২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`


দূতাবাসের সত্যায়ন না থাকায় অনেক ভিসার মেয়াদ শেষ

ব্যক্তিগত ভিসার বহির্গমন ছাড়পত্র শুধু ওয়ানস্টপে

-


ইউরোপ, আমেরিকা, রোমানিয়া, সৌদি আরব ও মালয়েশিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কর্মসংস্থানের উদ্দেশ্যে পাড়ি জমানোর অপেক্ষায় এখন দেশেই অবস্থান করছেন হাজার হাজার বেকার তরুণ। তাদের সবার ভিসা ও মেয়াদ সঠিক থাকলেও শুধু দূতাবাসের সত্যায়ন না থাকায় সময়মতো ফ্লাই করার জন্য বহির্গমন ছাড়পত্র মিলছে না। যদিও বিদেশগামীরা এসব ভিসা সংগ্রহ করে কাক্সিক্ষত দেশে যাওয়ার জন্য রিক্রুটিং এজেন্সি ও তাদের মনোনীত মধ্যস্বত্বভোগীদের কাছে লাখ লাখ টাকা অগ্রিম জমা দিয়ে রেখেছেন। শুধু সত্যায়ন জটিলতার কারণে অনেক বিদেশগামীর ভিসার মেয়াদ এখন শেষের পথে। অনেকের আবার ভিসার মেয়াদ ইতোমধ্যে শেষও হয়ে গেছে।
ভুক্তভোগী বিদেশগামী ও ভিসা প্রসেসিং ব্যবসার সাথে জড়িতরা নয়া দিগন্তকে জানান, একটি অথবা দু’টি ভিসার জন্য দূর-দূরান্ত থেকে নিয়োগকর্তারা বাংলাদেশ দূতাবাসে উপস্থিত হয়ে সত্যায়ন করতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। ফলে ভিসা সংগ্রহ করার পরও অনেকের বিদেশযাত্রা হুমকির মধ্যে পড়ছে।

রোমানিয়ায় ব্যবসা করছেন এমন একটি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি গত বৃহস্পতিবার বিএমইটিতে নয়া দিগন্ত জানান, শুধু তাদের প্রতিষ্ঠানের সহস্রাধিক কর্মীর ভিসার নিয়োগানুমতি মন্ত্রণালয় থেকে স্থগিত করে রাখা হয়েছে। এতে তারা ব্যবসায়িকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। তবে জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর মহাপরিচালক এককভাবে কোম্পানি থেকে ভিসা সংগ্রহ করার বিষয়ে আশার বাণী শুনিয়ে নয়া দিগন্তকে বলেছেন, গ্রুপ ভিসার চাহিদাপত্রে দূতাবাসের সত্যায়ন অবশ্যই লাগবে। তবে কেউ যদি ব্যক্তিগতভাবে চাহিদাপত্র সংগ্রহ করে জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) ওয়ানস্টপ সার্ভিসে জমা দেন তাহলে যাচাই-বাছাই করে ঠিক পাওয়া গেলে সেগুলোর ছাড়পত্র দিয়ে দেয়া হচ্ছে। এমন কার্যক্রম ইতোমধ্যে আমাদের শুরু হয়েছে। যাদের ভিসার সমস্যা পাওয়া যাচ্ছে তাদের বিএমইটি ক্লিয়ারেন্স দেয়া হচ্ছে না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর যত শ্রমিক বিদেশে বৈধভাবে কর্মসংস্থানের উদ্দেশ্যে পাড়ি জমাচ্ছেন তার একটা বড় অংশই একক ভিসা সংগ্রহ করা কর্মী। এসব ভিসার বিপরীতে যেকোনো রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে প্রসেসিং করে বিএমইটি থেকে বহির্গমন ছাড়পত্র সংগ্রহ করার নিয়ম রয়েছে। সাম্প্রতিক এক নির্দেশনায় প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় একক হোক অথবা গ্রুপ ভিসা হোক বিদেশগামী শ্রমিকদের জন্য বহির্গমন ছাড়পত্রের অন্যতম শর্ত দেয়া হয়েছে, বিদেশের বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে সত্যায়ন করে আনতে হবে। যারা সত্যায়ন করে আনছে তাদের কর্মীদের বিদেশ যাওয়ার ছাড়পত্র দেয়া হচ্ছে। এতদিন একক ভিসার ক্ষেত্রে এই নিয়ম ছিল না। এখন সেটিও শর্তের মধ্যে জুড়ে দেয়া হয়েছে। এ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন হাজার হাজার বিদেশগামী শ্রমিক।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শুধু মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম দেশ কাতার থেকে অর্ধলক্ষাধিক ভিসা বিভিন্ন এজেন্সি নিয়ে এলেও দূতাবাসের সত্যায়ন না থাকায় এসবের বিপরীতে জনশক্তি কর্মসংস্থান বুরো থেকে ক্লিয়ারেন্স মিলছে না। এতে মহাবিপদের মধ্যে পড়েছেন শত শত রিক্রুটিং এজেন্সির মালিক ও বিদেশ থেকে চাহিদাপত্র সংগ্রহ করে দেশে আত্মীয়স্বজনের কাছে পাঠানো প্রবাসী বাংলাদেশীরা। শুধু কাতার নয়, একই অবস্থা বিরাজ করছে ইউরোপের দেশ রোমানিয়াসহ অন্যান্য দেশেও।
গতকাল ঢাকার একটি রিক্রুটিং এজেন্সির প্রতিনিধি নয়া দিগন্তকে বলেন, চলতি বছরের জানুয়ারিতে ইউরোপের একটি দেশ থেকে ১০টি ভিসা সংগ্রহ করে বহির্গমন ছাড়পত্রের জন্য জমা দিযেছিলেন জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোতে। কিন্তু সেখান থেকে এ ব্যাপারে কোনো তথ্য রিক্রুটিং এজেন্সির মালিক বা প্রতিনিধিদের জানানো হয়নি। অথচ আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহে এই ভিসাগুলোর মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে। পরে জানা যায় ওই এজেন্সির জমা দেয়া তালিকার সূত্র ধরে সে দেশের দূতাবাস থেকে একটি প্রতিবেদন দেয়া হয়েছিল। তবে কর্মীদের বিষয়ে নিয়োগকারী কোম্পানি অবহিত নয় বলে দূতাবাসের ফিরতিপত্রে উল্লেখ করা হয়।

এ প্রসঙ্গে জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর অতিরিক্ত মহাপরিচালক (যুগ্মসচিব) মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান নয়া দিগন্তকে বলেন, দূতাবাস থেকে পাঠানো চিঠিতে যেসব কর্মীর বিষয়ে সমস্যা থাকে সেগুলো অফিসিয়ালি জানানো হয় না।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার দুপুরে মহাপরিচালক সালেহ আহমদ মোজাফফর তার দফতরে এ প্রতিবেদককে বলেন, জনশক্তি ব্যুরোর আসলে দায়িত্ব কী? প্রথম ব্যুরোর দায়িত্ব হলো ২৫ জন পর্যন্ত যদি শ্রমিক (লোক) হয় তাহলে আমরা দূতাবাস কর্তৃক সত্যায়িত চাহিদাপত্র যাচাই করে প্রক্রিয়া করব। মিশনের চাহিদাপত্র সত্যায়িত জমা দিবে সেটি আমরা যাচাই করে প্রক্রিয়া শুরু করবো। দ্বিতীয়ত দায়িত্ব হলো, যদি কারো চাহিদাপত্র সত্যায়িত না থাকে তাহলে মন্ত্রণালয়ের অনুমোদিত চাহিদাপত্র প্রক্রিয়াকরণ। আমরা ডিমান্ড লেটার বলি। ভিসা না। ভিসা চেকিং করা ইমিগ্রেশন ডিপার্টমেন্টের দায়িত্ব। আমাদের কাজ কী? আমাদের কাজ হলো বিদেশে কর্মীদের কাজ আছে কি না। এ ছাড়া আমাদের আর কোনো কাজ নেই। তাহলে তাদের সমস্যাগুলো কে দেখবে- এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, দূতাবাস যদি তার চাহিদাপত্র সত্যায়িত না করে সেক্ষেত্রে সেটি প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় দেখবে। মন্ত্রণালয় চাহিদাপত্র অনুমোদন করে দেবে, আমরা শুধু প্রসেস করব। এই ভূমিকার বাইরে যদি আমাদের যেতে হয় তাহলে আইনের ধারা সংশোধন করতে হবে। আমার তো কোনো সমস্যা নেই।
তিনি বলেন, এখন আমরা যেটা করছি সেটা হচ্ছে ওয়ানস্টপ সার্ভিস। এটি মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী হচ্ছে। কেউ যদি ব্যক্তিগতভাবে ভিসা নিয়ে আসেন, রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে না, মানে ব্যক্তি নিজে প্রসেস করবে। এ ক্ষেত্রে আমাদের নিজস্ব একটা ফরম আছে। জমা দেয়া আবেদন যাচাই-বাছাই করে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেই। অলরেডি এই নিয়মে কাজ করছি, কোনো সমস্যা নেই। আর রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে আনলে তখন অবশ্যই অ্যাটাস্টেশন করিয়ে আনতে হবে দূতাবাস থেকে।


আরো সংবাদ



premium cement