২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

রোমানিয়ার সম্ভাবনাময় শ্রমবাজার চলে যাচ্ছে নেপালের দখলে

-

-বাংলাদেশের হাতছাড়া হওয়ার আশঙ্কা
-কর্মী পালানো বন্ধে নীতিমালা চান জনশক্তি ব্যবসায়ীরা

পূর্ব ইউরোপের সম্ভবনাময় শ্রমবাজারটি বাংলাদেশের হাতছাড়া হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এই সুযোগে বাজারটি দখলে নিতে যাচ্ছে পাশের দেশ নেপাল।
সম্প্রতি রোমানিয়ার রাজধানী বুখারেস্টে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো: দাউদ আলী নয়া দিগন্তের কাছে এমন আশঙ্কার কথা জানিয়েছিলেন।

শুধু রাষ্ট্রদূত নন, রোমানিয়ায় কর্মী প্রেরণের সাথে সম্পৃত্ত ঢাকার জনশক্তি প্রেরণের সাথে জড়িত ব্যবসায়ী এবং অভিবাসন বিশ্লেষকরাও রাষ্ট্রদূতের এমন আশঙ্কার সাথে একমত পোষণ করে বলছেন, শুধু রোমানিয়ার শ্রমবাজার নয়, সরকারের পক্ষ থেকে পুরো ইউরোপের শ্রমবাজার রক্ষার লক্ষ্য দ্রুতগতিতে শ্রমিক প্রেরণে একটি সুনির্দিষ্ট নীতিমালা করা জরুরি হয়ে পড়েছে।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে রোমানিয়া থেকে অস্থায়ী ভিসা কনস্যুলেট অফিস স্থাপনে ছয় সদস্যের প্রতিনিধি দল ঢাকায় আসেন। তারা কাকরাইলের বিএমইটি কার্যালয়ের ৬তলায় অস্থায়ী ওই অফিস থেকে কর্মীদের সরাসরি সাক্ষাৎকার নিয়ে ৬ মাসে ১৫ হাজার কর্মীর নামে ভিসা দেয়ার কার্যক্রম শুরু করেছিলেন। কিন্তু হঠাৎ করেই কন্স্যুলেট অফিসের প্রতিনিধি দলটি তাদের অফিস গুটিয়ে দিল্লিতে রোমানিয়ান দূতাবাসে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
বর্তমানে সেখান থেকেই তারা আবেদন করা কর্মীদের স্কাইপির মাধ্যমে সাক্ষাৎকার নিয়ে ভিসা দেয়ার কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। তবে কি কারণে প্রতিনিধি দলটি হঠাৎ ঢাকা ত্যাগ করেছে এর সঠিক কারণ বিএমইটি কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে যোগাযোগ করেও পাওয়া যায়নি।

অভিযোগ রয়েছে, বিএমইটির দু-তিনজন কর্মকর্তা ও প্রভাবশালী দু’টি রিক্রুটিং এজেন্সির অনৈতিক চাপ প্রয়োগের কারণে না-কি তারা তাদের অফিস গুটিয়ে ঢাকা থেকে চলে যেতে বাধ্য হয়েছেন।

এ প্রসঙ্গে রোমানিয়া যাওয়ার অপেক্ষায় থাকা চাঁদপুরের যুবক সোহাগ মিয়া নয়া দিগন্তকে বলেন, অস্থায়ী অফিসটি যেদিন চলে গেছে তার দু’দিন পরই আমার ইন্টারভিউ ছিল। তিনি বলেন, এখন রোমানিয়ার অস্থায়ী অফিসটি দিল্লিতে চলে যাওয়ায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি আমরা। কারণ এখান থেকে যত সহজে ভিসা পাওয়া যেতো দিল্লি থেকে ভিসা পাওয়াটা ততই কঠিন হয়ে পড়েছে। সময় ও খরচ বেশি লাগবে এখন। তিনি বলেন, আমি শুনতে পেরেছি, ইন্টারভিউ-এর সিরিয়াল এগিয়ে আনা নিয়ে কর্মকর্তাদের সাথে রোমানিয়ান ভিসা অফিসের কারো সাথে দূরত্ব তৈরি হয়েছিল। এ প্রসঙ্গে একাধিক রিক্রুটিং এজেন্সির মালিক গতকাল নয়া দিগন্তকে বলেন রোমানিয়ায় কর্মী পাঠায়, গুলশানের এমন দু’টি প্রতিষ্ঠানের আবেদন করা কর্মীদের সিরিয়াল আগস্টে নির্ধারণ করা থাকলেও তারা নাকি ‘চাপ’ প্রয়োগ করে ফেব্রুয়ারি মাসের সিরিয়ালে এনে ঢুকিয়ে দিয়েছেন। এ নিয়েই মূলত দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। তবে কোনো দু’টি রিক্রুটিং এজেন্সি এই অনিয়মের সাথে জড়িত সেই নামটি গতকাল রাত পর্যন্ত জানা সম্ভব হয়নি।

তবে রিক্রুটিং এজেন্সি মালিকরা দাবি করেছেন, যারা চাপ প্রয়োগ করেছিলেন তাদের চিহ্নিত করা খুব কঠিন কাজ নয়। তবে যারা এই কাজটি করেছেন, তাদের কারো কারো ভাই ব্রাদার রোমানিয়াসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে অবস্থান করে সেখান থেকে বিভিন্ন পরিচয় দিয়ে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করেছিলেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।

রোমানিয়ার বাংলাদেশ দূতাবাসের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের সাথে শ্রমবাজারের সার্বিক বিষয় নিযে যোগাযোগ করা হলে তারা নাম না প্রকাশের শর্তে নয়া দিগন্তকে বলেন, বাংলাদেশের শ্রমবাজারের অবস্থা দিন দিন খারাপের দিকে যাচ্ছে। তবে কর্মী পালানো বন্ধে রোমানিয়ান সরকার আগের থেকে এখন অনেক কঠোর অবস্থানে রয়েছেন বলে জানান তারা।

রোমানিয়ায় বাংলাদেশের শ্রমবাজারের ভবিষ্যৎ কি? সম্প্রতি নয়া দিগন্তের পক্ষ থেকে এমন প্রশ্নে করা হলে রোমানিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত দাউদ আলী বলেছিলেন, বাংলাদেশীরা যেহেতু ভালো নয়, পালিয়ে যায় সে অর্থে আমি বলব তারা ভালো নয়। যদি তারা না পালাত তাহলে সম্ভবনাময় শ্রমবাজারটি আমাদের বাংলাদেশীদের দখলে আসত। কিন্তু এরইমধ্যে আমাদের যেসব শ্রমিক বৈধভাবে এসে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে পালিয়ে গেছে। মোট কথা যা এসেছে তার বেশির ভাগ এ দেশে নেই। এই বিষয়টি রোমানিয়ান সরকারও ইতোমধ্যে জেনে গেছে। ওই তুলনায় নেপাল থেকে আসা শ্রমিকদের পালানোর সংখ্যা অনেক কম। যার কারণে তারা পর্যাপ্ত ভিসাও পাচ্ছে। বলতে পারেন রোমানিয়ার বাংলাদেশের শ্রমবাজার নেপালের দখলে চলে যাচ্ছে। তবে অপর এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, অবৈধভাবে যেসব শ্রমিক বর্ডার ক্রস করার চেষ্টা করছে, তাদেরকে এখন অভিযান চালিয়ে ধরছে। এখানকার আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

গতকাল সোমবার সন্ধ্যা ৭টায় এশিয়া কন্টিনেন্টাল গ্রুপের (বিডি) কর্ণধার মোহাম্মদ লোকমান শাহের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি নয়া দিগন্তকে বলেন, রোমানিয়ার শ্রমবাজার খোলার পেছনে আমাদের সরকারের যেমন শ্রম মেধা ছিল তেমনি ১৫ বছর আগে যখন প্রথম এই শ্রমবাজারটি ওপেন হয়েছিল তখন এর পেছনে রিক্রুটিং এজন্সির মালিকদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি অবদান ছিল আমার এবং আমার প্রতিষ্ঠানের। রোমানিয়া থেকে শ্রমিক পালানোর কারণে বাংলাদেশের শ্রমবাজার নেপালের দখলে চলে যাচ্ছে এমন শঙ্কার কথা জানতে চাইলে লোকমান শাহ বলেন, আমাদের শ্রমবাজার নিয়ে গভীর ষড়যন্ত্র হচ্ছে। একই সাথে আমি দীর্ঘ দিন থেকে নানাভাবে বলে আসছি শুধু রোমানিয়া নয় পুরো ইউরোপের শ্রমবাজার রক্ষার স্বার্থে আমাদের মন্ত্রণালয়ের দ্রুত একটি সুনির্দিষ্ট নীতিমালা তৈরি করা জরুরি। কারণ আমাদের কর্মী পালানোর খারাপ মেসেজটি ইতোমধ্যে পুরো ইউরোপে ছড়িয়ে পড়েছে।

এখন দেশে দেশে থাকা কোনো স্বার্থান্বেষী মহলের কারণে বাংলাদেশী শ্রমিকরা রোমানিয়ায় যাওয়ার পর থাকছে না তাদের খুঁজে বের করাও জরুরি হয়ে পড়েছে। নতুবা আমাদের সম্ভবনাময় শ্রমবাজারটি হাতছাড়া হয়ে যাবে বলে মনে করছি আমিও। তিনি বলেন, রোমানিয়াতে আগে বাংলাদেশীরা প্রকাশ্যে ঘোরাফেরা করত। এখন তাদেরকে রোমানিয়ানরা আড় চোখে দেখে। অপর দিকে নেপালিদের তারা কাছে টেনে নিচ্ছে- এটা অবশ্যই আমাদের ভেবে দেখার সময় এসেছে।

 


আরো সংবাদ



premium cement