২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

জাতিকে বোকা বানিয়ে সরকার আগাম নির্বাচন করতে চায় : ফখরুল

রাজধানীতে অবস্থান কর্মসূচি : নাটোরে আ’লীগ, খুলনায় পুলিশের সাথে সংঘর্ষ
রাজধানীতে বিএনপির অবস্থান কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর : নয়া দিগন্ত -


সরকারের বিরুদ্ধে সব মানুষকে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
গতকাল শনিবার দুপুরে দুই ঘণ্টার অবস্থান কর্মসূচিতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে সাংবাদিকদের ওপর নিপীড়নের প্রসঙ্গ টেনে তিনি এই আহ্বান জানান।


মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে মতিউর রহমান, যিনি এ দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় পত্রিকা প্রথম আলোর সম্পাদক, তার নামে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টে মামলা দিয়েছে, পত্রিকাটির রিপোর্টার শামসুজ্জামান শামসকে গ্রেফতার করে নিয়ে গেছে। আমরা আছি বলে এখনো কথা বলছি, এ দেশের মানুষ কথা বলছে। তাই আমি প্রথমেই যে সাবধান বাণী উচ্চারণ করতে চাই সব মানুষের কাছে- বন্ধুগণ, সতর্ক হোন, সজাগ হোন। যারা আজকে ক্ষমতা বেআইনিভাবে জোর করে ধরে রাখার জন্য ভিন্ন মত ধারণকারী মানুষকে হত্যা করছে, গুম করছে, নির্যাতন করছে, কারাগারে নিচ্ছে তাদের হাত থেকে আপনারাও মাফ পাবেন না। কারণ একদিন না একদিন আপনাদেরও ধরবে। তাই সব মানুষের দায়িত্ব সকালে মিলে এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা।


জার্মান কবি মার্টিন নিম্যোলারের লেখা কবিতা ‘ফার্স্ট দে কেইম’ (ওরা প্রথম : এসেছিল) আবৃত্তি করে মির্জা ফখরুল বলেন, কবিতাটি খুবই প্রাসঙ্গিক। এটা পড়ার লোভ আমি সামলাতে পারছি না। কবিতাটি হচ্ছে, ওরা প্রথমে কমিউনিস্টদের জন্য এসেছিল আমি কোনো কথা বলিনি। কারণ আমি কমিউনিস্ট নই। তারপর যখন ওরা ট্রেড ইউনিয়নের লোকগুলোকে ধরে নিয়ে গেলো, আমি নীরব ছিলাম কারণ আমি শ্রমিক নই। শেষবার ওরা ফিরে এলো আমাকে ধরে নিয়ে যেতে। আমার পক্ষে কেউ কোনো কথা বলল না। কারণ কথা বলার মতো আর কেউ ছিল না।
তিনি বলেন, জার্মানরা ইহুদিদের হত্যা করার জন্য হিটলার ও হিটলারের গ্যাসটাপো বাহিনী যখন একেক করে কমিউনিস্ট, সাংবাদিক, লেখক যারা সত্য কথা বলে, যারা জনগণের কথা বলে শ্রমিকদের ধরে নিয়ে যাচ্ছিল তখন কোনো কোনো মানুষ তারা নিজেকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য সেদিন কোনো বিরোধিতা করেনি, কোনো কথা বলেনি। তাকে যখন ধরে নিতে এলো তখন কথা বলার কেউ ছিল না।


তিনি বলেন, আজকে ওই অবস্থা (জার্মানের মতো অবস্থা) এখানে হয়েছে। আজকে একেক করে যারা এই সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলতে শুরু করেছে তাদের তারা ধরে নিয়ে গেছে, তাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে, তাদের গুম করেছে, হত্যা করেছে। শ্রমিকদের ধরে নিয়ে গেছে, গুম করেছে হত্যা করেছে, ভিন্ন মত পোষণ করেছে, গুম করেছে, হত্যা করেছে। এরপর আপনাদের মনে আছে আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে অত্যাচার করেছে, নির্যাতন করেছে, দেশ ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য করেছে, শফিক রেহমানকে একইভাবে দেশ ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য করেছে, আসাদ সাহেবকে (দৈনিক সংগ্রাম) তাকে দীর্ঘকাল কারাগারে আটক করে রেখেছিল। তখন অনেকে কোনো কথা বলেননি।


‘ওদের আগাম নির্বাচনের ভিন্ন কৌশল’ : মির্জা ফখরুল বলেন, এরা সহজে যাবে না। গত পরশু দিন ইলেকশন কমিশনে একটা মিটিং হয়েছে। সেই মিটিংয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেছেন, নির্বাচনের সব ব্যবস্থা গ্রহণ করো, প্রয়োজনে আগাম নির্বাচনের জন্যও ব্যবস্থা গ্রহণ করো। অর্থাৎ তারা এখন ভিন্ন কৌশল নিতে চায়। যে আগাম নির্বাচন করে জাতিকে বোকা বানিয়ে তারা আগের মতো নিজেদের নির্বাচিত ঘোষণা করবে।
তিনি বলেন, এবার আর জনগণ আপনাদের কোনো কৌশলকেই সফল হতে দেবে না, আপনাদের কোনো ফাঁদে পা দেবে না। এবার জনগণ প্রতিরোধ গড়ে তোলে আপনাদের সমস্ত চক্রান্ত ব্যর্থ করে দেবে।


তিনি বলেন, এই সরকার ফ্যাসিস্ট সরকার, এ সরকার গণতন্ত্র মানে না, এই সরকার মানুষের মতামতকে কোনো গুরুত্ব দেয় না এবং তাদের একমাত্র লক্ষ্য ক্ষমতায় টিকে থাকা এবং যেসব নির্বাচন করেছে কোনো ভোট ছাড়াই, জোর করে বন্দুক-পিস্তল নিয়ে ক্ষমতা আকড়ে আছে। তাদের কারা সাহায্য করছে? আজকে দুর্ভাগ্যজনকভাবে জনগণের বেতনে যাদের জীবন চলে তারা আজকে ওদের সহযোগিতা করছে। এ দেশের প্রশাসন, এ দেশের পুলিশ, এ দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এই বেআইনি, অবৈধ সরকারকে জনগণের সাথে যাদের সম্পর্ক নাই তাদের টিকিয়ে রাখছে। আমরা পরিষ্কার করে বলতে চাই যে, এ দেশের মানুষ কখনোই অন্যায়কে মেনে নেয়নি, এ দেশের মানুষ সব সময় অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে, যুদ্ধ করেছে এবং তারা সত্যিকার অর্থে গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছে।
রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের সামনে মহানগর বিএনপির উদ্যোগে সরকার পদত্যাগের ১০ দফা, বিদ্যুৎ-গ্যাস-নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতি এবং সর্বগ্রাসী দুর্নীতির প্রতিবাদে বেলা ২টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত এই অবস্থান কর্মসূচি হয়। রমজান মাসে হলেও মহানগরের বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে সহস্রাধিক নেতাকর্মী এই কর্মসূচিতে অংশ নেন।


বিএনপির দফতর জানায়, ঢাকা ছাড়াও সারা দেশে মহানগর ও জেলা সদরে একযোগে কর্মসূচি হয়েছে।
রাজধানীতে ‘১২ দলীয় জোট’ বিজয় নগর পানির ট্যাংকের সামনে, বাংলাদেশ লেবার পার্টি ও সমমনা পেশাজীবী গণতান্ত্রিক জোট আলাদাভাবে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এবং গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য পল্টন মোড়ে, লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি-এলডিপি পান্থপথে দলের কার্যালয়ের সামনে এবং ‘গণফোরাম-পিপলস পার্টি’ আরামবাগে গণফোরাম চত্বরে এই কর্মসূচি করে।


‘বিবিএসের তথ্য মিথ্যা’ : মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমাদের সাধারণ মানুষ অত্যন্ত কষ্টের মধ্যে দিনযাপন করছে, না খেয়ে থাকে। জিনিসপত্রের দাম এখানে অনেকে বলেছেন। আজকে মানুষকে বোকা বানানোর জন্য সরকারের একটা প্রতিষ্ঠান আছে বাংলাদেশ ব্যুরো অব স্ট্যাটিস্টিকস, তাদের দিয়ে মিথ্যা তথ্য তৈরি করে জনগণের সামনে এবং বিশ্বের সামনে তারা দেখাতে চায় যে, এই সরকারের আমলে উন্নয়ন এমনভাবে বাড়ছে সেখানে বেকারের সংখ্যা নাকি গত তিন বছরে কমে গেছে আরো ২৬%। কী মিথ্যা তথ্য। এটা আমার কথা নয় শুধু। এ দেশের খ্যাতিমান অর্থনীতিবিদরা বলছেন যে, এগুলো সঠিক তথ্য নয়, এগুলো সব সাজানো তথ্য। এভাবে মানুষকে বোকা বানিয়ে প্রতারণা করে এই সরকার ক্ষমতায় টিকে আছে।


১০ দফা দাবি তুলে ধরে তিনি বলেন, আমরা দাবি নিয়ে রাস্তায় নেমেছি। আমরা অবশ্যই রাস্তায় থাকব। জনগণ যেভাবে জেগে উঠেছে আমরা নিশ্চিত এই সরকারকে অবশ্যই বিদায় নিতে হবে। জনগণের অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে তারা পরাজিত হবে এবং জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে। আসুন আজকে সমস্ত রাজনৈতিক দল, সব রাজনৈতিক সংগঠন, সব ব্যক্তি যারা বাংলাদেশকে ভালোবাসি, গণতন্ত্রকে ভালোবাসি, স্বাধীনতাকে ভালোবাসি তারা আজকে সবাই একতাবদ্ধ হয়ে, ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই ভয়াবহ দানবীয় মনোস্টার, যাকে বলা হয় এই অবৈধ সরকার, তাকে জনগণের অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে পরাজিত করে আমরা জনগণের সরকার, জনগণের বাংলাদেশ, মুক্ত বাংলাদেশ, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করি।
স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, এই সরকার আমাদের যে বর্তমান সঙ্কট, এই সঙ্কট থেকে আর উত্তরণ করতে পারবে না। তাই অনতিবিলম্বে এই সরকারকে বিদায় করাই হচ্ছে এ দেশের জনগণের একমাত্র আওয়াজ। আওয়ামী লীগ ও গণতন্ত্র একসাথে যায় না। আর বিএনপি যখন ক্ষমতায় এসেছে গণতন্ত্র এনেছে। তাই বিএনপিকে এ দেশের জনগণকে নিয়ে ইস্পাত কঠিন গণঐক্য সৃষ্টি করে এই সরকারকে বিদায় করতে হবে। এর কোনো বিকল্প নাই।

স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, আওয়ামী লীগের হাত থেকে দেশের ক্ষমতার পরিবর্তন আনতে হবে। ইনশাআল্লাহ প্রস্তুতি সম্পন্ন। আমরা নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার আদায় করে নির্বাচন করব। আজকে এই অবস্থান কর্মসূচি ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য নয়, দেশের মানুষের দাবি আদায়ের জন্য, ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক আবদুস সালামের সভাপতিত্বে ও সদস্যসচিব রফিকুল আলম মজনু ও উত্তরের সদস্যসচিব আমিনুল হকের সঞ্চালনায় অবস্থান কর্মসূচিতে দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমান উল্লাহ আমান, চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নাসির উদ্দিন অসীম, মহিলা দলের আফরোজা আাব্বাস, যুবদলের সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের এস এম জিলানি, মহানগর বিএনপির ইশরাক হোসেন, নবী উল্লাহ নবী, জাসাসের জাকির হোসেন রোকন, মৎস্যজীবী দলের আবদুর রহিম, ছাত্রদলের কাজী রওনাকুল ইসলাম শ্রাবণ প্রমুখ নেতা বক্তব্য রাখেন।
নাটোরে আ’লীগ ও খুলনায় পুলিশের সাথে সংঘর্ষ : বিএনপির কেন্দ্রঘোষিত অবস্থান ধর্মঘট কর্মসূচি পালনকালে নাটোর ও খুলনায় ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। নাটোরে কর্মসূচি চলাকালে আওয়ামী লীগ কর্মীরা হামলা চালায়। এ সময় সংঘর্ষে দু’পক্ষের অন্তত ২০ জন আহত হয়। এ ছাড়া খুলনায় পুলিশের সাথে সংঘর্ষের ফলে কর্মসূচি পণ্ড হয়ে যায়। এ সময় বিএনপির ১২ নেতাকর্মী আহত এবং আটজনকে গ্রেফতার করা হয়। ১০ দফা দাবি বাস্তবায়ন দাবিতে গতকাল রাজধানীসহ সারা দেশে জেলা পর্যায়ে বিএনপি অবস্থান কর্মসূচি পালন করে।


নাটোর প্রতিনিধি জানান, নাটোরে শনিবার দুপুরে জেলা বিএনপির অস্থায়ী কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচিতে সরকারদলীয় কর্মীদের হামলার ঘটনা ঘটেছে। বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুর বক্তব্য চলাকালে আওয়ামী লীগ কর্মীরা তাদের ওপর হামলা চালায়। এ সময় উভয়পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও ইট-পাটকেল ছোড়া ও মারধরের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে দু’পক্ষের অন্তত ২০ জন আহত হয় বলে জানা গেছে। হামলায় কাফুরিয়া ইউনিয়ন যুবদলের সহসভাপতি শরিফুল ইসলাম শরিফ, যুবদল নেতা রনি ব্যাপারী গুরুতর আহত হয়। এ ছাড়াও জেলা বিএনপির আহ্বায়ক শহিদুল ইসলাম বাচ্চুসহ বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের কমপক্ষে ১৮ নেতাকর্মী আহত হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে। শরিফুল ও রনি ব্যাপারীকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। অপর দিকে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমিন বিপ্লব ও নাটোর শহর যুবলীগের সভাপতি সায়েম হোসেন উজ্জ্বল আহত হয়েছেন বলে জানানো হয়। প্রায় আধা ঘণ্টাব্যাপী ব্যাপক ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও মারধরের পর দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে জেলা বিএনপি। এতে বলা হয়, তাদের কর্মসূচি অনুযায়ী নাটোর উপশহর মাঠে মঞ্চ তৈরির সময়ই বৃহস্পতিবার রাতে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা হামলা করে ভাঙচুর শেষে অগ্নিসংযোগ করে।

শান্তি রক্ষার জন্য তারা উপশহর মাঠ ছেড়ে দিয়ে দলীয় কার্যালয়ের সামনে ফুটপাথে খুব সংক্ষিপ্ত পরিসরে অবস্থান ধর্মঘট করেন। শনিবার বেলা আড়াইটায় তাদের অবস্থান ধর্মঘটে বক্তব্য রাখছিলেন প্রধান অতিথি রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু। এ সময় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা তাদের দলীয় কার্যালয় থেকে একটি বড় মিছিলসহ বিএনপি অফিসের দিকে আসতে থাকে। নাটোর বিদ্যুৎ অফিসের সামনে পুলিশ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বাধা দিলে তারা পুলিশি ব্যারিকেড ভেঙে বিএনপির অবস্থান কর্মসূচিতে আক্রমণ করে। সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন- জেলা বিএনপির আহ্বায়ক শহিদুল ইসলাম বাচ্চু, সদস্য সচিব রহিম নেওয়াজ, সাবেক এমপি অধ্যাপক কাজী গোলাম মোর্শেদ, জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক কাজী শাহ আলম, সদস্য ফরহাদ আলী দেওয়ান শাহিন, জেলা যুবদল সভাপতি এ হাই তালুকদার ডালিম ও স্বেচ্ছাসেবক দল সভাপতি আসাদুজ্জামান আসাদ।


নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম রমজান বলেছেন, তাদের পূর্বনির্ধারিত নাটোর উপশহর মাঠের শান্তি সমাবেশ করার জন্য তারা মিছিলসহ যাওয়ার সময় নাটোর সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের সামনে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। বাধার কারণে সেখানেই তারা শান্তি সমাবেশ করছিলেন। বিএনপি নেতাকর্মীরা শান্তি সমাবেশে ইটপাটকেল ছুড়ে হামলা করে।
ঘটনার পর থেকে নাটোর সদর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার মাহমুদা শারমিন নেলি, ডিবির ওসি আবু সাদাত ও নাটোর থানার ওসি তদন্ত আবুল কালাম আজাদের নেতৃত্বে বিপুলসংখ্যক পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।


খুলনা ব্যুরো জানায়, খুলনায় গতকাল কর্মসূচি পালনকালে পুলিশের সাথে বিএনপি নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়। পুলিশ টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। এতে বিএনপির ১২ নেতাকর্মী আহত হয়। এতে বিএনপির কেন্দ্রঘোষিত অবস্থান কর্মসূচি পণ্ড হয়ে যায়। প্রায় আধাঘণ্টাব্যাপী ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া চলাকালে নগরীর কেডিঘোষ রোডসহ বড় বাজার এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। দ্রুত দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। পুলিশ ৩৫ রাউন্ড টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং ঘটনাস্থল থেকে বিএনপির ৮ নেতাকর্মীকে আটক করেছে।
বেলা ৩টার পর থেকে কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের জন্য নগরীর কেডি ঘোষ রোডের দলীয় কার্যালয়ের সামনে বিএনপির নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে আসতে থাকে। সোয়া ৩টার দিকে হঠাৎ একটি মিছিল থেকে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছোড়া হয়। এ সময় তাদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ লাঠিচার্জ শুরু করে। দুই পক্ষের মধ্যে ইটপাটকেল বিনিময়কালে বিএনপির অন্তত ১০-১২ জন নেতাকর্মী আহত হন।


এ দিকে পুলিশের সাথে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার পর দলীয় কার্যালয়ে বিএনপি তাৎক্ষণিক এক প্রেস ব্রিফিং করে। এতে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী অভিযোগ করে বলেন, বিএনপির শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পণ্ড করতেই পুলিশ বিনা উসকানিতে হামলা চালিয়েছে। পুলিশের হামলায় মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক চৌধুরী হাসানুর রশীদ মিরাজ, জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক এবাদুল হক রুবায়েত, মহানগর ছাত্রদলের আহ্বায়ক ইশতিয়াক হোসেন ইস্তি, ছাত্রদল নেতা ইমতিয়াজ আহমেদসহ বিএনপির ১২ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন।
এ ব্যাপারে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের ডেপুটি পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) তাজুল ইসলাম বলেন, অনুমতি না নিয়েই বিএনপির কর্মসূচি পালনের চেষ্টা করলে তাদের বাধা দেয়া হয়। এ সময় তারা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট পাটকেল লিক্ষেপ করে। এতে ১০ জন পুলিশ আহত হয়। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে আটজনকে আটক করেছে।


রাজশাহী বিএনপির আহ্বায়কসহ ৫ জন আটক
রাজশাহী ব্যুরো জানায়, রাজশাহীতে অবস্থান কর্মসূচি থেকে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাঈদ চাঁদসহ পাঁচ নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। গতকাল বিকেলে নগরীর গণকপাড়া এলাকা থেকে তাদের আটক করা হয়। এর আগে জেলা বিএনপির কর্মসূচির ব্যানার কেড়ে নেয় পুলিশ।
আটককৃতরা হলেন- রাজশাহী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাঈদ চাঁদ, পবা উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব মোজাফফর হোসেন, চারঘাট উপজেলার লক্ষ্মীপুর ইউনিয়ন বিএনপির সেক্রেটারি কামরুজ্জামান মৃধা, শলুয়া ডিগ্রি কলেজের শিক্ষক এমদাদুল হক ও বাঘা উপজেলার হরিরামপুর এলাকার স্বপন।


বগুড়ায় অবস্থান কর্মসূচি
বগুড়া অফিস জানায়, কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে গতকাল বেলা ২টা থেকে ৪টা পর্যন্ত বগুড়া শহরের নবাববাড়ী রোডস্থ দলীয় কার্যালয়ের সামনে জেলা বিএনপির সভাপতি ও পৌর মেয়র রেজাউল করিম বাদশার সভাপতিত্বে অবস্থান কর্মসূচিতে প্রধান অতিথি ছিলেন চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হেলালুজ্জামান তালুকদার লালু। এতে বক্তব্য দেন চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক জেলা সভাপতি এ কে এম মাহাবুবর রহমান, জেলা সাধারণ সম্পাদক আলী আজগর তালুকদার হেনা, সাবেক জেলা সভাপতি ভিপি সাইফুল ইসলাম, সাবেক জেলা আহ্বায়ক এ কে এম সাইফুল ইসলাম, বিএনপি নেতা ফজলুল বারী তালুকদার বেলাল, জয়নাল আবেদীন চাঁন, সহিদ উন নবী সালাম, কে এম খায়রুল বাশার, মাফতুন আহমেদ খান রুবেল, মনিরুজ্জামান মনি, যুবদলের খাদেমুল ইসলাম ও জাহাঙ্গীর আলম, স্বেচ্ছাসেবকদলের আবু হাসান, ছাত্রদলের সাইদুল ইসলাম, মহিলা দলের নাজমা আক্তার, শ্রমিক দলের আব্দুল ওয়াদুদ, মোশারফ হোসেন স্বপন, মৎস্যজীবী দলের ময়নুল হক বকুল প্রমুখ।


সিলেটে কর্মসূচি পালন
সিলেট ব্যুরো জানায়, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির বলেছেন, সরকারের ভয়াবহ দুর্নীতির কারণে দেশ আজ ভয়াবহ সঙ্কটে। এসব অপকর্মের বিরুদ্ধে কথা বললেই চলে জুলুম-নির্যাতন। গতকাল শনিবার সিলেটের দক্ষিণ সুরমা উপজেলার চন্ডিপুল এলাকায় কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে জেলা বিএনপির অবস্থান কর্মসূচিতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক এমরান আহমদ চৌধুরীর সঞ্চালনায় অবস্থান কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখেন বিএনপি নেতা আশিক উদ্দিন আশুক, মামুনুর রশিদ মামুন (চাকসু), হাজী শাহাব উদ্দিন আহমদ, ফখরুল ইসলাম ফারুক, এ কে এম তারেক কালাম, ইকবাল বাহার চৌধুরী, আজির উদ্দিন, শহিদ আহমদ, নজমুল হোসেন পুতুল, নাজিম উদ্দিন লস্কর, এমরান আহমদ চৌধুরী প্রমুখ।


ময়মনসিংহে এমরান সালেহ প্রিন্স
ময়মনসিংহ অফিস জানায়, বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেছেন, ক্ষমতাসীনরা জনগণের সকল অধিকার হরণ করে নিজেদের দুর্নীতি করার অবাধ স্বাধীনতা নিশ্চিত করেছে। গতকাল নগরীর দলীয় কার্যালয়ের সামনে ১০ দফা বাস্তবায়নের দাবিতে অবস্থান কর্মসূচিতে তিনি এ কথা বলেন। ময়মনসিংহ মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা বিএনপি আয়োজিত কর্মসূচিতে অধ্যাপক এ কে এম শফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে এবং যুগ্ম আহ্বায়ক আবু ওয়াহাব আকন্দের সঞ্চালনায় আরো বক্তব্য রাখেন দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ডা: মাহবুবুর রহমান লিটন, উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক এ কে এনায়েত উল্লাহ কালাম, দক্ষিণ জেলা যুগ্ম আহ্বায়ক জাকির হোসেন বাবলু, মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যাপক শেখ আমজাদ আলী, উত্তর জেলা যুগ্ম আহ্বায়ক মোতাহার হোসেন তালুকদার ও দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আলমগীর মাহমুদ আলম।


ফেনীতে কর্মসূচি পালন
ফেনী অফিস জানায়, শহরের ইসলামপুর রোডের বিএনপি কার্যালয়ের সামনে গণ-অবস্থান পালিত হয়। জেলা আহ্বায়ক শেখ ফরিদ বাহারের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব আলাল উদ্দিন আলালের সঞ্চালনায় কর্মসূচিতে প্রধান অতিথি ছিলেন বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক জালাল উদ্দীন মজুমদার। আরো বক্তব্য রাখেন- জেলা যুগ্ম-আহ্বায়ক অধ্যাপক এম এ খালেক, এয়াকুব নবী, আলাউদ্দিন গঠন, আনোয়ার হোসেন পাটোয়ারী, সদস্য সাইফুর রহমান রতন, পার্থপাল চৌধুরী, সদর উপজেলা সদস্য সচিব আমান উদ্দিন কায়সার সাব্বির, পৌর সদস্য সচিব মেজবাহ উদ্দিন ভূঁইয়া।


আরো সংবাদ



premium cement