উত্তেজনার ডালি সাজিয়ে অপেক্ষায় ওয়েম্বলি স্টেডিয়াম। এইতো কয়েক ঘণ্টা বাকি। ইউরোয় শেষ হাসি কে হাসবে? তাৎক্ষণিক শিরোপা হাতে ইংল্যান্ডকে বরণ করবে ওয়েম্বলির ভরা দর্শক, নাকি জাঁকমকপূর্ণ আয়োজনে ইতালিকে গ্রহণ করবে রোমবাসী? এই দু’য়ের উত্তর মিলবে শ্বাসরুদ্ধকর ফাইনাল ম্যাচ শেষে। ফুটবলের জন্মস্থানের মুক্ত বাতাস এখনো ছোঁয়া হয়নি ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ শিরোপার। এটাই যুগের পর যুগ ইংলিশদের আক্ষেপ। ইউরোর ৬০ বছরের ইতিহাসে, ফাইনালে এ প্রথমবার উঠল থ্রি লায়ন্স। চারবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ইতালি ইউরোয় নিজেদের একমাত্র শিরোপা জিতেছে ১৯৬৮ সালে। অপেক্ষার প্রহর গুনছে তারাও। তাই এবার ইংল্যান্ডের সামনে সুযোগ এলো প্রথম ফাইনালে প্রথম শিরোপা অর্জনের।
অপর দিকে আজ্জুরিদের সামনে দ্বিতীয় ট্রফি জয়ের হাতছানি। লন্ডনের ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে ৯০ হাজার দর্শককে সাক্ষী রেখে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ইউরো ২০২০-এর ফাইনাল। রোববার বাংলাদেশ সময় রাত ১টায় শুরু হবে ম্যাচটি। সনি সিক্স ও সনি টেনে ক্রীড়াপ্রেমীরা খেলাটি উপভোগ করতে পারবেন।
এবারের ইউরোয় ইংল্যান্ড ও ইতালির ছুটে চলা একদমই অপ্রতিরোধ্য। ফাইনালেই একমাত্র কোনো একদলের প্রতিরোধ ভাঙবে। গ্রুপ পর্ব থেকে এ পর্যন্ত কোনো ম্যাচে হারেনি দু’দল। তাই দু’দল কতটা আত্মবিশ্বাসী ফাইনালে তা অনুমেয়। এই ছুটে চলার পেছনে রয়েছেন দু’দলের দুই শিক্ষাগুরু গ্যারেথ সাউথগেট ও রবের্তো মানচিনি। দুই কোচের মাইন্ড গেমেরও ফাইনাল খেলা এটি। হ্যারি কেইন-রহিম স্টার্লিংদের জন্য ডাগআউটে সাউথগেটের ভূমিকা অন্যতম কাজ দেবে। শেষ ১২ ম্যাচে অপরাজিত ইংলশিরা। মানচিনির কোচিং অভিজ্ঞতার কথা ফুটবল বিশ্ব ভালো করেই জানে। তার অধীনে গত ৩৩টি ম্যাচ অপরাজিত ইতালি। তার সামনে হাতছানি দিচ্ছে টানা ৩৫ ম্যাচে অপরাজিত থাকা ব্রাজিলের সেই ঐতিহাসিক রেকর্ড ভাঙারও। তবে এ ধারা অব্যাহত রাখতে তাকে ফাইনালে জিততেই হবে।
শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচ যেহেতু লন্ডনে, তাই ইংলিশরা স্বাগতিক দল হিসেবে বাড়তি একটু সুবিধা পাচ্ছেই। নিজেদের দর্শকে উত্তাল গ্যালারির সমর্থন সেমিফাইনালে তারা পেয়েছে, ফাইনালে যে উন্মাদনা আরো বাড়ছে, বলার অপেক্ষা রাখে না। তাই বলে ইতালি পিছিয়ে নেই।
দর্শক সমর্থনে অবস্থা যাই হোক, পারফরম্যান্সের বিচারে সেরা ইউরো কাটাচ্ছে আজ্জুরিরা। যদিও সেমিফাইনালে দুই দলকেই দিতে হয়েছে কঠিন পরীক্ষা। গ্রুপ পর্ব ছিল অন্য রকম। গোল উৎসব করে ইউরো ২০২০ শুরু ইতালির। তুরস্ককে ৩-০ গোলে হারিয়ে গোল উৎসবে ইউরো ২০২০ শুরু করে ইতালি। সুইজারল্যান্ড ও ওয়েলসকে হারিয়ে পূর্ণ ৯ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপসেরা হয়ে নকআউট পর্বে ওঠে মানচিনির দল। নকআউট পর্বের শুরুতেই; কিন্তু কঠিন পরীক্ষা দিতে হয় ইতালিকে। শেষ ষোলোয় অস্ট্রিয়ার বিপক্ষে জয় পেতে অতিরিক্ত সময়ে যেতে হয়েছিল তাদের। নির্ধারিত সময় গোলশূন্যভবে শেষ হওয়ার পর ২-১ গোলে জিতে শেষ ষোলোর বাধা পার হয় ইতালি।
কোয়ার্টার ফাইনালে পড়তে হয় তাদের অন্যতম ফেভারিট বেলজিয়ামের সামনে। শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচটি ২-১ গোলে জিতে সেমিফাইনাল নিশ্চিত হয় জর্জিও কিয়েল্লিনিদের। এরপর সেমিফাইনালে টাইব্রেকার নাটক। আরেক ফেভারিট স্পেনের সাথে নির্ধারিত সময়ের পর অতিরিক্ত সময়েও স্কোরলাইন থাকে ১-১। ফল নিষ্পত্তির জন্য গড়ানো পেনাল্টি শুটআউটে স্প্যানিশদের ৪-২ গোলে হারিয়ে ফাইনালে পৌঁছে যায় ইতালি। এবারের আসরে ইতালি ১২ গোল প্রতিপক্ষের জালে পাঠিয়ে, হজম করেছে তিন গোল। ইউরো স্বপ্নের মতো কাটছে ইংল্যান্ডেরও। দাপুটে পারফরম্যান্সে কোয়ার্টার ফাইনাল পর্যন্ত কোনো গোল হজম করেনি তারা। ক্রোয়েশিয়াকে ১-০ গোলে হারিয়ে শুরু, এরপর স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে গোলশূন্য ড্র ও চেক প্রজাতন্ত্রকে ১-০ ব্যবধানে হারিয়ে গ্রুপসেরা হয়ে থ্রি লায়নদের নকআউট পর্বে ওঠা। শেষ ষোলো থেকে আরো ধারালো ইংল্যান্ড। জার্মানিকে ২-০ গোলে হারিয়ে শেষ আট নিশ্চিত করা এবং কোয়ার্টার ইউক্রেনকে ৪-০ গোলে উড়িয়ে নিজেদের অবস্থানের জানান দেয়া। তবে সেমিফাইনালে পরীক্ষা দিতে হয়েছে বেশ। দারুণ ফুটবলে গোলের সুযোগ তৈরি করেও অতিরিক্ত সময়ে গিয়ে জিততে হয়েছে ডেনমার্কের বিপক্ষে। ডেনিশরাই শুরুতে এগিয়ে গিয়েছিল, ঘুরে দাঁড়িয়ে ১-১ গোলে শেষ করে নির্ধারিত সময়। এরপর অতিরিক্ত সময়ে হ্যারি কেইনের পেনাল্টিতে ২-১ ব্যবধানে জিতে প্রথমবার ইউরোর ফাইনাল নিশ্চিত করে ইংল্যান্ড। আসরে ১০ গোলের বিপরীতে হজম করেছে মাত্র একটি গোল।
যদিও স্বাগতিক হিসেবে কিছুটা হলেও দাঁড়িপাল্লার ওজনটা ঝুলে আছে ইংল্যান্ডের দিকেই। ১৯৬৬ সালের পর বড় কোনো টুর্নামেন্টের শিরোপাও পাওয়া হয়নি ইংল্যান্ডের। ৫৫ বছরের শিরোপা খরা কাটিয়ে প্রথমবারের মতো ইউরোর ফাইনালে ওঠার স্মৃতিটাও স্মরণীয় করে রাখতে চায় ইংল্যান্ড। বড় কোনো টুর্নামেন্টে এখনো পর্যন্ত ইতালিকে পরাজিত করতে পারেনি ইংল্যান্ড। যদিও খুব বেশি একটা মুখোমুখি হওয়ার সুযোগও হয়নি। ইউক্রেনে ২০১২ ইউরোর কোয়ার্টার ফাইনালে পেনাল্টি শুট আউটে ৪-২ গোলে ইতালি জয়ী হয়েছিল।
ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে ইতালিও দীর্ঘ দিনের শিরোপা খরা কাটিয়ে শতভাগ সফল হয়েই ঘরে ফিরতে মুখিয়ে আছে।
চারবারের বিশ্বকাপ বিজয়ীরা সর্বশেষ ১৯৬৮ সালে তাদের একমাত্র ইউরো শিরোপা হাতে তুলেছিল। এরপর থেকে তারা দু’টি ফাইনালে উঠলে ২০০০ সালে ফ্রান্সের কাছে ও ২০১২ সালে স্পেনের কাছে পরাজিত হয়। রোববারের ম্যাচটি বড় কোনো আসরে তাদের দশম ফাইনাল। ২০১৮ সালে বিশ্বকাপের বাছাইপর্ব থেকে বাদ পড়ার পরেই মানচিনিকে ইতালির দায়িত্ব দেয়া হয়। তারপর থেকে মানচিনির অধীনে বদলে যেতে শুরু করে ইতালি। লরেঞ্জো ইনসাইনে ইতালি কোচের মোস্ট ‘কী’ প্লেয়ার। পুরো মাঠে ধাবিয়ে বেড়ান তিনি। এই ম্যাচেও গোল করে ও করিয়ে ম্যাচের পার্থক্য গড়ে দিতে পারেন নাপোলি ফরোয়ার্ড। এবারের আসরে গোল করেছেন দু’টি। তার সাথে লোকাতেল্লি, কিয়েসা, পেসসিনা ও ইমোবিলে প্রত্যেকেই দু’টি করে গোল করেছেন। এটি মনচিনির জন্য আশীর্বাদই। দলের ভিন্ন ভিন্ন খেলোয়ড়রা স্কোর করেছেন। অপর দিকে ইংল্যান্ডের অধিনায়ক হ্যারি কেইন রয়েছেন ফর্মের তুঙ্গে। চার গোল করে রয়েছেন গোল্ডেন বুট জয়ের দৌড়েও।
তার সাথে রহিম স্টর্লিংও তিন গোলের পাশাপাশি এক অ্যাসিস্ট করে দারুণ ফর্মে রয়েছেন। স্টার্লিং আর ইনসাইনে দু’দলের দলের প্রাণভ্রমরা।
ইতালি-ইংল্যান্ড সর্বমোট মুখোমুখি হয়েছে ২৭ বার। ১১ জয়ে পূর্ব পরিসংখ্যানে এগিয়ে আছে ইতালি। আট জয় ইংল্যান্ডর। অন্য আটটি ম্যাচ হয়েছে ড্র। শেষ পাঁচ ম্যাচের দেখায়ও এগিয়ে আছে আজ্জুরিরা। দুই জয়ের বিপরীতে তারা হেরেছে একটিতে। তবে শেষ দু’টি ম্যাচই হয় ড্র। শেষবার এই ওয়েম্বলিতেই মুখোমুখি হয়েছিল দল দু’টি। ম্যাচটি ১-১ গোলে ড্র হয়।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা