২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`


অক্ষমদের জন্য সিয়ামে ছাড়

-

আজ মাহে রমজানের ১৪ তারিখ। সক্ষম প্রত্যেক নর-নারীর জন্য এ মাসের প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত রোজা রাখা ফরজ। যারা অক্ষম তাদের অবকাশ দেয়া হয়েছে রোজা না রাখার। তবে সক্ষমতা ফিরে আসার পর ছাড় যাওয়া রোজাগুলো আদায় করতে হবে। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি এ মাস প্রত্যক্ষ করবে, তাকে এতে রোজা রাখতে হবে। আর যে ব্যক্তি অসুস্থ হয়, কিংবা সফরে থাকে সে অন্যান্য দিন থেকে এ সংখ্যা পূরণ করবে। (সূরা বাকারা, আয়াত ১৮৫)
এখানে রমজান মাসে রোজা না রাখার দু’টি কারণ উল্লেখ করা হয়েছে- অসুস্থতা ও সফর। অসুস্থ ব্যক্তির যদি রোজা রাখতে খুব কষ্ট হয়, কিংবা রোজা রাখার কারণে তার রোগের মাত্রা বেড়ে মারাত্মক পর্যায়ে চলে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে, তাহলে তার রোজা না রাখার অনুমতি আছে। কেননা মানুষের ওপর তাদের সাধ্যের বাইরে দায় চাপানো আল্লাহর নিয়মের খেলাপ। মানুষের সাধ্য অনুযায়ী তাদের ওপর কর্তব্য আরোপ করা হয়। কুরআন মাজিদের সূরা বাকারার ২৮৬ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে- আল্লাহ কোনো প্রাণীর ওপর তার সাধ্যের বাইরে দায়িত্ব আরোপ করেন না।
সুতরাং রোজার কারণে যে রোগ বৃদ্ধি পায় বা রোগ-ভোগ দীর্ঘ হওয়ার প্রবল আশঙ্কা থাকে, সেই রোগে রোজা ভাঙ্গার অবকাশ আছে। উল্লেখ্য, আশঙ্কা যদি সুস্পষ্ট হয় তাহলে তো কথা নেই। নতুবা একজন অভিজ্ঞ ও দ্বীনদার চিকিৎসকের মতামতের প্রয়োজন হবে।
রোজা রাখার কারণে গর্ভবতী মহিলা নিজের কিংবা সন্তানের প্রাণহানি বা মারাত্মক স্বাস্থ্যহানির প্রবল আশঙ্কা করলে তার জন্য রোজা ভঙ্গ করা জায়েজ। পরে এ রোজা কাজা করে নিতে হবে। দুগ্ধদানকারিণী মা রোজা রাখলে যদি সন্তান দুধ না পায়, আর ওই সন্তান অন্য কোনো খাবারেও অভ্যস্ত না হয়, ফলে দুধ না পাওয়ার কারণে সন্তানের মৃত্যুর বা মারাত্মক স্বাস্থ্যহানির আশঙ্কা হয়, তাহলে তিনি রোজা ভাঙ্গতে পারবেন এবং পরে কাজা করে নেবেন। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, আল্লাহ তায়ালা মুসাফিরের জন্য রোজার হুকুম শিথিল করেছেন এবং আংশিক নামাজ কমিয়ে দিয়েছেন। আর গর্ভবতী ও দুগ্ধদানকারিণীর জন্যও রোজার হুকুম শিথিল করেছেন। তিরমিযি শরিফ)
বার্ধক্যজনিত কারণে রোজা রাখতে সক্ষম না হলে রোজা না রাখার অনুমতি রয়েছে। এক্ষেত্রে প্রত্যেক রোজার পরিবর্তে একজন গরিবকে দুই বেলা খাবার খাওয়াতে হবে অথবা পৌনে দুই কেজি গমের মূল্য সদকা করতে হবে। আল্লাহ তায়ালা বলেন- আর যাদের রোজা রাখা অত্যন্ত কষ্টকর তারা ফিদয়া-একজন মিসকিনকে খাবার প্রদান করবে। (সূরা বাকারা, আয়াত ১৮৪)
অতএব যে বৃদ্ধ বা অসুস্থ ব্যক্তির রোজা রাখার সামর্থ্য নেই এবং পরবর্তীতে কাজা করতে পারবে এমন সম্ভাবনাও নেই এমন ব্যক্তি রোজার পরিবর্তে ফিদয়া প্রদান করবে। ছাবেত বুনানী রাহ: বলেন, আনাস ইবনে মালেক রা: যখন বার্ধক্যের কারণে রোজা রাখতে সক্ষম ছিলেন না তখন তিনি রোজা না রেখে (ফিদয়া) খাবার দান করতেন। (মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক)
ইকরিমা রাহ: বলেন, ‘আমার মা প্রচণ্ড তৃষ্ণা-রোগে আক্রান্ত ছিলেন এবং রোজা রাখতে সক্ষম ছিলেন না। তাঁর সম্পর্কে আমি তাউস রাহ: কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, ‘প্রতি দিনের পরিবর্তে মিসকিনকে এক মুদ (বর্তমান হিসাবে পৌনে দুই কেজি) পরিমাণ গম প্রদান করবে’।’ (মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক)
এক রোজার পরিবর্তে এক ফিদয়া ফরজ হয়। এক ফিদয়া হলো- কোনো মিসকিনকে দুই বেলা পেট ভরে খানা খাওয়ানো অথবা এর মূল্য প্রদান করা। যাদের জন্য রোজার পরিবর্তে ফিদয়া দেয়ার অনুমতি রয়েছে তারা রমজানের শুরুতেই পুরো মাসের ফিদয়া দিয়ে দিতে পারবে। উপরোক্ত দুই শ্রেণীর মানুষ ছাড়া (অর্থাৎ দুর্বল বৃদ্ধ ও এমন অসুস্থ ব্যক্তি যার ভবিষ্যতে রোজার শক্তি ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনা নেই।) আরো যাদের জন্য রোজা না রাখা জায়েজ আছে, (যেমন-মুসাফির, গর্ভবতী ও শিশুকে স্তন্যদানকারিণী) তারা রোজা না রাখলে রোজার ফিদয়া দিবে না; বরং পরে কাজা করবে। আর এই অক্ষমতার অবস্থায় মৃত্যু হলে কাজা ও ফিদয়া কিছুই ওয়াজিব হবে না। অবশ্য অক্ষমতার অবস্থা শেষ হওয়ার পর, অর্থাৎ মুসাফির মুকিম হওয়ার পর, গর্ভবতী নারীর সন্তান ভূমিষ্ট হওয়া ও স্রাব বন্ধ হওয়ার পর এবং স্তন্যদানকারিণী স্তন্যদান বন্ধ করার পর যদি মারা যায় তাহলে অক্ষমতার শেষে যে ক’দিন সময় পেয়েছে, সে ক’দিনের রোজা কাজা করা তার দায়িত্বে আসবে। কাজা না করলে উক্ত দিনগুলির ফিদয়া প্রদানের অসিয়ত করে যেতে হবে।
অসিয়ত না করে গেলে ওয়ারিশরা মৃতের পক্ষ থেকে ফিদয়া আদায় করলে আশা করা যায় যে, আল্লাহ তায়ালা তা কবুল করবেন। তবে মৃত ব্যক্তি অসিয়ত না করে গেলে সেক্ষেত্রে মিরাসের ইজমালি সম্পদ থেকে ফিদয়া দেয়া হবে না। একান্ত দিতে চাইলে সাবালক সাবালিকা ওয়ারিশগণ তাদের অংশ থেকে দিতে পারবে।


আরো সংবাদ



premium cement