২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`
এটা কেউ পারেন না-বিএমইটির ডিজি

খোলেনি মালয়েশিয়ার কলিং, ঢাকায় ডেলিগেট এনে নেয়া হলো ইন্টারভিউ

-

কর্মী পাঠানোর বিষয়ে বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়া সম্মত হলেও কোন প্রক্রিয়ায় যাবে তা এখনো ঠিক হয়নি। কত টাকা খরচ হবে, স্বাস্থ্য পরীক্ষা কারা কিভাবে করবে, নাকি শূন্য ব্যয়ে কর্মী যাবে মালয়েশিয়ায় তা চূড়ান্ত হয়নি। এই যখন অবস্থা তখন ঢাকায় মালয়েশিয়ার একটি কোম্পানির প্রতিনিধি নিয়ে ঢাকায় এসে রীতিমতো মালয়েশিয়াগামীদের ভাইবা নেয়ার ঘটনা ঘটেছে। বিনিময় ইন্টারন্যাশনাল নামের একটি রিক্রুটিং এজেন্সি গত সোমবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) নসরুল হামিদ মিলনায়তনে দিনব্যাপী এই আয়োজন করে।
এ বিষয়ে গতকাল সন্ধ্যায় কথা হয় জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমটি) মহাপরিচালক (ডিজি) মো: শহীদুল ইসলামের সাথে। সরকারের এই অতিরিক্ত সচিব নয়া দিগন্তকে জানান, এ ধরনের ভাইবা কিংবা বিজ্ঞাপন প্রচার করতে হলে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিতে হয়। সেটা কেউ নিয়েছে বলে আমার জানা নেই। তিনি বলেন, একটা কোম্পানি ইন্টারভিউ নিয়েছে বলে শুনেছি। কিন্তু তারা অস্বীকার করেছে যে, ভাইবা নেয়ার প্রক্রিয়াটি তাদের ছিল না। তাদের নামে কেউ চালিয়ে দিয়েছে। এ বিষয়ে বিনিময় ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী এম এ সোবহান হাসানকে ফোন দিলেও বন্ধ পাওয়া যায়। তিনি বর্তমানে মালয়েশিয়ায় রয়েছেন বলে জানা যায়।
প্রায় ছয় মাস আগে মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠাতে চুক্তি করে বাংলাদেশ। তবে কয়টা রিক্রুটিং এজেন্সি বাংলাদেশ থেকে কর্মী পাঠাবেÑ এই ইস্যুতে আটকে যায় কর্মী পাঠানোর প্রক্রিয়া। সর্বশেষ গত ২ জুন ঢাকায় জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এই বৈঠকে যোগ দিতে এসেছিলেন মালয়েশিয়ান মানবসম্পদ মন্ত্রী এম সারাভানান। সেই বৈঠকে আলোচনার মূল বিষয় ছিল দীর্ঘদিন ধরে আলোচনায় থাকা ২৫টি রিক্রুটিং এজেন্সি শ্রমিক পাঠাবে নাকি সব এজেন্সির জন্যই উন্মুক্ত থাকবে বাংলাদেশের অন্যতম বড় এই শ্রমবাজারটি। বৈঠক শেষে সারাভানান সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, মালয়েশিয়া যেহেতু রিসিভিং কান্ট্রি, তাই কয়টি এজেন্সি শ্র্রমিক পাঠাবে তা তার দেশের কেবিনেট সিদ্ধান্ত দেবে। ওই দিন সংবাদ সম্মেলনে প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী ইমরান আহমদ আশা প্রকাশ করেছিলেন, চলতি জুন মাসের মধ্যেই মালয়েশিয়ায় কর্মী যাওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হবে। কিন্তু এত দিন অতিবাহিত হলেও সিন্ডিকেট ইস্যুতে আটকে আছে শ্রমবাজারটি। কত টাকা খরচ হবে, মেডিক্যাল কারা কিভাবে করবে আরো অন্যান্য যেসব প্রক্রিয়া রয়েছে তা চূড়ান্ত করতে পারেনি উভয় দেশের সরকার। এ অবস্থায় বসে নেই ২৫ সিন্ডিকেটে নাম আসা রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো। পাশাপাশি বঞ্চিত এজেন্সিগুলোর মালিকরাও দেশে সংবাদ সম্মেলনসহ বিভিন্ন মহলে ধরণা দিচ্ছেন, যাতে বৈধ সব এজেন্সি মালয়েশিয়ায় লোক পাঠাতে পারে। এই যখন অবস্থা, তখন গত সোমবার রাজধানীর সেগুন বাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে দিনব্যাপী ভাইবা কার্যক্রম পরিচালিত হয়। গত ২১ জুন এই প্রোগ্রামের জন্য হলো বুকিং দেয়া হয়। এ জন্য বিনিময় ইন্টারন্যাশনাল (৮২ শান্তিনগর-নয়াপল্টন, ঢাকা) নামে এই হল বুকিং দেয়া হয়। আবেদনে বলা হয়, মালয়েশিয়ান ডেলিগেট কর্তৃক ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ইন্টারভিউ নেয়া হবে।
গত সোমবার দুপুরে এই প্রতিবেদকের সাথে কথা হয় ভাইবা নেয়া দুইজনের সাথে। যারা এটি পরিচালনা করছিলেন। তাদের একজন জানান, যারা মালয়েশিয়ায় যাবে তাদের ওরিয়েন্টেশন চলছে। এটা একটা সেমিনারের মতো। মালয়েশিয়ায় গেলে কী করতে পারবেন আর কী করতে পারবেন না, সুবিধা কী কী থাকছেÑ এসব বিষয়ে। তিনি জানান, উনারা (মালয়েশিয়ান ডেলিগেটস) একটা কাজে বাংলাদেশে এসেছিল। বিনিময় ইন্টারন্যাশনাল যেহেতু এজেন্সি, যেকোনো সময় যেহেতু এজেন্সির মাধ্যমেই লোকজন যাবে। আগাম একটা ওরিয়েন্টেশন করা হচ্ছে। যখন কলিং শুরু হবে, তখন উনারা আবার আসবেন। নতুন করে আবার ইন্টারভিউ নেবেন। তিনি আরো জানান, এই কোম্পানিটি (পিপিএইচ) আমাদের চাহিদাপত্র দেবে। আমরা শুধু প্রাথমিকভাবে তাদের বায়োডাটা রেখে দিচ্ছি। তথ্য নিচ্ছি যে, তারা মালয়েশিয়ায় যাওয়ার যোগ্য কিনা। যোগ্য মনে হলে তাদের আবার ডাকা হবে, পরীক্ষা নেয়া হবে। সেটা জুমের মাধ্যমেও হতে পারে, আবার সরাসরিও হতে পারে। কলিং তো আসলে হয়ে গেছে। এখন আনুষ্ঠানিকতা বাকি। যখন ডিক্লারেশন (কর্মী পাঠানো সরকারি ঘোষণা) হয়ে যাবে, তখন আবার তাদের ডাকব।
ভাইবা পরিচালনা করা এই ব্যক্তি আরো তথ্য জানতে সেখানে উপস্থিত আরেক ব্যক্তিকে দেখিয়ে দেন। সেখানেই কথা হয় মাহমুদ নামের ওই ব্যক্তির সাথে। তার সাথে কথা বলে জানা যায়, তিনি মালয়েশিয়া প্রবাসী। বাড়ি শরীয়তপুরে। মালয়েশিয়ান ডেলিগেটের সাথেই এসেছেন। তিনি জানান, মালয়েশিয়ান কোম্পানি পেপার প্যাকেজিং হাউস (পিপিএইচ) বেশ কিছু লোক নেবে। যদি আগামী মাসের (জুলাই) ১৫ তারিখের মধ্যে ওপেন না হয় তাহলে তারা নেপাল থেকে নেবে। যেহেতু কলিং খোলার সম্ভাবনা আছে বাংলাদেশের। তাই প্রাথমিক কাজ সেরে ফেলছে (বাছাই) তারা। আজকে যারা টিকবে যখন ওপেন হবে, তখন স্বাস্থ্য পরীক্ষাসহ অন্যান্য প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে তাদের নেবে। তিনি আরো বলেন, পিপিএইচ কোম্পানির তিনজন ম্যাডাম এসেছেন। তারা ইন্টারভিউ নিচ্ছেন। আমি তাদের সাথে এসেছি। আর যারা এখানে এসেছেন (ইন্টারভিউ দিতে) তাদের বেশির ভাগেরই আত্মীয়স্বজন ওই কোম্পানিতে কাজ করে।
ডিআরইউতে কথা হয় বগুড়ার সোনাতলার শামসুল হক নামের এক ব্যক্তির সাথে। তিনি বলেন, আমি ১৪ বছর এই কোম্পানিতে ছিলাম। ভালো কোম্পানি। কার্টুন তৈরির কারখানা এটা। আমার ছেলেও সেখানে কাজ করে। আজকে এখানে এসেছি আমার ভাতিজা ও ভাগ্নেকে পাঠানোর জন্য। ভাইবাতে ভাতিজা টেকেনি, ভাতিজা টিকেছে। তবে কত টাকা খরচ হবে তা এখনো জানানো হয়নি বলে জানান তিনি।
সেখানেই কথা হয় ঢাকার ডেমরার আকবর হোসেনের সাথে। এসএসসি পাস আকবর জানান, ইন্টারভিউ দিয়েছি। ইন্টারভিউতে আমার চোখের পরীক্ষা (দৃষ্টিশক্তি ঠিক আছে কিনা), কী কাজ করি, কী কাজ পারি, ইংলিশ জানি কিনা ইত্যাদি জেনেছে তারা। সবগুলোর উত্তর দিতে পেরেছি। আমি টিকেছি জানানো হয়েছে। আমাদের কন্ট্রাক্ট নম্বর রেখে দিয়েছে, পরে ফোন দেবে তারা। তাদের কাছে পাসপোর্ট ফটোকপি, ছবি জমা আছে। তিনি আরো জানান, মালয়েশিয়ায় আমার এক ভাই থাকে। আমার সাথে ১০-১২ জন এসেছে। ইমন নামের একজন তাদের সেখানে ইন্টারভিউতে নিয়ে এসেছেন বলে জানান এই মালয়েশিয়া যেতে ইচ্ছুক তরুণ।
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিবকে ফোন দিলেও রিসিভ করেননি।


আরো সংবাদ



premium cement