২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`

প্রত্যাশিত গড় আয়ু কমেছে বাংলাদেশে

-

- দেশে এখন জনসংখ্যা ১৭ কোটি ১০ লাখ
- হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মৃত্যুহার ১.০২৭ শতাংশ
- দেশে বাল্যবিয়ের হার বেড়েছে
- কখনো বিয়ে হয়নি এমন নাগরিক ২৮.৬ শতাংশ

দেশের মানুষের প্রত্যাশিত গড় আয়ু কমেছে। বছর ব্যবধানে এই প্রত্যাশিত আয়ুষ্কাল পরিসংখ্যানিকভাবে কমে ২০২৩ সালে ৭২.৩ বছর, যা গত ২০২২ সালে ছিল ৭২.৪ বছর। একই ভাবে এক বছরের ব্যবধানে দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কমেছে। ২০২৩ সালে জনসংখ্যার স্বাভাবিক বৃদ্ধির হার ১.৩৩ শতাংশ, যা ২০২২ সালে ছিল ১.৪০ শতাংশ। ২০২২ সালের গৃহগণনা ও জনশুমারির ভিত্তিতে এখন জনসংখ্যা ১৭ কোটি ১০ লাখ বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) এক প্রতিবেদন থেকে এই তথ্য জানা গেছে। বিবিএসএর প্রতিবেদনে বলা হয়, মৃত্যুর শীর্ষ ১০ কারণের প্রথম কারণ-হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মৃত্যুর হার ১.০২ শতাংশ এবং দ্বিতীয় কারণ মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণে মৃত্যুর হার ০.৬৪ শতাংশ। আর এক বছরের ব্যবধানে দেশে বাল্যবিয়ের হার বেড়েছে। আবার কখনো বিয়ে হয়নি বর্তমানে দেশে এমন নাগরিক রয়েছে ২৮.৬ শতাংশ।
বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস-২০২৩ প্রতিবেদন প্রকাশ করে গতকাল পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) এসব তথ্য জানায়। বিবিএসের মহাপরিচালক মোহাম্মদ মিজানুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী মো: শহীদুজ্জামান সরকার। বিশেষ অতিথি ছিলেন পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব ড. শাহনাজ আরেফিন ও পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরের মহাপরিচালক সাহান আরা বানু। মূল প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন প্রকল্প পরিচালক মো: আলমগীর হোসেন। এসডিআরএস ইন ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম প্রকল্পের আওতায় ২০১২টি নমুনা এলাকা হতে সংগৃহীত তথ্যের ওপর ভিত্তি করে বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস ২০২৩-এর গুরুত্বপূর্ণ ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে।
পুরুষের চেয়ে নারী বেশি : দেশের মোট জনসংখ্যার মধ্যে পুরুষের চেয়ে নারীর সংখ্যা ৩১ লাখ ৯০ হাজার বেশি। মোট ১৭ কোটি ১৫ লাখ ৯০ হাজার জনসংখ্যার মধ্যে নারীর সংখ্যা ৮ কোটি ৭৩ লাখ ৯০ হাজার এবং পুরুষ ৮ কোটি ৪২ লাখ। জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২-এর ভিত্তিতে ১ জানুয়ারি ২০২৪ সালে প্রাক্কলিত জনসংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৭ কোটি ১৫ লাখ ৯০ হাজার। বাংলাদেশে সর্বশেষ শুমারি অনুযায়ী জনসংখ্যা ছিল ১৬ কোটি ৯৮ লাখ ২৮ হাজার ৯১১ জন। সে হিসাবে দেশে নতুন করে জনসংখ্যা বেড়েছে ১৭ লাখ ৬১ হাজার ৮৯ জন।
জনসংখ্যার ঘনত্ব বর্গকিলোমিটারে : জরিপে উঠে এসেছে, প্রতি বর্গকিলোমিটারে জনসংখ্যার ঘনত্ব এক হাজার ১৭৯ জন। প্রতি হাজার জনসংখ্যায় স্থূল জন্মহার ১৯.৪, যা ২০২২ সালে ছিল ১৯.৮। আর প্রতি হাজার জনসংখ্যায় স্থূল মৃত্যুহার ৬.১, যা ২০২২ সালে ছিল ৫.৮। পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু মৃত্যুহার প্রতি হাজারে ৩৩ জন এবং প্রতি লাখ জন্ম নেয়া জীবিত শিশুর বিপরীতে মাতৃমৃত্যুর অনুপাত ১৩৬ জন, যা ২০২২ সালে ছিল ১৫৩ জন। পুরুষদের প্রথম বিবাহের গড় বয়স ২৪.২ বছর এবং নারীদের ১৮.৪ বছর। প্রতি হাজার জনসংখ্যায় অভ্যন্তরীণ স্থানান্তরের ক্ষেত্রে পল্লীতে আগমনের হার ২০.৪ এবং শহরে আগমনের হার ৪৩.৪।
জরিপে বলছে, ২০২৩ সালে জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির ব্যবহারকারীর সংখ্যা ২০২২ সালের ৬৩.৩ শতাংশ তুলনায় কিছুটা কমে ২০২৩ সালে হয়েছে ৬২.১ শতাংশ। জন্মনিয়ন্ত্রণের অপূর্ণ চাহিদা ২০২২ সালের ১৬.৬২ শতাংশের তুলনায় কমে ২০২৩ সালে ১৫.৫৭ শতাংশ হয়েছে। খানার আকার ২০২২ সালের ন্যায় ২০২৩ সালেও অপরিবর্তিত রয়েছে, যা ৪.২ জন। তবে, ২০২২ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে নারী খানাপ্রধানের হার বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২২ সালে এটি ছিল ১৭.৪ শতাংশ, যা ২০২৩ সালে বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ১৮.৯ শতাংশে। অপর দিকে, পুরুষ খানাপ্রধান ২০২২ সালে ছিল ৮২.৬ শতাংশ। ২০২৩-এ হার হ্রাস পেয়ে হয়েছে ৮১.১৭ শতাংশ। ২০২৯ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে বিদ্যুৎ সুবিধাভোগী জনসংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯৭.৫৩ শতাংশে। সাত বছর ও তদূর্ধ্ব বয়সী জনসংখ্যার সাক্ষরতার হার ২০২৩ সালে হয়েছে ৭৭.৯ শতাংশ এবং ১৫ বছর ও তদূর্ধ্ব বয়সীদের ক্ষেত্রে এ হার ২০২২ সালের (৭৪.৪) তুলনায় সামান্য বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ৭৫.৬ শতাংশ।
কোনো কর্ম নেই এমন তরুণ ৩৯.৮৮ শতাংশ: বিবিএস বলছে, শিক্ষা, কর্মে কিংবা প্রশিক্ষণে নেই এমন তরুণের সংখ্যা ২০২২ সালের ৪০.৬৭ শতাংশ ছিল। ২০২৩ সালে কমে ৩৯.৮৮ শতাংশ হয়েছে। পাঁচ বছরের বেশি বয়সী মোবাইল ফোন ব্যবহারকারী জনসংখ্যার হার ২০২৩ সালে হয়েছে ৫৯.৯ শতাংশ। তবে ১৫ বছরের বেশি বয়সীদের এ হার ২০২২ সালের ৭৩.৮ শতাংশের তুলনায় সামান্য বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ৭৪.২ শতাংশ। ২০২৩ সালে ১৫ বছর বেশি বয়সীদের ইন্টারনেট ব্যবহারকারী হার ৫০.১ শতাংশ।
দেশে বাল্যবিয়ে বেড়েছে : বাল্যবিয়ে বাড়লেও নারীদের সন্তান জন্মদানের ক্ষমতা কিছুটা কমেছে। ২০২৩ সালে দেশে ১৫ বছরের কম বয়সী নারীদের বিয়ের হার বেড়ে হয়েছে ৮ দশমিক ২ শতাংশ, অথচ এ হার ২০২২ সালেও ছিল ৬ দশমিক ৫ শতাংশ। ২০২৩ সালে দেশে ১৫ বছরের কম বয়সী নারীদের মধ্যে বিয়ের হার ছিল ৮.২ শতাংশ। ২০২২ সালেও এ হার ছিল ৬.৫ শতাংশ। এছাড়া ১৮ বছরের আগে বিয়ের হারও বেড়েছে। গত বছর দেশে এ বয়সী নারীদের বিয়ের হার ছিল ৪১.৬ শতাংশ। অন্যদিকে ২০২২ সালেও এ হার ছিল ৪০.৯ শতাংশ।
জরিপের তথ্য বলছে, কখনো বিয়ে হয়নি বর্তমানে দেশে এমন নাগরিক রয়েছে ২৮.৬ শতাংশ। এক্ষেত্রে পুরুষের আধিক্যই রয়েছে। ২০২৩ সাল পর্যন্ত কখনোই বিয়ে হয়নি এমন পুরুষের হার ছিল ৩৫.৮ শতাংশ, যেখানে নারীদের হার ২১.৭ শতাংশ। দেশে জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির ব্যবহার কমিয়ে দিয়েছেন দম্পতিরা। বর্তমানে দেশে জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির ব্যবহারের হার ৬২.১ শতাংশ, ২০২২ সালেও যা ছিল ৬৩.৩ শতাংশ।


আরো সংবাদ



premium cement