০১ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১, ২১ শাওয়াল ১৪৪৫
`


সিপিডির আলোচনায় বক্তারা

এসডিজির লক্ষ্য অর্জনে স্থানীয় সরকার কমিশন গঠন প্রয়োজন

গুলশানে সিপিডির গোলটেবিল বৈঠকে আলোচকেরা হনয়া দিগন্ত -

স্থানীয় সরকার কমিশন গঠন ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে স্থানীয় সরকারকে গতিশীল করে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্টের (এসডিজি) লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব বলে মনে করছেন স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞরা ও বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি)। বক্তারা স্থানীয় সরকারকে স্বাধীনভাবে কাজ করার পাশাপাশি জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে নাগরিক সমাজকে সম্পৃক্ত করার পরামর্শ দিয়েছেন। এই কমিশন স্বাধীনভাবে স্থানীয় সরকার প্রতিনিধিদের পরিচালনা করবে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রী এম তাজুল ইসলাম বলেছেন, স্থানীয় সরকার কমিশন গঠন করা কঠিন একটি কাজ। তবে সরকার সব সময়ই স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করার কাজ অব্যাহত রেখেছে।
রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে গতকাল সিপিডি আয়োজিত ডেলিভারিং এসডিজি ইন বাংলাদেশ থ্রু আরবান লোকাল গর্ভমেন্ট শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা এ অভিমত ব্যক্ত করেন। সিপিডির সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো: তাজুল ইসলাম। বক্তব্য রাখেন সাবেক অর্থমন্ত্রী এম সাইদুজ্জামান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক সালাহউদ্দিন এম আমিনুজ্জামান, সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল অব: এম সাখাওয়াত হোসেন, মাদারীপুরের পৌরমেয়র, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) ডেপুটি কান্ট্রি ডিরেক্টর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক ফেরদৌস আফ্রিন ওসমান, সিপিডির সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, নারী নেত্রী মালেকা বেগম, লাকসাম পৌরসভার মেয়র আবুল খায়ের, সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন। গবেষণা প্রতিবেদন তুলে ধরেন সিপিডির সিনিয়র রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট উম্মে শেফা রেজবানা।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকার স্থানীয় সরকার শক্তিশালী করতে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে। স্থানীয় সরকার শক্তিশালী করে গ্রামীণ অর্থনীতিকে চাঙ্গা করা সরকারের বিশেষ লক্ষ্য। তিনি বলেন, স্থানীয় সরকারের মাধ্যমে গ্রামীণ সম্পদ আহরণের পরিমাণ বাড়াতে হবে। এ জন্য খাল বিল ও কৃষি জমি থেকে কিভাবে আরো বেশি সম্পদ আহরণ করা যায়, সেদিকে নজর দিতে হবে। স্থানীয় সরকারের আয় বাড়াতে হলে কৃষি খাত থেকে সম্পদ আহরণের পরিমাণ বাড়াতে হবে।
এম সাইদুজ্জামান বলেন, জেলা পর্যায়ের বাজেট করার কথা আমরা বহুদিন ধরেই শুনে আসছি। কিন্তু প্রকৃত বাস্তবায়ন দেখতে পাচ্ছি না। সপ্তম ও অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা এবং এসডিজি কিভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছে তা সরকারের পর্যালোচনা করা উচিত।
সালাহউদ্দিন এম আমিনুজ্জামান বলেন, স্থানীয় সরকার কমিশন গঠন করে তাদের গতিশীল করা হলে স্থানীয় সরকার অনেক শক্তিশালী হবে। আগামী ২০২৫ সালের মধ্যে ঢাকা শহরে জনসংখ্যা হবে দুই কোটি। এ জনসংখ্যা বেইজিং ও সাংহাইকে ছাড়িয়ে যাবে।
সিপিডির সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, স্থানীয় সরকার পরিচালনা করতে পৃথিবীর অনেক দেশে স্থানীয় সরকার কমিশন রয়েছে। কোনো কোনে দেশে এ কমিশনকে স্থানীয় সরকার অর্থ কমিশন বলে। তিনি বলেন, বাংলাদেশে একটি শক্তিশালী স্থানীয় সরকার কমিশন গঠন করার প্রয়োজন রয়েছে। এ কমিশন কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে বাজেট নিয়ে কোনো পৌরসভায়, উপজেলায় ও ইউনিয়নে কত টাকার বাজেট লাগবে তা নির্ধারণ করবে। একই সাথে কোনো স্থানীয় সরকার প্রতিনিধি দুর্নীতি করলে তার বিরুদ্ধেও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে এ কমিশন। তিনি বলেন, স্থানীয় সরকারের ক্ষমতা, বাজেট দেয়া ও খরচ করার বিষয়গুলো পরিষ্কার করার জন্য একটি স্থানীয় সরকার কমিশন দরকার। এ ছাড়া বিভিন্ন সময়ে বৈরী রাজনীতি কিংবা বিভিন্ন কারণে চেয়ারম্যানদের বরখাস্ত করা হয়। কিন্তু কমিশন থাকলে তারা একটা প্রটেকশন পাবে। মন্ত্রণালয় ইচ্ছা করলে যে কাউকে সহজেই বরখাস্ত করতে পারবে না। তিনি বলেন, এ কমিশন হবে জুডিশিয়াল কমিশনের মতো। জুডিশিয়াল কমিশন যেভাবে বিচারপতি, দায়রা জজ, ম্যাজিস্ট্রেটকে সুপ্রিম কোর্টের অধীনে রেখে তাদের পরিচালনা করে, স্থানীয় সরকার কমিশনও অনেকটা সে রকম হবে। তারা তাদের স্বায়ত্ত শাসনের ভেতর থাকবে।
দেবপ্রিয় বলেন, প্রাথমিক শিক্ষা, প্রাথমিক স্বাস্থ্য, পরিবেশ দূষণ রোধের ক্ষমতা সরাসরি স্থানীয় সরকারকে দিতে হবে। এখন প্রশ্নটা উঠেছে যে, এসব পরিচালনা করার ক্ষমতা তাদের আছে কি না? পাশাপাশি তাদের জবাবদিহিতার কাঠামো ঠিক আছে কি না? তারা যেন চুরি-তছরুপ করতে না পারে সে জন্য নাগরিক সমাজের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। তিনি বলেন, নগরায়নে স্থানীয় সরকারকে নতুনভাবে কাঠামো গঠনে নজর দিতে হবে। আমাদের মানসিকতায় পরিবর্তন আনতে হবে।
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব:) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, স্থানীয় সরকার ক্ষমতায়ন করতে হলে নারীর ক্ষমতায়ন করতে হবে। স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন স্তরে সংরক্ষিত নারী আসন থাকলেও বাস্তবে তাদের কোনো ক্ষমতা নেই, কাজ নেই। তাদের সুনির্দিষ্ট দায়িত্ব দিতে হবে। তিনি বলেন, বাজার মানেই মিউনিসিপ্যালেটি বুঝি। বাজার বন্ধ হয়ে গেলে ওটাও বন্ধ হয়ে যায়। বিরোধী দলের মেয়ররা আতঙ্কে থাকেন। এটাকে দূর করতে হবে। তিনি বলেন, স্থানীয় সরকার কাঠামোতে পরিবর্তন আনতে হবে। মহিলা প্রতিনিধিরা অভিযোগ করছেন তাদের কাজ করতে দেয়া হয় না।
বিভিন্ন পৌরমেয়র বলেন, আরবান স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করা হলে এসডিজি বাস্তবায়ন কঠিন হয়ে যাবে। এ ক্ষেত্রে নারীদের কাজে লাগাতে হবে। পৌরসভার কাজের মনিটরিং করার কেউ নেই। তারা বলেন, সংবিধান আছে, আইন আছে, কিন্তু বিধি না থাকায় তারা অনেক কিছুই বাস্তবায়ন করতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছেন। সরকারের উচিত স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করতে স্থানীয় সরকার সপ্তাহ পালন করা। ডিসিদের সাথে সরকার যেমন তিনদিন ব্যাপী সম্মেলন করে, পৌরমেয়রদের নিয়েও সেটা করা উচিত।
ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, স্থানীয় সরকারের সম্পদ আহরণের প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে। তাদের সম্পদের উৎস বাড়াতে হবে। কিছু কিছু আইন সংস্কার করতে হবে। প্রয়োজনে স্থানীয় সরকার পর্যায়ে এসডিজি পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। বিশেষ করে নগরে। আমরা নগর দারিদ্র্য দেখতে পাচ্ছি।


আরো সংবাদ



premium cement
রেকর্ড তাপদাহের মধ্যে ভয়াবহ লোডশেডিংয়ের কবলে দেশ অতি বাম আর অতি ডান মিলে সরকার উৎখাতে কাজ করছে : শেখ হাসিনা যশোর ও চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪৩.৮ ডিগ্রি মহান মে দিবস আজ এপ্রিলে নির্যাতন-হয়রানির শিকার ৪৭ সাংবাদিক পেট্রল-অকটেনের দাম বেড়েছে আড়াই টাকা, ডিজেল ও কেরোসিনে ১ টাকা রাখাইনে রোহিঙ্গাদের অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩৫, কোটায় ৩৭ বছর করার সুপারিশ ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিচ্ছে ইইউ বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক উন্নতিতে বড় সুবিধাভোগী উত্তর-পূর্ব ভারত : এস জয়শঙ্কর পরমাণু শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহারে বাংলাদেশ অঙ্গীকারবদ্ধ : পররাষ্ট্রমন্ত্রী

সকল