৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫
`


সব স্রোত মিলেছিল মেলায়

-

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার সর্বত্র ছিল ভাষাপ্রেমী মানুষের ঢল। গতকাল সকাল থেকেই শহীদ মিনার-শাহবাগ- দোয়েল চত্বরসহ বিভিন্ন রাস্তায় মানুষের স্রোত বইছিল। ভিড় ঠেলে একসময় সব স্তরের জনস্রোত গ্রন্থমেলার মোহনায় গিয়ে মিলেছে। এর আগে সকাল থেকেই প্রথমে শহীদ মিনারে ফুল হাতে মানুষের মেলা বসে। মহান ভাষাশহীদদের প্রতি সম্মান জানাতে সবাই শহীদ মিনারে জড়ো হন। ফুলে ফুলে রঙিন হয়ে ওঠে শহীদ মিনার। শহীদদের সম্মান প্রদর্শন শেষে প্রত্যেকের গন্তব্য ছিল বইমেলা। সকাল ৮টায় মেলার দরজা খোলার আগেই বাইরে মানুষের দীর্ঘ লাইন পড়ে যায়। যথা সময় গেট খোলার সাথে সাথে স্রোতের মতো মানুষ মেলায় প্রবেশ করতে থাকেন। যা দিন বাড়ার সাথে বাড়তে থাকে। একপর্যায়ে বিকেল ৩টার পর বইমেলা প্রাঙ্গণসহ শাহবাগ এলাকা লোকারণ্য হয়ে পড়ে। মেলা গেটে পড়ে যায় দীর্ঘ লাইন। বিকেল সাড়ে ৮টার দিকে মেলার ভেতর লোকে লোকারণ্য হয়ে পড়ে। মেলা প্রাঙ্গণ-স্টল সর্বত্রই মানুষে মানুষে একাকার হয়ে যায়। শেষে ভিড়ের কারণে মেলায় প্রবেশ না করে অনেকেই গেট থেকে ফিরে যান।
স্টল মালিকেরা জানান, প্রতি বছর ২১ ফেব্রুয়ারিতেই সবচেয়ে বেশি বই বিক্রি হয়। গতকালও তার ব্যতিক্রম ছিল না। প্রতিটি স্টলে ভিড় ঠেলে প্রবেশ ছিল কষ্টকর। তারপর দীর্ঘ লাইন থেকে পাঠকরা তাদের পছন্দেও বই কিনেছেন। এর আগে সকাল সাড়ে ৭টায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় স্বরচিত কবিতা পাঠের আসর। এতে দেড় শতাধিক নবীন-প্রবীণ কবি কবিতা পাঠে অংশ নেন। বিকেল ৪টায় একই মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় অমর একুশে বক্তৃতা। বাংলা ভাষার অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ শীর্ষক একুশে বক্তৃতা দেন জাতীয় অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে স্বাগত ভাষণ দেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী। সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। অনুষ্ঠানের শুরুতে পুরানা ঢাকার চকবাজারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে নিহতদের স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন প্রকাশিত গ্রন্থ বিষয়ে আলোচনায় অংশ নেন খালেদ হোসাইন, শাহাদুজ্জামান, ফারুক ওয়াসিফ, রাহেল রাজিব ও তপন পালিত।
কবিকণ্ঠে কবিতাপাঠ করেন কবি নির্মলেন্দু গুণ, হাসান হাফিজ, কাজল বন্দ্যোপাধ্যায়, জাফর আহমদ রাশেদ, আলফ্রেড খোকন এবং সোহেল হাসান গালিব। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী ইকবাল বাহার চৌধুরী, আহ্কাম উল্লাহ এবং তামান্না সারোয়ার। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে ছিল ফকির সিরাজের পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘ঋষিজ শিল্পীগোষ্ঠী’র পরিবেশনা। সঙ্গীত পরিবেশন করবেন শিল্পী ফকির আলমগীর, প্রমীলা চক্রবর্তী, মহাদেব ঘোষ, লাইসা আহমদ লিসা, বুলবুল ইসলাম, জান্নাত-ই-ফেরদৌসী এবং নীলোৎপল সাধ্য। যন্ত্রাণুষঙ্গে ছিলেন এনামুল হক ওমর (তবলা), মো: ফারুক (প্যাড), রবিনস চৌধুরী (কী-বোর্ড) এবং আবু কামাল (বেহালা)।
গতকাল মেলায় নতুন বই এসেছে ৩৯৬টি। এছাড়া এসেছে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের বই শ্রেষ্ঠ কিশোর গল্প। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শ্রেষ্ঠ কিশোরগল্প। মোহাম্মদ আছাদুজ্জামানের চাঁদেও চিবুক। বইটি প্রকাশ করেছে ‘আদর্শ’। এছাড়া এসেছে সালাম মাহমুদের সম্পাদনায় ‘প্রেমের পরাগ’। বইটি প্রকাশ করেছে মুক্ত বাংলা।

আজকের অনুষ্ঠান : আজ শুক্রবার মেলা চলবে সকাল ১১টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। ১১টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত মেলায় শিশুপ্রহর ঘোষণা করা হয়েছে। সকাল সাড়ে ১০টায় অমর একুশের উদযাপনের অংশ হিসেবে শিশু-কিশোর চিত্রাঙ্কন, সঙ্গীত প্রতিযোগিতা, সাধারণ জ্ঞান ও উপস্থিত বক্তৃতা প্রতিযোগিতায় বিজয়ী শিশু-কিশোরদের পুরস্কার প্রদান করা হবে। পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী শাহাবুদ্দিন আহমেদ। বিকেল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য পত্রিকার শতবর্ষ : ফিরে দেখা শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন ড. মাহবুবুল হক। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন সাইফুদ্দীন চৌধুরী, আলী হোসেন চৌধুরী ও এম আবদুল আলীম। সভাপতিত্ব করবেন অধ্যাপক আবুল আহসান চৌধুরী। সন্ধ্যায় রয়েছে কবিকণ্ঠে কবিতা পাঠ, কবিতা আবৃত্তি ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।


আরো সংবাদ



premium cement