০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`


হাজার ছাড়িয়ে করোনা সংক্রমণ : রাজধানীতেই ৮৩ শতাংশ

ওমিক্রনে কাপড়ের মাস্ক কাজে আসে না
-

প্রায় তিন মাস পর আবারো একদিনে করোনা শনাক্ত এক হাজার ছাড়িয়েছে। গত বুধবারের চেয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার এক দিনে শনাক্ত বেড়েছে ২৪৮ জন। গতকাল ২৪ হাজার ৪৩৫টি নমুনা পরীক্ষা করে ৪.৮৬ শতাংশ অর্থাৎ এক হাজার ৪০ জন করোনা শনাক্ত হয়েছে। এর আগে গত বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর করোনা শনাক্ত হয়েছিল এক হাজার ৭৮ জন। গতকাল করোনা সংক্রমিতদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে সাতজনের। মৃত্যুর দিক থেকে আগের দিনের চেয়ে চারজন বেশি। স্বাস্থ্য অধিদফতরের চিকিৎসকেরা এখনো বলছেন, দেশে সংক্রমণের দিক থেকে এখনো ডেল্টা প্রাধান্য বিস্তার করে আছে। তবে শিগগিরই ওমিক্রন ডেল্টাকে ছড়িয়ে যাবে।
করোনা নতুন করে বৃদ্ধি পেলে রাজধানী ঢাকা শহরই থেকে যাচ্ছে ‘হটস্পট’ হিসেবে। গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় রাজধানীতে ৯৫০ জন করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। গতকাল সংক্রমণের ৮৩.৩৩ শতাংশই রাজধানী ঢাকা শহরে হয়েছে। অতএব, ঢাকাই হতে যাচ্ছে ওমিক্রনের হটস্পট। রাজধানী ঢাকাতে জনসংখ্যা বেশি, এখানে করোনা পরীক্ষার কেন্দ্রও বেশি। সে কারণে রাজধানীতে সংক্রমণ বেশি শনাক্ত হবে এটাই স্বাভাবিক। তবুও রাজধানীতে সংক্রমণ রোধে আরো বেশি জোর দিতে হবে বলে মনে করছেন জনস্বাস্থ্যবিদ এবং সাধারণ চিকিৎসকরা। রাজধানী ছাড়া ঢাকা বিভাগের অন্যান্য জেলায় গতকাল সংক্রমণের সংখ্যা ছিল ২৮। অর্থাৎ ঢাকা বিভাগে মোট শনাক্ত ৯৭৮ জন। এ ছাড়া চট্টগ্রাম বিভাগে ৮৪, রাজশাহী বিভাগে ২৭, খুলনা বিভাগে ১৭, বরিশাল বিভাগে ৪, সিলেট বিভাগে ২২, রংপুর বিভাগে ৪ এবং ময়মনসিংহ বিভাগে সংক্রমিত হয়েছে ৪ জন।
সারা দেশে করোনার জন্য নির্ধারিত হাসপাতালগুলো এখনো খালি। এমনিতেই ওমিক্রনে আক্রান্ত হলে হাসপাতালে যেতে হয় না। কিন্তু একবার যে আক্রান্ত হয় তিনি বারবার আক্রান্ত হতে পারেন। ওমিক্রনের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, তরুণ ও যুবারা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। আবার দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠছে। রোগতত্ত্ব রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এ এস এম আলমগীর জানিয়েছেন, অন্যান্য দেশের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি ওমিক্রনে আক্রান্তদের হাসপাতালে কম আসতে হবে। রোগটিতে দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠার সম্ভাবনা রয়েছে।
ওমিক্রন ঠেকাতে কাপড়ের মাস্ক কার্যকর নয়। বিশেষজ্ঞরা তাদের সর্বশেষ পর্যবেক্ষণ শেষে বলছেন কাপড়ের মাস্ক নয় ব্যবহার করতে হবে এন-৯৫, কেএন-৯৫, কেএফ-৯৪ এবং অবশ্যই তিনস্তরের সার্জিক্যাল মাস্ক। এই তিন ধরনের মাস্ক ওমিক্রনের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে। ইউরোপের দেশ জার্মানি ও অস্ট্রিয়ার কর্তৃপক্ষ বাইরে বেরুলে কাপড়ের মাস্ক পরতে নিষেধ করেছে। স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির সংক্রামক রোগের চিকিৎসক ড. আবরার খান এনপিআর সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, এই ফেস মাস্কগুলো ইলেকট্রোসটেকি চার্জের মাধ্যমে তৈরি হয়েছে। ইলেকট্রোসটেকি চার্জ ভাইরাসকে টেনে ধরে রাখে। ফলে ভাইরাস শ্বাস নেয়ার সময় মুখের ভেতরে ঢুকতে পারে না। তবে ডিউক ইউনিভার্সিটির অপর এক গবেষণায় বলা হয় ৯৯ শতাংশ ভাইরাস প্রতিরোধক হচ্ছে এন-৯৫ মাস্ক, এরপরই রয়েছে সার্জিক্যাল মাস্ক। জর্জ ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটির মিলেন্ক ইনস্টিটিউট স্কুল অব পাবলিক হেলথের ভিজিটিং প্রফেসর এবং ইমার্জেন্সি চিকিৎসক লিনা ওয়েন সিএনএনকে বলেছেন, নিদেনপক্ষে সার্জিক্যাল মাস্কের উপরে কাপড়ের মাস্ক পরতে হবে। আমাদের কমপক্ষে তিনস্তরের সার্জিক্যাল মাস্ক পরতে হবে। কিন্তু শুধু কাপড়ের মাস্ক পরা যাবে না। তিনি বলেন, সার্জিক্যাল মাস্ক ভালো, কারণ এটা সবাই কিনতে পারে।
চট্টগ্রামে করোনায় একজনের মৃত্যু
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, চট্টগ্রামে দীর্ঘ দিন পর করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় একজনের মৃত্যু হয়েছে। গত মাসের শুরুর দিকে একজনের মৃত্যুর পর এটাই প্রথম মৃত্যু। এ দিকে আগের দিনের মতোই বুধবারও চট্টগ্রামে ৫৩ জন আক্রান্ত হয়েছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামের ১২ ল্যাবে এক হাজার ৭৫০ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এতে ৫৩ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হন। সংক্রমণের হার ৩ দশমিক ০২ শতাংশ। চট্টগ্রামে এ পর্যন্ত শনাক্তের সংখ্যা এক লাখ দুই হাজার ৮২২ জন। মৃতের সংখ্যা বেড়ে হলো এক হাজার ৩৩৩ জন।


আরো সংবাদ



premium cement