২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

করোনা শনাক্তের হারে নতুন রেকর্ড ১ দিনে মৃত্যু ২০

-

করোনা শনাক্তের হারে নতুন রেকর্ড ছুঁয়েছে। তবে মোট নমুনা পরীক্ষা গতকাল আগের দিনের চেয়ে তিন হাজার ১৫৭টি কম ছিল। নমুনা পরীক্ষা কম হলে শতাংশে শনাক্ত কিছুটা বেড়ে যায়। আবার গতকাল সকাল পর্যন্ত দেশে নতুন করে ওমিক্রন সংক্রমণের পর থেকে এই প্রথম এক দিনে ২০ জনের মৃত্যু হয়েছে করোনায়। এর আগে গত ২৫ জানুয়ারি ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। অবশ্য গত বছরের আগস্টের দুই দিন (৫ ও ১০ আগস্ট) দেশে সর্বোচ্চ ২৩০ জনের মৃত্যু হয়েছে। দেশে ২০২০ সালের ৮ মার্চের পর থেকে এই প্রথম গতকাল শুক্রবার সকাল ৮টা পর্যন্ত এর আগের ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে করোনা শনাক্তের হার ৩৩.৩৭ শতাংশে উঠেছে। তবে শতাংশে শনাক্তের হার রেকর্ড স্পর্শ করলেও সংখ্যার দিক থেকে গত ২৭ জানুয়ারির চেয়ে গতকাল শুক্রবার ৩৫৭ কম ছিল। গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত দেশে করোনা শনাক্ত হয়েছে ১৫ হাজার ৪৪০ জন। আগের দিন ২৭ ফেব্রুয়ারি করোনা শনাক্ত হয়েছিল ১৫ হাজার ৮০৭ জনের মধ্যে।
তা সত্ত্বেও চিকিৎসকেরা বলছেন, দেখা যাচ্ছে তিন দিন ধরে সারা দেশে মোট করোনা শনাক্ত ১৫ থেকে ১৬ হাজারের সধ্যে সীমাবদ্ধ রয়েছে। এর মধ্যে ২৫ জানুয়ারি মোট শনাক্ত ১৬ হাজার ৩৩ জনে উঠেছিল। গত তিন দিনের মতো করোনা শনাক্ত সামনের দিনগুলোতে অব্যাহত থাকলে করোনার ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের উল্লম্ফনে লাগাম লেগেছে বলে ধরে নেয়া যাবে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ইতোমধ্যে ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের উচ্চ সংক্রমণ কমতে শুরু করেছে। বাংলাদেশে সামনের সপ্তাহে ওমিক্রনের উচ্চগতি কমে গেলে আশ্চর্য হওয়ার কিছু থাকবে না। গতকাল শুক্রবার সকাল পর্যন্ত এর আগের ২৪ ঘণ্টায় ১৫ হাজার ৪৪০ জন করোনা শনাক্ত হলেও একই সমেয় করোনা থেকে সুস্থ হয়েছেন মাত্র এক হাজার ৩২৬ জন।
গতকাল সারা দেশে মোট ৪৬ হাজার ২৬৮টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছিল। ২০২০ সালের ৮ মার্চের পর থেকে গতকাল পর্যন্ত সারা দেশে মোট ১৭ লাখ ৬২ হাজার ৭৭১ জন করোনা শনাক্ত হয়েছে। দেশে বর্তমানে ৮৬৫টি পরীক্ষাগারের মাধ্যমে করোনা পরীক্ষা করা হয়। বেশির ভাগ পরীক্ষা এখন হচ্ছে র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্টের মাধ্যমে। এই পদ্ধতিতে দেশে ৬৫৩টি ল্যাব রয়েছে এবং নমুনা দেয়ার এক ঘণ্টার মধ্যে এর ফল পাওয়া যায়। এ ছাড়া সর্বাধুনিক আরটি পিসিআর পরীক্ষাগার রয়েছে ১৫৫টি। অবশিষ্ট পরীক্ষাগুলো করা হচ্ছে জিন এক্সপার্ট মেশিনের মাধ্যমে।
গত ডিসেম্বরের প্রথম দিকেও দেশে করোনা শনাক্ত ১ শতাংশের ঘরেই ছিল। তবে গত মাসের দ্বিতীয়ার্ধে এসে সংক্রমণের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা দেয়ার পর থেকে দৈনিক সংক্রমণ বাড়ছে। গত মাসের শেষ দিকে যেখানে দৈনিক রোগী শনাক্ত পাঁচশতের ঘরে ছিল, সেখানে ধারাবাহিকভাবে বেড়ে এ সংখ্যা দুই হাজার ছাড়িয়ে যায় ১০ জানুয়ারি।এরপর থেকে ১০ হাজার ঘর অতিক্রম করেছে ২০ জানুয়ারি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রন শনাক্ত হওয়ার পর থেকে গত ডিসেম্বর থেকে বিশ্বজুড়ে এর সংক্রমণ বাড়ছে। আগের ধরনগুলোর চেয়ে ওমিক্রন দ্রুত ছড়ায়। এর আগে গত বছরের মাঝামাঝি করোনার ডেলটা ভ্যারিয়েন্টে দেশে করোনায় মৃত্যু, শনাক্ত ও শনাক্তের হার বাড়তে বাড়তে সেপ্টেম্বর থেকে কমতে শুরু করে। এর কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, গত বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে দেশে করোনার টিকা দেয়া শুরু হয় এবং এপ্রিলের মধ্যে অনেককে দুই ডোজ টিকা দেয়া শেষ হয়। এরপর ধারাবাহিকভাবে দেশে করোনার টিকা দেয়া অব্যাহত আছে। গত ২৬ জানুয়ারি পর্যন্ত দেশে ৯ কোটি ৫৮ লাখ ৯৫ হাজার ৩০২ জনকে এক ডোজ টিকা দেয়া হয়েছে। একই সময়ে দুই ডোজ টিকা দেয়া হয়েছে ছয় কোটি ৯৯ হাজার ৪১০ জনকে এবং বুস্টার ডোজ দেয়া হয়েছে ১৩ লাখ ৩৮ হাজার ১১৯ জনকে। টিকার যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে করোনা সংক্রমণ কমিয়ে রাখা এবং স্বল্প সময়ের মধ্যে করোনা থেকে সুস্থ হওয়ার মধ্যে। আবার টিকার কারণেই খুব দ্রুত করোনা থেকে সুস্থ হয়ে যাচ্ছে মানুষ।
রাজশাহীতে সংক্রমণ ৭৪.৮৪ শতাংশ
রাজশাহী ব্যুরো জানায়, রাজশাহীতে করোনা সংক্রমণ বেড়েই চলেছে। দেশে ওমিক্রন শনাক্তের পর আগের সব রেকর্ড ভেঙে রাজশাহীতে এক দিনে করোনা সংক্রমণের হার দাঁড়িয়েছে ৭৪ দশমিক ৮৪ শতাংশ। সর্বোচ্চ সংক্রমণের এই দিনে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে করোনায় মৃত্যু হয়েছে আরো দু’জনের।
রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী গণমাধ্যমকে জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালের করোনা ইউনিটে আরো দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে শুক্রবার সকাল ৯টার মধ্যে হাসপাতালের করোনা ইউনিটে তাদের মৃত্যু হয়। এর মধ্যে করোনায় মারা গেছেন একজন। তিনি কুষ্টিয়া জেলার বাসিন্দা। এ ছাড়া করোনা সংক্রমণের উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন একজন। তিনি পাবনার বাসিন্দা।
এ দিকে বৃহস্পতিবার রামেক হাসপাতালের আরটি-পিসিআর ল্যাবে ৯৪ জনের করোনার নমুনা পরীক্ষা হয়। এতে ৫৮ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। আর রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজের আরটি-পিসিআর ল্যাবে ৪৩৫ নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এতে ৩১৭ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। নমুনা পরীক্ষার অনুপাতে করোনা শনাক্তের হার দাঁড়িয়েছে ৭৪ দশমিক ৮৪ শতাংশ; যা করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন শনাক্তের পর এখন পর্যন্ত আগের সব সংক্রমণের রেকর্ড ভেঙেছে। এর আগে গত বুধবার রাজশাহী জেলায় করোনা সংক্রমণের হার ছিল ৬০ দশমিক ৩৯ শতাংশ।


আরো সংবাদ



premium cement