২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`
১০ ডিসেম্বর নিয়ে রাজনীতিতে উত্তাপ

বিএনপির মনোবল ভাঙার কৌশল আ’লীগের

পাল্টা কর্মসূচি থাকছে না
-

বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশ একেবারে শেষের পথে। আগামী ১০ ডিসেম্বর ঢাকার মহাসমাবেশ ঘিরে চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা। ওই সমাবেশ ঘিরে রাজনীতিতে নতুন করে উত্তাপ ছড়াচ্ছে। চায়ের টেবিলেও আলোচনার ঝড় উঠেছে ১০ ডিসেম্বর কী হবে? এক দিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগও বিএনপির ঢাকার মহাসমাবেশ নিয়ে কিছুটা চিন্তিত। অন্য দিকে দেশের মানুষের জানমালের নিরাপত্তা নিয়ে সরকারি দলের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠাও কাজ করছে। তবে বিএনপির চলমান আন্দোলনকে পাত্তা না দিয়ে তাদের নেতাকর্মীদের মনোবল ভেঙে দেয়ার কৌশল নিয়েছে ক্ষমতাসীনরা। এ জন্য আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সরকারি দলের শীর্ষ নেতারা বিভিন্ন সভা-সমাবেশে বিএনপির প্রতি তির্যক মন্তব্য ছুড়ে দিচ্ছেন। বিশেষ করে ১০ ডিসেম্বর বিএনপির ঢাকার বড় সমাবেশ যাতে দুর্বলভাবে অনুষ্ঠিত হয় সে জন্যও নানা কৌশল নিয়েছে সরকারি দল। তবে পাল্টা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামবে না ক্ষমতাসীনরা। আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সাথে আলাপকালে এসব তথ্য জানা গেছে।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম নয়া দিগন্তকে বলেন, বিএনপি আন্দোলন করার হুমকি অনেক আগে থেকেই দিচ্ছে। এটাকে আমলে নেয়ার মতো কিছুই হয়নি। আমরা দেশের মানুষের জানমাল নিয়ে উদ্বিগ্ন। কারণ বিএনপির আন্দোলন মানে জ্বালাও পোড়াও আর অগ্নি সন্ত্রাস। তিনি বলেন, সভা-সমাবেশ করার অধিকার তাদের আছে। তবে আমরা পাল্টা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামব না। তারা যদি কর্মসূচির নামে জ্বালাও পোড়াও করে, অতীতের মতো অগ্নি সন্ত্রাস করে পেট্রলবোমা মারে তাহলে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী কঠোর হস্তে দমন করবে।

দলটির নেতারা মনে করছেন, বিএনপির অতীতের আন্দোলনের যে ব্যর্থতা আছে তা ভালোভাবে তুলে ধরতে পারলে তাদের নেতাকর্মীদের মনোবল দুর্বল হতে পারে। যার ফলে আন্দোলন থেকে হয়তো দোটানায় থাকা নেতাকর্মীরা ও কম সাহসী নেতাকর্মীরা পিছু হটবে। এ জন্য শীর্ষ পর্যায় থেকে বিএনপিকে ‘হাঁটু ভাঙা দল’ কোমর ভাঙা দল, ‘সন্ত্রাসী দল’ ‘সাম্প্রদায়িক দল’ ‘জঙ্গিবাদের পৃষ্ঠপোষক দল’সহ বিভিন্ন নেতিবাচক মন্তব্য তুলে ধরা হচ্ছে। এ ছাড়াও বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দুর্নীতির বিষয়টি জোরালোভাবে সামনে আনা হচ্ছে। যাতে তাদের নেতাকর্মীরা এসব প্রশ্নের উত্তর দিতে অস্বস্তিবোধ করে। মাঠপর্যায়ের নেতারা যাতে দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে আন্দোলন বিমুখ হয়ে পড়ে। বিএনপির আন্দোলনের নেতা কে? এ প্রশ্নটি গণমাধ্যমের সামনে বারবার তুলে ধরা হচ্ছে, যাতে বিএনপির তৃণমূল দ্বিধান্বিত হয়ে পড়ে।

তা ছাড়া বিএনপির চলমান কর্মসূচিকে ঘিরে যে সহিংসতা হবে এর দায়ভারও তাদের নেতাকর্মীদের ওপর বর্তাবে। বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি ও পুলিশের সাথে সংঘর্ষের জন্য মামলা হলে দৌড়ের ওপর থাকবে বিএনপির নেতাকর্মীরা। পরবর্তী সময়ে রাজপথ থেকে পিছু হটানোর সুযোগ তৈরি হবে।

সূত্র বলছে, ১০ ডিসেম্বর সামনে রেখে অতীতের সহিংসতার মামলাগুলোও সচল করা হচ্ছে। নতুন করে আওয়ামী লীগ নেতারাও হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের তথ্য জুড়ে দিয়ে মামলা করছেন। নতুন ও পুরনো মামলার সূত্র ধরে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী তাদের পাকড়াও করতে প্রায়ই অভিযান পরিচালনা করছে। ১০ ডিসেম্বরের আগ পর্যন্ত ধরপাকড়, বাড়ি বাড়ি গিয়ে তল্লাশি অভিযানসহ সমাবেশে যোগদান থেকে বিরত রাখতে সব ধরনের কৌশল অবলম্বন করা হবে। তা ছাড়া ১০ ডিসেম্বরের মহাসমাবেশের স্থান নয়াপল্টনের পরিবর্তে পূর্বাচল, মিরপুর, বুড়িগঙ্গা বা অন্য কোনো জায়গায় অনুষ্ঠানের জন্যও চিন্তাভাবনা করছে সরকার। নয়াপল্টনে মহাসমাবেশ না হয়ে অন্য কোনো জায়গায় অনুষ্ঠিত হলে সমাবেশের গুরুত্ব হারাবে বলে মনে করছেন সরকারি দলের শীর্ষ নেতৃত্ব। জনগণের জানমাল রক্ষায় আইনশৃঙ্খলবাহিনীকে নির্দেশনা দেয়ার পাশাপাশি জনগণের নিরাপত্তার দিক বিবেচনায় নিয়ে নেতাকর্মীদেরও সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।

তবে বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সরকার কোনো গায়েবি মামলা করছে না। আগের মামলায় যারা জামিনে আছে তাদের কিছুই করা হচ্ছে না, যাদের জামিন বাতিল হয়েছে তাদের তো পুলিশ ধরবে এটা স্বাভাবিক। এক প্রশ্নের জবাবে তথ্যমন্ত্রী বলেন, বিএনপি যে ধরনের গণসমাবেশ করতে চায় সে জন্য উপযুক্ত জায়গা হচ্ছে পূর্বাচল। এ ছাড়া মিরপুর ও বুড়িগঙ্গা নদীর পাড়েও জায়গা আছে। বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির উদ্দেশ্যেই তারা ময়দান ছেড়ে নয়াপল্টনের রাস্তায় সমাবেশ চায়। ১০ ডিসেম্বর বিএনপির সমাবেশ নিয়ন্ত্রণ করা হবে কি না এমন এক প্রশ্নের জবাবে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, আমরা কোনো সমাবেশ নিয়ন্ত্রণ করতে চাই না, নিয়ন্ত্রণ করি না, নিয়ন্ত্রণ করাও হবে না। কিন্তু সমাবেশের নামে যদি কেউ বিশৃঙ্খলা করে তাহলে সরকারকে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হয়, আইনশৃঙ্খলাবাহিনীকে জনগণের স্বার্থে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হয়। আমরা অতীতেও দেখেছি বিএনপি সমাবেশের নামে নানা জায়গায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছে বাস-ট্রাক পুড়িয়েছে, মানুষ পুড়িয়েছে।

আওয়ামী লীগের অন্যতম সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন নয়া দিগন্তকে বলেন, ১০ ডিসেম্বর মোকাবেলা করার জন্য আওয়ামী লীগের কোনো বাড়তি পরিকল্পনা নেই। বিএনপি একটি রাজনৈতিক দল, সভা-সমাবেশ করার রাজনৈতিক ও গণতান্ত্রিক অধিকার তাদের আছে। এতে আওয়ামী লীগ কোনো বাধা দেবে না। কোনো পাল্টা কর্মসূচি নিয়ে আওয়ামী লীগ মাঠেও থাকবে না। তিনি বলেন, সমাবেশ হতে হবে শান্তিপূর্ণভাবে। তবে সমাবেশের নামে যদি জ্বালাও পোড়াও করা হয়, অতীতের মতো অগ্নি সন্ত্রাস করা হয় তাহলে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।


আরো সংবাদ



premium cement