটি করে পিকআপ ও মোটরসাইকেল কেনা হবে। কিন্তু এই খাতে ৪৭ লাখ ৮৬ হাজার টাকার পেট্রল, অয়েল ও লুব্রিকেন্ট খরচ ধরা হয়েছে, যা যানবাহনের সংখ্যার সাথে যৌক্তিক করা প্রয়োজন।


আরো সংবাদ



premium cement