২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

নির্বাচনের আগে সাজা দিতে বিরোধীদের বিরুদ্ধে ১৩০০ মামলা চিহ্নিত করা হয়েছে : ফখরুল

বিএনপির সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর : নয়া দিগন্ত -


নির্বাচনী মাঠ থেকে বিরোধী দলের নেতাদের সরিয়ে দিতে সরকার মহাপরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নেমেছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গতকাল বুধবার দুপুরে নয়াপল্টনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই অভিযোগ করেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, মৃত্যু যখন ঘনিয়ে আসে, যখন আর কোনো আশা থাকে না, তখন অনেকেই চেষ্টা করেন যে, কোনো রকমের কোনো কিছু ধরে যদি টিকে থাকা যায়। আজকে বিরোধী দলের নেতৃবৃন্দকে সাজা দেয়ার এই যে রায়, এই রায় হচ্ছে তাদের সেই পরিকল্পনা, যে পরিকল্পনায় বাংলাদেশের রাজনীতিকে একেবারে তিরোহিত করা, বিরাজনীতিকরণ করা, রাজনীতিবিদদের রাজনীতির মাঠ থেকে দূরে সরিয়ে দেয়া। তিনি বলেন, ভয়াবহ পরিকল্পনা নিয়ে তারা (সরকার) মাঠে নেমেছে। কিছু দিন আগেও আমরা বলেছি এসব কথাগুলো। আমাদের কানে এসেছে যে, প্রায় সাড়ে ১৩ শ’ মামলা চিহ্নিত করা হয়েছে, যেসব মামলা নির্বাচনের আগেই তারা শুনানি করে সব শেষ করে সাজা দিয়ে দেবে। তার সবগুলো হচ্ছে রাজনৈতিক মামলা। প্রতিটি মামলার আসামি হচ্ছেন বিএনপিসহ বিরোধী দলের শীর্ষ নেতারা।

মির্জা ফখরুল বলেন, যদি বিরোধী নেতাদের আটক করে ফেলা যায়, সাজা দিয়ে দেয়া যায় তাহলে তাদের কথা মতো এরা তো নির্বাচন করতে পারবে না। তিনি বলেন, শুধু ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য যে সংবিধানকে কাটা-ছেঁড়া তারা করেছে নিজের মতো করে, সেই সংবিধান অনুযায়ী তারা একদম একা খেলার মাঠে খেলবেন আর গোল দিয়ে যাবেন। যেটাকে আমরা বলি যে, প্রতিপক্ষ কেউ থাকবে না। ওই লক্ষ্যে তারা যাচ্ছে, এগোচ্ছে।

দুর্নীতি দমন কমিশন কর্তৃক আয়বহির্ভূত মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তার সহধর্মিণী জোবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে মামলার শুনানি এবং দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমান উল্লাহ আমান তার সহধর্মিণী সাবেরা আমানকে সাজা প্রদান প্রতিবাদ জানাতে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন ডাকেন বিএনপি মহাসচিব।
তারেক-জোবাইদার মামলার প্রসঙ্গে : মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আদালতে ভয়াবহ ঘটনা ঘটেছে যেটা আমি মনে করি এটি বিচারব্যবস্থার কফিনে পেরেক ঠুকে দেয়া হয়েছে। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তার স্ত্রী জোবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা ২০০৭ সালে। এত দিন ধরে এ মামলা চলে নেই। হঠাৎ দেখা গেল যে, দ্রুত মামলার শুনানি শুরু হয়েছে। তাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের কোনো সুযোগ দেয়া হয়নি। এখন অতি দ্রুত প্রতিদিন একজন-দু’জন-তিনজন সাক্ষী হাজির করা হচ্ছে এবং তাদের রাত পর্যন্ত সাক্ষ্য নেয়া হচ্ছে।
এসব বিষয় নিয়ে যখন আমাদের আইনজীবীরা ঢাকার কথা বলতে চেয়েছিলেন বিশেষ আদালতে তখন তাদেরকে সেখানে কথা শুধু বলতেই দেয়া হয়নি তা নয়, তাদেরকে সরকারি দলের আইনজীবীরা আক্রমণ করেছে, তাদেরকে আহত করেছে এমনকি পুলিশ সেখানে বেআইনিভাবে প্রবেশ করে তাদেরকে নির্যাতন করেছে। এরপরে আমরা কিভাবে বলব, এই দেশে একটা গণতান্ত্রিক নির্বাচন হওয়ার সুযোগ আছে? কিভাবে বলব, বিরোধী দলের এখানে রাজনীতি করার, মানুষের ভোট দেয়ার অধিকার, সাংবাদিকদের লেখার অধিকার আছে?

তিনি বলেন, আমরা পরিষ্কার করে বলতে চাই, এসব মামলা-মোকাদ্দমা দিয়ে জগগণের গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরে পাওয়ার যে আন্দোলন শুরু হয়েছে, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের যে আন্দোলন শুরু হয়েছে, ফ্যাসিবাদকে পরাজিত করার যে আন্দোলন শুরু হয়েছে। এ আন্দোলনকে মামলা-মোকাদ্দমা দিয়ে বন্ধ করা যাবে না। তিনি বলেন, জনগণ জেগে উঠেছে, জনগণের উত্থানের মধ্য দিয়ে তাদেরকে সরে যেতে হবে, পরাজিত হতে হবে এবং পরিষ্কার ভাষায় আবারো বলতে চাই, একটি নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া এ দেশে আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন হওয়া সম্ভব নয়। তিনি বলেন, আমরা বলতে চাই যে, এখনো সময় আছে। এসব খেলাধুলা বাদ দেন, এ সব মানুষকে প্রতারণা করার পথ থেকে সরে গিয়ে, মানুষকে নির্যাতন করার পথ থেকে সরে এসে সোজা পথ ধরেন। একটা নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন এবং দেশে সুষ্ঠু অবাধ নির্বাচনের ব্যবস্থা করেন।

ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ও আমান উল্লাহ আমান ও তার স্ত্রী সাবেরা আমাদের বিরুদ্ধে মামলার দায়েরের কঠোর সমালোচনা করেন বিএনপি মহাসচিব বলেন, উদ্দেশ্য একটাই সাজা দিয়ে আমাদের নেতৃবৃন্দকে নির্বাচন থেকে বিরত রাখা।
একই ধরনের মামলায় আওয়ামী লীগের নেতা মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, মহিউদ্দিন খান আলমগীর ও মোহাম্মদ নাসিমকে (মরহুম) আদালত খালাস দেয়ার কথাও তুলে ধরেন বিএনপি মহাসচিব।
ঢাকা মহানগরে স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুস সালাম, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, মহানগর দক্ষিণের সদস্য রফিকুল আলম মজনু, কেরানীগঞ্জে নিপুণ রায় চৌধুরী, চট্টগ্রামে ডা: শাহাদাত হোসেনসহ সারা দেশের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের ঘটনার পরিসংখ্যান তুলে ধরেন ফখরুল। তিনি বলেন, এভাবে তারা (সরকার) মিথ্যা মামলা দায়ের করে গোটা দেশে ভয়-ত্রাস এবং একটা নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে চায়। এই নৈরাজ্য সৃষ্টি করার মধ্য দিয়ে তারা একই কায়দায় এককভাবে নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে চায় যেটা এ দেশের মানুষ এটি হতে দেবে না। এ দেশের মানুষ তাদের বিতাড়ন করেই নির্বাচন করবে।

দলের আইনবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, রাজনীতির কারণে আইন মন্ত্রণালয়ের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধায়নে সংশ্লিষ্ট আদালত এ মামলা (তারেক রহমান ও জোবাইদা রহমান) তাড়াতাড়ি নিষ্পত্তি করার জন্য দিনে তিন-চারজনের সাক্ষী নিচ্ছেন। আপনারা শুনে অবাক হবেন যে, সন্ধ্যার পরে রাতেও এই মামলার সাক্ষী চলছে। আমরা মনে করি সংশ্লিষ্ট আদালত সরকারের রাজনৈতিক ইচ্ছা বাস্তবায়ন করার জন্য বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সাহেব ও উনার স্ত্রী ডা: জোবাইদা রহমানকে তড়িঘড়ি করে তাদের বিরুদ্ধে রায় দেয়ার জন্য উনি উঠে পড়ে লেগেছেন। এ অবস্থায় আমরা শুধু উদ্বিগ্ন নই, আমাদের কাছে মনে হচ্ছে গোটা বিচারব্যবস্থাকেই বিএনপির নেতৃত্ব তথা বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের ব্যবহার করা হচ্ছে। আমরা মনে করি, দেশের সর্বোচ্চ আদালত এবং এই আদালতের অভিভাবক মাননীয় প্রধান বিচারপতি উনার দৃষ্টি আকর্ষণ করব। অবিলম্বে হস্তক্ষেপ করুন। বিচারের নামে আজকে প্রহসন চলছে, বিচারের নামে আজকে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদেরকে বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা ও তাদের বিরুদ্ধে রায় দেয়া হচ্ছে।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, আবদুল আউয়াল মিন্টু, শামসুজ্জামান দুদু, নিতাই রায় চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, কেন্দ্রীয় নেতা শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, আবদুস সালাম আজাদ, মীর সরাফত আলী সপু, কায়সার কামাল, মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, আসাদুল করিম শাহিন, জয়নুল আবেদীন মেজবাহ, এম এ খালেক আমিনুল হক, সুলতান সালাউদ্দিন টুকু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

 


আরো সংবাদ



premium cement