২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

এনসিটিবির ক্ষমতা খর্ব করতে চাইছে মন্ত্রণালয়

প্রাথমিকের বই ছাপা নিয়ে টানাপড়েন
-

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) ওপর ন্যস্ত বিনামূল্যের পাঠ্যবই ছাপার ক্ষমতা খর্ব করতে চাইছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। আগামী ২০২৫ শিক্ষাবর্ষের প্রাথমিক ও ইবতেদায়ির ১০ কোটি কপি বই ছাপতে নিজেই দায়িত্ব নিতে চায় মন্ত্রণালয়। এ জন্য প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরকে তারা অতিরিক্ত দায়িত্ব দিতে চাইছে। প্রয়োজনে বিদ্যমান আইন সংশোধন করে হলেও এনসিটিবির’র ক্ষমতায় লাগাম টানতে চাইছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এনসিটিবি’র বদলে এবার প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যের পাঠ্যবই প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মাধ্যমে ছাপাতে চায় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ জন্য ২০২৫ সালের বই অধিদফতরের মাধ্যমে ছাপানোর চিন্তাভাবনা এখন থেকেই করা হচ্ছে। অধিদফতরের মাধ্যমে বই ছাপানো হলে সরকারের ২০ থেকে ৩০ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে বলে মনে করছেন গণশিক্ষা সচিব ফরিদ আহাম্মদ। তবে খুদে শিক্ষার্থীদের বই ছাপানোর দায়িত্ব কোন সংস্থা পাচ্ছে তা নির্ভর করছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তের ওপর। অধিদফতরের মাধ্যমে প্রাথমিকের বই ছাপানোর বিষয়ে প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠাবে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।

বই ছাপার ক্ষমতা নিয়ে টানাপড়েন শুরু হলেও চলতি বছরে অর্থাৎ ২০২৩ সাল নির্বাচনী বছর হওয়ায় ২০২৪ সালের বই আগের মতো এনসিটিবি’র মাধ্যমেই ছাপা হবে। এ জন্য এনসিটিবি, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরসহ সংশ্লিষ্টদের সাথে আলোচনা করে কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণ করেছে মন্ত্রণালয়। চলতি বছরের নভেম্বরের মধ্যেই প্রাথমিকের ২০২৪ সালের পাঠ্যবই সব উপজেলায় পাঠানোর লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। আর সরকারপ্রধানের অনুমোদন মিললে ২০২৫ সালের পাঠ্যবই ছাপানোর দায়িত্ব পাবে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর।

গতকাল মঙ্গলবার প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সভা কক্ষে আয়োজিত বৃত্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশের সংবাদ সম্মেলনে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মাধ্যমে প্রাথমিকের বই ছাপানোর বিষয়ে কথা বলেন গণশিক্ষা সচিব ফরিদ আহাম্মদ। এ সময় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো: জাকির হোসেন উপস্থিত ছিলেন।

সচিব বলেন, বই ছাপানোর বরাদ্দ প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের অনুকূলে আসে। আইন অনুযায়ী বই ছাপানোর জন্য এনসিটিবিকে অতিরিক্ত ২ শতাংশ টাকা সার্ভিস চার্জ হিসেবে দিতে হয়। কাজটা করার সক্ষমতা প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের রয়েছে। আমাদের বরাদ্দও আছে। কাজটা যদি আমরা প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মাধ্যমে করতে পারি সরকারের অন্তত ২০ থেকে ৩০ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে। আমরা আরো দ্রুততার সাথে কাজটি করতে পারব।

এ দিকে এনসিটিবি’র বিদ্যমান আইনে বলা হয়েছে, পাঠ্যবইয়ের পাণ্ডুলিপি প্রণয়ন ও মুদ্রণের কাজ এনসিটিবি করবে। এ বিষয়ে ফরিদ আহাম্মদ বলেন, আমরা একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা করেছিলাম। সেখানে আমরা বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘ পর্যালোচনা করেছি। সুবিধা-অসুবিধা, কোনটা হলে জনগণের ভালো হয়, কোনটা হলে শিক্ষার্থীদের ভালো হয়। সেভাবে আমরা পর্যালোচনা করেছি।

অন্য দিকে তথ্য-উপাত্ত উল্লেখ করে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মাধ্যমে পাঠ্যবই ছাপানোর জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রস্তাব পাঠানো হবে জানান সচিব ফরিদ আহাম্মদ। তিনি আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রী যেভাবে সিদ্ধান্ত নেবেন, সেই অনুযায়ী আমরা আগামী বছর কাজ করব। এ বছর কোনো জটিলতা নেই। যার যা দায়িত্ব তা আমরা পালন করব। সরকার যেভাবে সিদ্ধান্ত দেবে সেভাবে কাজ করব।

২০২৪ সালের বই ছাপানো নিয়ে গণশিক্ষা সচিব বলেন, এ বছর নির্বাচনী বছর। গত বছরের চেয়ে এবার আগাম সতর্কতা অবলম্বন করেছি আমরা। এরই মধ্যে এনসিটিবি, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর থেকে শুরু করে সবাইকে নিয়ে সভা করে কর্মপরিকল্পনা করেছি। এ বছরের বই যেভাবে আছে সেভাবে কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী এগোবো। এ বছর আমরা নভেম্বরের মধ্যে যেকোনো মূল্যে সব পাঠ্যপুস্তক উপজেলাপর্যায়ে পৌঁছানো নিশ্চিত করব। এ জন্য যা যা করা দরকার কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী তা করা হবে।
উল্লেখ্য, প্রাক-প্রাথমিক, প্রাথমিক ও ইবতেদায়ি শিক্ষার্থীদের জন্য ২০২৩ সালের ৯ কোটি ৯৮ লাখ কপি বই ছাপানো হয়েছিল। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তর মিলিয়ে সাড়ে ৩৪ কোটির বেশি পাঠ্যবই ছাপা হয়েছিল চলতি বছরের জন্য। এ পুরো কাজটি হয়েছে এনসিটিবি’র তত্ত্বাবধানে।


আরো সংবাদ



premium cement