২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

সরকার দেশকে দুর্নীতিতে পরিপূর্ণ করে ফেলেছে: মির্জা ফখরুল

-

সরকার বাংলাদেশেকে দুর্নীতিতে পরিপূর্ণ করে ফেলেছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থা তুলে ধরে গতকাল শুক্রবার বিকালে এক ভার্চুয়াল আলোচনায় এই অভিযোগ করেন তিনি।
মির্জা ফখরুল বলেন, ব্যাংকিং সেক্টরকে ধ্বংস করে দিয়েছে এই সরকার, শেয়ার মার্কেটকেও ধ্বংস করে দিয়েছে তারা। মানিলন্ডারিং এমন পর্যায় গিয়ে পৌঁছেছে যে, এখন সরকার নিজে বলছে যে, এটা নিয়ন্ত্রণ করার দরকার। দুর্ভাগ্য আমাদের, এই কয়েক দিন আগে দেখলাম দুদকের যিনি সাবেক চেয়ারম্যান ছিলেন তার নামেও দুর্নীতির অভিযোগ চলে এসছে। গোটা দেশ এখন দুর্নীতিতে পরিপূর্ণ হয়ে গেছে এবং আওয়ামী লীগের সরকার এই অবস্থা তৈরি করেছে। সেই ১৯৭৫ সালে যে উদ্দেশ্য ছিল যে, বাংলাদেশকে একটা নতজানু দেশ পরিণত করবে, পরনির্ভরশীল অর্থনীতি হিসেবে তৈরি করবে সেই উদ্দেশ্যে তারা (সরকার) কাজ করে যাচ্ছে।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আজ সরকার কী করেছে? একটা মিথ তৈরি করতে চায় তারা। মিথটা এই যে, সাউথ-ইস্ট এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে উন্নয়নের রোল মডেল বাংলাদেশ। এটা একটা মিথ ছাড়া কিছু না। তারা গোয়েবলসীয় পদ্ধতিতে প্রচার প্রচারণার মধ্য দিয়ে সেই কথাটা প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, বাস্তব অবস্থাটা হচ্ছে, এখন এদেশে প্রায় ছয় কোটি লোক দারিদ্র্য সীমার নিচে। আজকে করোনার আঘাত সহ্য করতে পারছে না বাংলাদেশ, আজকে আরো দুই কোটি লোক নতুন করে দরিদ্র হয়ে গেছে। একদিকে কিছু লোক তারা লুটের মধ্য, দুর্নীতির মধ্য দিয়ে হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক হয়ে যাচ্ছে, অন্যদিকে দরিদ্র আরো দরিদ্র হয়ে যাচ্ছে।
শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমনের অর্থনৈতিক সংস্কারের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, আমাদেরকে জিয়াউর রহমান পথ অনুসরণ করে প্রথমে আমাদের দলকে সুসংগঠিত করতে হবে, জনগণকে সঙ্গে নিতে হবে এবং সমস্ত গণতান্ত্রিক শক্তিগুলোকে একীভূত করে সেই গণতন্ত্রকে ছিনিয়ে আনতে হবে যে গণতন্ত্র আমাদের কাছ থেকে হারিয়ে গেছে। গণতন্ত্রের মাতা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া কারারুদ্ধ আছেন তাকে মুক্ত করতে হবে, এদেশের ১৮ কোটি মানুষকে মুক্ত করতে হবে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের চিন্তাভাবনা থেকে।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বাংলাদেশের ৫০ বছর হয়ে গেল। এই ৫০ বছরে এখন পর্যন্ত আমাদের বর্তমানে যারা দায়িত্বে রয়েছেন, জোর করে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন তারা অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশকে পরনির্ভরশীল অর্থনীতিতে পরিণত করতে চাচ্ছেন। একজন ব্যক্তি, একটা পরিবার এবং একটা দলকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য আজকে তারা সমগ্র দেশকে গ্রাস করে ফেলছেন। তখনো (১৯৭২-৭৫ সাল) ঠিক সেইভাবে গ্রাস করে ফেলা হয়েছিল। মানুষজন চোখের সামনে দেখল যে, তারা সুপরিকল্পিতভাবে লুটপাটের মধ্য দিয়ে এদেশটাকে একটা ভাগাড়ে পরিণত করেছিল- এই কথাগুলো বললে খুব বাড়িয়ে বলা হবে না। অত্যন্ত বড় নেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী। সেই সময়ে তিনি বলেছিলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নামটা পরিবর্তন করে তাকে নিখিল বাংলাদেশ লুটপাট সমিতি নাম দেয়া উচিত। কারণ তারা এই দেশের মানুষের আশা-আকাক্সক্ষাকে ধূলিসাৎ করে দিয়েছিল। ব্যক্তিখাতের বিকাশের পুরো প্রক্রিয়াটা জিয়াউর রহমানের অবদান বলে মন্তব্য করেন বিএনপি মহাসচিব।
বিএনপির স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী জাতীয় উদযাপন কমিটির উদ্যোগে বছরব্যাপী অনুষ্ঠানমালার অংশ হিসেবে ব্যক্তিখাত বিকাশে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ও মুক্তবাজার অর্থনীতি শীর্ষক এই আলোচনা সভা হয়। এতে মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন।
জাতীয় উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব আবদুস সালামের সঞ্চালনায় আলোচনায় দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য জমিরউদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বরচন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক খন্দকার মোস্তাহিদুর রহমান বক্তব্য রাখেন।


আরো সংবাদ



premium cement