০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`


মুনাফার পূর্বানুমোদন নিতে ব্যাংকগুলোর শেষ মুহূর্তে দৌড়ঝাঁপ

-

প্রতি বছরই জুনের মধ্যে বার্ষিক মুনাফা ঘোষণা করে থাকে ব্যাংকগুলো। এ জন্য নিরীক্ষিত বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদন চূড়ান্ত করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পূর্বানুমোদন নিতে হয়। কিন্তু নির্ধারিত সময় শেষ হতে চললেও এখনো পাঁচটি ব্যাংক তাদের প্রতিবেদন চূড়ান্ত করতে পারেনি। শেষ মুহূর্তে এসে মুনাফা ঘোষণার পূর্বানুমোদন নিতে ব্যাংকগুলো এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংকে এসে দৌড়ঝাঁপ করছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ইতোমধ্যে বেশির ভাগ ব্যাংক পূর্বানুমোদন নিয়ে তাদের বার্ষিক মুনাফা ঘোষণা করেছে। তবে এখনো বেশ কয়েকটি ব্যাংক বার্ষিক মুনাফা ঘোষণা করতে পারেনি। এর মধ্যে পাঁচটি ব্যাংক তাদের নিরীক্ষিত প্রতিবেদনই চূড়ান্ত করেনি।
জানা গেছে, ব্যাংকগুলো বছরের শুরুতেই তাদের আগের বছরের পরিচালন মুনাফা ঘোষণা করে। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংক ও তালিকাবহির্ভূত উভয় ব্যাংকই তাদের এ প্রকৃত মুনাফা ঘোষণার আগে করপোরেট ট্যাক্সসহ অন্যান্য কর ও প্রভিশন সংরক্ষণ করা হয়। প্রকৃত মুনাফা ঘোষণা করার আগে তাদের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন চূড়ান্ত করতে হয়। উভয় ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন নিতে হয়। জানা গেছে, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংক রয়েছে ৩১টি। ৯টি বিদেশী ব্যাংক বাদে বাকি সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকগুলোও একইভাবে বার্ষিক মুনাফা ঘোষণা করে থাকে।
ব্যাংক কোম্পানি আইনের ৪০ ধারায় বলা হয়েছে, প্রতিটি তফসিলি ব্যাংককে তাদের বার্ষিক নিরীক্ষা প্রতিবেদন পরের বছরের প্রথম দুই মাসে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে দাখিল করতে হবে। কোনো ব্যাংক এ সময়ের মধ্যে বার্ষিক প্রতিবেদন চূড়ান্ত করতে না পারলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ব্যাংক আরো দুই মাস সময় বাড়িয়ে দিতে পারে। আইনের এ বাধ্যবাধকতা অনুসারে ২০২০ সালের ব্যাংকগুলোর বার্ষিক নিরীক্ষা প্রতিবেদন ৩০ এপ্রিলের মধ্যে দাখিলের কথা ছিল। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হওয়ায় বেশির ভাগ ব্যাংক বর্ধিত সময়েও তাদের হিসাব চূড়ান্ত করতে পারেনি। বর্ধিত সময়ে ৬০টি ব্যাংকের মধ্যে মাত্র ২০টি তাদের বার্ষিক প্রতিবেদন বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে দাখিল করতে পেরেছিল। বাধ্য হয়ে আইনের লঙ্ঘন ঠেকাতে প্রজ্ঞাপন জারি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। প্রজ্ঞাপনে বার্ষিক প্রতিবেদন জমা দেয়ার সময় দুই মাস বাড়িয়ে দেয়া হয়। এক প্রজ্ঞাপনে কেন্দ্রীয় ব্যাংক তখন বলে, সরকারের সাথে পরামর্শক্রমে ব্যাংক কোম্পানি আইনের ৪০ ধারার বিধানের বাধ্যবাধকতা হতে অব্যাহতি প্রদান করা হয়। একই সাথে ২০২০ সালের বার্ষিক নিরীক্ষা প্রতিবেদন বাংলাদেশ ব্যাংকে দাখিলের সময়সীমা ৩০ জুন পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়। সেই ৩০ জুন শেষ হতে আর মাত্র ১০ দিন বাকি রয়েছে।
এদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিধিনিষেধের কারণে সব ব্যাংকই সমান লভ্যাংশ ঘোষণা করতে পারবে না। এ জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ব্যাংকগুলোর জন্য বিধিনিষেধ দেয়া হয়েছিল। এর মধ্যে যেসব ব্যাংকের ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের বিপরীতে ১৫ শতাংশের ওপর মূলধন সংরক্ষণ করতে পেরেছে এবং বাকিতে প্রভিশন সংরক্ষণ করেনি তাদেরকে ৩৫ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা করার অনুমোদন দেয়া হয়। এর মধ্যে সাড়ে ১৭ শতাংশ নগদে এবং সাড়ে ১৭ শতাংশ বোনাস শেয়ার রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ইতোমধ্যে বাকিতে প্রভিশন সংরক্ষণ করেনি এমন আটটি ব্যাংক তাদের শেয়ারহোল্ডারদের মধ্যে মুনাফা বণ্টনের জন্য পূর্বানুমোদন নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছ থেকে।
আবার কোনো ব্যাংক সাড়ে ১৩ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশ পর্যন্ত মূলধন সংরক্ষণ করতে পারলে সর্বোচ্চ সাড়ে ১২ শতাংশ নগদসহ ২৫ শতাংশ মূলধন লভ্যাংশ বিতরণ করতে পারবে। একই সাথে যেসব ব্যাংক ১১ দশমিক ৮৭৫ শতাংশ মূলধন সংরক্ষণ করতে পেরেছে তারা সাড়ে ৭ শতাংশ নগদসহ ১৫ শতাংশ লভ্যাংশ বিতরণ করতে পারবে। যেখানে আগের বছরে সমপরিমাণ মুনাফা বণ্টন করতে মূলধন সংরক্ষণ করতে হয়েছে সোয়া ১১ শতাংশ থেকে সাড়ে ১২ শতাংশ। তবে যেসব ব্যাংক ইতোমধ্যে বাকিতে প্রভিশন সংরক্ষণের সুযোগ নিয়েছে, তারা সাড়ে ১২ শতাংশের বেশি মূলধন সংরক্ষণ করতে পারলে তারা বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন নিয়ে শেয়ারহোল্ডারদের ১২ শতাংশ লভ্যাংশ বিতরণ করতে পারবে। আর যেসব ব্যাংক ইতোমধ্যে বাকিতে প্রভিশন সংরক্ষণের সুবিধা নিয়েছে এবং তারা যদি ১১ দশমিক ৮৭৫ শতাংশ থেকে সোয়া ১২ শতাংশ মূলধন সংরক্ষণ করতে পারে তাহলে তারা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন নিয়ে সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ নগদসহ ১০ শতাংশ মুনাফা বণ্টন করতে পারবে। একই সাথে যেসব ব্যাংক বাকিতে প্রভিশন সংরক্ষণের সুবিধা নিয়েছে এবং তারা যদি ১০ দশমিক ৬২৫ শতাংশ থেকে ১১ দশমিক ৮৭৫ শতাংশ মূলধন সংরক্ষণ করতে পারে তাহলে তারা মাত্র ৫ শতাংশ স্টক ডিভিডেন্ট বণ্টন করতে পারবে। এ নির্দেশনা ব্যাংক কোম্পানি আইন ১৯৯১ এর ৪৫ ধারার ক্ষমতা বলে ৩১ ডিসেম্বর সমাপ্ত বছরের জন্য ব্যাংকগুলোকে মুনাফা বণ্টনের অনুমোদন দেয়া হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সূত্র জানিয়েছে, ইতোমধ্যে সবল ব্যাংকগুলো মুনাফা ঘোষণার পূর্বানুমোদন নিলেও দুর্বল ব্যাংকগুলোর অনেকেই এখনো অনুমোদন নিতে পারেনি। এর মধ্যে পাঁচটি ব্যাংক তাদের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনই চূড়ান্ত করতে পারেনি। যারা প্রতিবেদন চূড়ান্ত করতে পেরেছে শেষ মুহূর্তে এসে তারা কেন্দ্রীয় ব্যাংকে এসে মুনাফা ঘোষণার অনুমোদন নিতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছে। নির্ধারিত সময়ে মুনাফা ঘোষণা না করলেও যে করেই হোক নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন ৩০ জুনের মধ্যেই সম্পন্ন করতে হবে। অন্যথায় ব্যাংকগুলোর জরিমানা গুনতে হবে।


আরো সংবাদ



premium cement