২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ইভিএমে নির্বাচন চায় আওয়ামী লীগ

ইসির সাথে সংলাপ
-

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) ব্যবহারের বিষয়ে দৃঢ় অবস্থানে রয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। দলটির তরফ থেকে গতকাল নির্বাচন কমিশনের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে ইভিএমে ভোট গ্রহণের বিষয়ে জোরালো দাবি জানানো হয়। এ সময় বিতর্কিত কাউকে পর্যবেক্ষক হিসেবে নিয়োগ না দেয়া, প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের রিটার্নিং কর্মকর্তা থেকে পোলিং এজেন্ট নিয়োগসহ একগুচ্ছ দাবি জানানোর পাশাপাশি জনপ্রিয় ও সহজে ব্যবহারের লক্ষ্যে এখন থেকেই ইভিএমের প্রচার-প্রচারণার উদ্যোগ নিতে পরামর্শ দিয়েছে দলটি। আওয়ামী লীগ মনে করে, সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের জন্য ইসির গ্রহণযোগ্যতা, নিরপেক্ষতা ও সক্ষমতা গুরুত্বপূর্ণ। এ ছাড়া ইসির দায়িত্বশীল নিরপেক্ষ আচরণ ও সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য ইভিএমে ভোট গ্রহণ জরুরি।
নির্বাচন কমিশন আয়োজিত রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে সংলাপের অংশ হিসেবে গতকাল মঙ্গলবার নির্বাচন ভবনে আওয়ামী লীগের সাথে ইসির সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। ওই সংলাপে অংশ নিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, রাখঢাক করার কিছু নেই। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে উল্লেখযোগ্য হারে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) ব্যবহার বাড়াতে হবে। আমরা ইভিএমের পক্ষে এবং এটি জোরালো ও স্পষ্ট। তিনি আরো বলেন, বর্তমান সরকারের অধীনে নয়; বরং ইসির অধীনেই নির্বাচন হবে। এ সময় নির্বাচন সম্পর্কিত সবধরনের কর্তৃত্ব থাকবে স্বাধীন কমিশনের।
এ দিন বিকেলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের সভাপতিত্বে সংলাপ শুরু হয়। শুরুতেই স্বাগত বক্তব্য দেন সিইসি। রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত নেয়া শুরু হলে প্রথমেই আওয়ামী লীগের প্রতিনিধিদল বক্তব্য দেন। এ সময় ওবায়দুল কাদের বলেন, আগামী নির্বাচনে ইভিএমের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি করতে আমরা সিইসির কাছে আহ্বান করছি। আমরা মনে করি, দেশে ইভিএম পদ্ধতি অধিকতর জনপ্রিয়। এটি সহজে ব্যবহার করার লক্ষ্যে ইসি এখন থেকেই প্রচার-প্রচারণার প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করবে।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ছয় আসনে ইভিএম ব্যবহার করে তৎকালীন ইসি। ওই সময়ও আওয়ামী লীগ ইভিএমের পক্ষে অবস্থান নেয়। ইভিএমের পক্ষে নিজেদের অবস্থান ব্যাখ্যায় ওবায়দুল কাদের বলেন, আওয়ামী লীগ মনে করে, ইসির কার্যক্রমে ইভিএম-সহ প্রযুক্তি বৃদ্ধির কারণে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ইভিএম ব্যবহারের ফলে ভোট ডাকাতি, কেন্দ্র দখল, নির্বাচনে জালিয়াতি ও ভোট চুরি বন্ধ হবে। বিএনপির দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, একটা কথা কেউ কেউ বলে থাকে বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবে না। বর্তমান সরকারের অধীনে কিন্তু নির্বাচন হচ্ছে না, নির্বাচন হবে ইসির অধীনে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থাসহ যেসব বিষয় নির্বাচন রিলেটেড, সেগুলো ইসির অধীনেই থাকবে। এখানে সরকারের করণীয় কিছু নেই। সরকার (নির্বাচনে) কোনো প্রকার হস্তক্ষেপ করতে মোটেও আগ্রহী নয়। তবে ইসিকে স্বাধীন ও কর্তৃত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের জন্য বর্তমান সরকার ফ্যাসিলেটেড করবে, সম্পূর্ণ সহযোগিতা আমরা দেবো।
ইভিএমের বিপক্ষেই বেশি কথা হয়েছে : সিইসি
আওয়ামী লীগসহ ১০টি রাজনৈতিক দলের সাথে সংলাপের শুরুতে স্বাগত বক্তব্যে সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) বিপক্ষেই বেশি কথা হয়েছে বলে জানান। তিনি বলেন, আমরা যখন দায়িত্ব নিই, কিছুদিন পর থেকেই ইভিএম নিয়ে কথাবার্তা পত্রপত্রিকায় চাউর হয়েছিল। এর বিপক্ষেই বেশি কথাবার্তা হয়েছে। শুরু থেকে ইভিএম সম্পর্কে তেমন ধারণা ছিল না। ব্যক্তিগত ধারণাও ছিল না। এরই মধ্যে ইভিএম নিয়ে অনেক কাজ করেছি। এখন মোটামুটি ধারণা আছে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, আগে আমরা দুই দফা সংলাপ করেছি। অনেকেই ইভিএমের পক্ষে বলেছেন। অনেকে সলিউশন (সমাধান) দিয়ে বলেছেন, আরো উন্নত প্রযুক্তির ইভিএম যদি কেনা যায়, তাহলে আরো ভালো হয়। আবার অনেকে সরাসরি বলেছেন, তারা ইভিএমে ভোট গ্রহণ হলে নির্বাচনে যাবেন না। আমরা আগেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম যে, রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নেবো। তবে কোন পদ্ধতিতে নির্বাচন করব, সেটি আমাদেরই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তিনি বলেন, আজ বড় দলের অনেকেই এসেছেন। মন্ত্রী স্বয়ং নিজেই এসেছেন, যেটা আমি প্রত্যাশাও করিনি। আপনি এসেছেন, আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ। আজকের আলোচনাটা ইভিএমের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে। আপনারা ইভিএমের পক্ষে-বিপক্ষে বলতে পারেন। আপনাদের কথা আমরা শুনব। আলোচনার মাধ্যমে পরবর্তী সময়ে বস্তুনিষ্ঠ সিদ্ধান্তে উপনীত হবো।
এ দিকে গতকালকের সংলাপের জন্য ১৩টি রাজনৈতিক দলকে আমন্ত্রণপত্র দেয় ইসি। দলগুলো হলোÑ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন, বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল-এমএল, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি-এলডিপি, গণতন্ত্রী পার্টি, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, বিকল্প ধারা বাংলাদেশ, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ, বাংলাদেশ ন্যাপ, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি ও বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট। এর আগে গত ১৯ ও ২১ জুন দুই ধাপে ২৬টি রাজনৈতিক দলকে ইভিএম যাচাইবিষয়ক সংলাপে আমন্ত্রণ জানায় ইসি। অবশ্য ওই দুই ধাপে ১৮টি রাজনৈতিক দলের নেতারা অংশ নেন। তবে বিএনপিসহ আটটি রাজনৈতিক দল ইসির আমন্ত্রণে সাড়া দেয়নি।


আরো সংবাদ



premium cement