১৮ মে ২০২৪, ০৪ জৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৯ জিলকদ ১৪৪৫
`


কটিয়াদীতে ঘুড়ি উড়ানোর ধুম!

- ছবি : নয়া দিগন্ত

চাঁদনী রাতে আকাশ থেকে ভেসে আসে বাঁশির শব্দ। বৈশাখী রাতের বাতাস আর ভেলা বাঁশির আওয়াজ মিলেমিশে ভেসে এসে মনকে মুগ্ধ করে। সকাল থেকে শুরু হয়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত আকাশে দেখা মিলছে ঘুড়ির। বিশেষ করে বিকেলের নীল আকাশে যেন ঘুড়ির রাজত্ব!

আবহমান বাংলার ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলায় এখনো ঘুড়ি উৎসবের দেখা মিলে। প্রতিদিন আকাশে দেখা যায় হরেক রকমের ঘুড়ি। রাতে নিভু নিভু ঝলমলে আলো জ্বলে আকাশে। কখনো মনে হবে বড় সাপ, চিল, ঈগল, ঘর উড়ছে। কখনো মনে হবে দৈত্য দানব আকাশে উড়ছে! আসলে এগুলো বিভিন্ন ডিজাইনের ঘুড়ি। উপজেলার জালালপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় এমনি দৃশ্য দেখা যায়। এছাড়াও উপজেলার সবগুলো ইউনিয়নের কিছু এলাকায় আজো এই ঐতিহ্য ধরে রেখেছে।

বাংলার সংস্কৃতি থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে ঘুড়ি উৎসব। তাই সব বয়সী মানুষও মেতেছেন ঘুড়ি উৎসবে। বিভিন্ন পাড়া, মহল্লার আকাশে এখন রঙ-বেরঙের ঘুড়ি। শিশু-তরুণ-যুবক এমনকি মাঝ বয়সীরাও স্বাদ নিচ্ছে ঘুড়ি উড়ানোর।

জানা যায়, বর্তমানে উপজেলায় ঘুড়ি বানানোর ধুম পড়েছে। আকাশে চোখ মেললেই ঘুড়ির লড়াইয়ের দৃশ্য, চলছে কাটাকাটির খেলা। ঘুড়ির মধ্যে লাইটিং করা হচ্ছে। রাতের আকাশে অনেক রকমের আলো ঝলমল করছে। কটিয়াদী উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় দিন-রাত ছোট-বড় নানা বয়সী ঘুড়ি প্রেমি মেতেছেন এই ঘুড়ি উৎসবে।

বর্তমানে চাহিদা বাড়ায় প্রকার ভেদে ২০০ থেকে ৫০০০ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে চিল, কয়রা, ঢোল, পতিঙ্গা, পাখি, পরি, বাজ, ফুল, প্রজাপতি, মানুষ ঘুড়ি, সাপাসহ রঙ-বেরঙের ঘুড়ি।

মসুয়া ইউনিয়নের বৈরাগিচর এলাকার ঘুড়ি প্রেমী ইদ্রিস বলেন, গ্রামে ঘুড়ি তৈরিতে যুবকরা ব্যস্ত সময় পার করছে। তাদের কাছেই এখন মিলছে ঘুড়ি। সাধারণত যেকোনো ডিজাইনের একটি ঘুড়ির দাম ১০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত। বিকেলে একটু আনন্দ পেতেই তারা ঘুড়ি উড়াতে মেতে উঠছে। বাশঁ, বেত এবং বিভিন্ন রঙের প্লাস্টিক-কাগজের মোড়কে ঘুড়ি বানানো হয়। আবার কেউ ঘুড়িতে বাতি লাগিয়ে নিয়ে রাতের আকাশে উড়াচ্ছেন।

জনশ্রুতি আছে, ব্রিটিশ আমলে অভিজাত লোকদের বিনোদনের জন্য ঘুড়ি উড়ানোর আয়োজন করা হতো। ১৭৪০-এর দশকে নায়েব-এ-নাজিম নওয়াজেশ মোহাম্মদ খানের আমলে ঢাকায় ঘুড়ি উড়ানো উৎসব একটা ঐতিহ্যে পরিণত হয়। তখন থেকেই কিশোরগঞ্জের খোলা আকাশে অনেক ঘুড়ি উড়তে দেখা যায়।


আরো সংবাদ



premium cement