২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`
দৈনিক ৫৫ লাখ কপি ছাপার টার্গেট

বই উৎসব নিয়ে শঙ্কা কাটছে না

-

দেরিতে ছাড়ার কার্যাদেশ দেয়ায় এবারের বই উৎসব নিয়ে শঙ্কা কাটছে না। নির্ধারিত সময়ে জেলা-উপজেলায় বই পৌঁছে দিতে বিরামহীন ঘাম ঝরাচ্ছে ছাপাখানার শ্রমিকরা। আগামী ২৫ ডিসেম্বরের মধ্যে চাহিদার সব বই উপজেলায় পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে দৈনিক ৫৫ লাখ কপি বই ছাপার টার্গেট নিয়েছে কার্যাদেশ পাওয়া ছাপাখানাগুলো। এর ব্যতয় ঘটলে ১ জানুয়ারির আগে ৩০ শতাংশ বই ছাপা নিয়ে শঙ্কা রয়েই যাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এ দিকে বই ছাপার কাজ তদারকিতে রয়েছেন এনসিটিবি’র এমন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ২০২২ শিক্ষাবর্ষের প্রাথমিক স্তরের বিনামূল্যের পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ ও সরবরাহ নিয়ে কোনো অনিশ্চয়তা নেই। তবে যেহেতু নির্ধারিত সময়ের অনেক পরে মাধ্যমিক স্তরের বই ছাপার কার্যাদেশ দেয়া হয়েছে সে ক্ষেত্রে এখানে কিছুটা অনিশ্চয়তা রয়েছে। তারপরেও ছাপাখানাগুলো যেভাবে দিন-রাত কাজ করছে তাতে মনে হয় না কোনো সমস্যা হবে।
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) সূত্র জানায়, প্রাথমিকের পাঠ্যবই ছাপার কাজ আগেই শুরু হয়েছিল। তাই প্রাথমিক ও ইবতেদায়ি পর্যায়ের পাঠ্যবই নিয়ে কোনো সঙ্কট হবে না। ইতোমধ্যে আট কোটির বেশি বই ছাপার কাজ শেষ হয়েছে। বেশির ভাগ বই উপজেলায় পৌঁছেও গেছে। আশা করা হচ্ছে, আগামী ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে সব বই পৌঁছে যাবে। অপর দিকে গত শুক্রবার পর্যন্ত মাধ্যমিক স্তরের পাঠ্যবই ছাপা হয়েছে মাত্র ৬৫ শতাংশ এবং মাঠপর্যায়ে পৌঁছেছে মাত্র ৪৫ শতাংশ।
সূত্র আরো জানায়, মাধ্যমিকের ২৪ কোটি বই ছাপার চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে গত ৮ নভেম্বর। বিগত বছরগুলোর কাজের ধারাবাহিকতায় দেখা গেছে, নির্ধারিত সময়ের অনেক পরে এ বছর কাজ শুরু হওয়ায় ছাপাখানাগুলোতে এখন দম ফেলার সময় নেই। সাধারণ হিসাবেই দেখা গেছে, মাধ্যমিকের ২৪ কোটি ৭১ লাখ ৬৩ হাজার ২৫৬ কপি পাঠ্যবই ছাপতে সময়ে দেয়া হয়েছে ২৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত। সময়ের হিসাবে ৮ নভেস্বর থেকে ২৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত এই ৪৫ দিনে সব বই ছাপতে হলে প্রতিদিন গড়ে ছাপতে হবে ৫৪ লাখ ৯২ হাজার ২৫১ কপি বই। আর সেই টার্গেট পূরণ করতেই দিন-রাত কাজ হচ্ছে ছাপাখানাগুলোতে।
তথ্যমতে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও ইবতেদায়ির বিনামূল্যের সব বই ছাপতে গত দুই মাস ধরেই দেশের প্রায় ৪০০ ছাপাখানায় নতুন বছরের জন্য ৩৪ কোটি ৭০ লাখ ১৬ হাজার ২৭৭টি বই ছাপার কাজ চলছে। সাধারণত অক্টোবরের মধ্যে ছাপাখানাগুলোর সাথে চুক্তি হলেও এবার (গ্রাফিক্স) তৃতীয় থেকে পঞ্চম শ্রেণীর বই ছাপাতে চুক্তি হয় ১৮ অক্টোবর। প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর চুক্তি হয় ২৪ অক্টোবর। স্কুলের বই ছাপতে সাধারণত তিন মাস সময় পায় ছাপখানাগুলো। বাংলাদেশ মুদ্রণশিল্প সমিতির নেতারা বলছেন, এবার মাসখানেক কম সময় পাওয়ায় জানুয়ারির মধ্যে ৭০ ভাগের বেশি বই ছাপা সম্ভব হবে না। অর্থাৎ আমরা শত চেষ্টা করেও ৩০ শতাংশ বই যথাসময়ে সরবরাহ করতে পারব কি না তা নিয়ে সংশয় রয়েই যাচ্ছে।
এ বিষয়ে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) সদস্য (পাঠ্যপুস্তক) অধ্যাপক মো: ফরহাদুল ইসলাম গতকাল নয়া দিগন্তকে বলেন, আমরা চেষ্টা করছি যথাসময়ে শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দিতে। ইতোমধ্যে প্রাথমিকের বই ছাপা নিয়ে কোনো চিন্তা নেই। কেননা অধিকাংশ উপজেলায় বই পৌঁছে গেছে। এখনো হাতে যে সময় আছে তাতে আশা করছি, বাকি উপজেলাতেও ঠিক সময়েই সব বই পৌঁছে যাবে। প্রাথমিকের বই নিয়ে কোনো সমস্যা নেই। যথাসময়ে শতভাগ বই পৌঁছে যাবে।
বাংলাদেশ মুদ্রণশিল্প সমিতির জেনারেল সেক্রেটারি জহুরুল ইসলাম বলেন, আমরা আন্তরিকভাবে চেষ্টা করছি আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে সব বই ছাপার কাজ শেষ করতে; কিন্তু আমাদেরও সীমাবদ্ধতা আছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ৭০ ভাগের বেশি ছাপা সম্ভব হবে বলে মনে করি না। তারপরেও আমরা প্রেস শ্রমিকদের ওভারটাইম দিয়ে কাজ করাচ্ছি। পাঠ্যবই ছাড়া অন্য সব কাজ আগামী এক মাস বন্ধ রাখারও প্রেস মালিকদের নির্দেশনা দিয়েছি।
সম্প্রতি সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী ডা: দীপু মনির কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল এবারের নতুন বছরের পাঠ্যপুস্তক উৎসবের প্রস্তুতি নিয়ে। বিশেষ করে যথাসময়ে সব স্কুলে নতুন বই পৌঁছে যাবে কি না? উত্তরে মন্ত্রী বলেছিলেন, প্রতি বছর নতুন বই যথাসময়ে পাওয়া নিয়ে সবার মধ্যেই একটি শঙ্কা থাকে; কিন্তু শেষ পর্যন্ত দেখা যায় সব শঙ্কা পেছনে ফেলে শিক্ষার্থীরা ঠিক সময়েই বছরের প্রথম দিনে বই হাতে পায়। এ বছরও কোনো ব্যতিক্রম হবে না। তবে করোনার কারণে এ বছরও হয়তো বই উৎসব আমরা করতে পারব না। তবে সব শিক্ষার্থীর হাতে বছরের প্রথম দিনেই নতুন বই তুলে দিতে পারব।
উল্লেখ্য, ২০২২ শিক্ষাবর্ষে এবার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের জন্য মোট ৩৪ কোটি ৭০ লাখ ২২ হাজার ১৩০ কপি পাঠ্যবই ছাপা হচ্ছে। এরমধ্যে প্রাথমিক স্তরের মোট বই ছাপা হচ্ছে ৯ কোটি ৯৮ লাখ ৫৮ হাজার ৮৭৪ কপি। আর মাধ্যমিক স্তরের জন্য মোট ২৪ কোটি ৭১ লাখ ৬৩ হাজার ২৫৬ হাজার কপি পাঠ্যবই ছাপা হচ্ছে।


আরো সংবাদ



premium cement