২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

দেশে ৩৫ দিনে সর্বোচ্চ মৃত্যু

শনাক্তের হার ১৩ শতাংশ
-

সীমান্তবর্তী জেলাগুলোর পাশাপাশি রাজধানীতে সংক্রমণ বৃদ্ধির মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আরো ৪৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। নতুন আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন দুই হাজার ৪৩৬ জন। এ নিয়ে মোট মৃত্যু হয়েছে ১৩ হাজার ১১৮ জনের। সব মিলিয়ে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে আট লাখ ২৬ হাজার ৯২২ জনে। সর্বশেষ মৃত ৪৭ জনের মধ্যে পুরুষ ৩২ ও নারী ১৫ জন। এর আগে গত ৯ মে দেশে করোনায় এই সংখ্যার চেয়ে বেশি মারা যান ৫৬ জন।
গতকাল রোববার বিকেলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা: নাছিমা সুলতানা স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। এতে বলা হয়, ঢাকা সিটিসহ দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ও বাড়িতে উপসর্গবিহীন রোগীসহ গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন দুই হাজার ২৪২ জন। এ পর্যন্ত মোট সুস্থ হয়েছেন সাত লাখ ৬৬ হাজার ২৬৬ জন। সারা দেশে সরকারি ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ৫১২টি ল্যাবে নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা হয়েছে। এর মধ্যে আরটি-পিসিআর ল্যাব ১৩২টি, জিন এক্সপার্ট ৪৬টি, র্যাপিড অ্যান্টিজেন ৩৩৪টি। এসব ল্যাবে ২৪ ঘণ্টায় নমুনা সংগ্রহ হয়েছে ১৮ হাজার ৪৭৩টি। মোট নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ১৮ হাজার ৭৪৯টি। এ পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ৬১ লাখ ৭৫ হাজার ১১২টি।
এতে আরো জানানো হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষায় শনাক্তের হার ১২ দশমিক ৯৯ শতাংশ। এ পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৩৯ শতাংশ এবং শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৯২ দশমিক ৬৬ এবং শনাক্ত বিবেচনায় মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৫৯ শতাংশ। এ ছাড়া মৃত ৪৭ জনের মধ্যে ঢাকা বিভাগে ১৫ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে নয়জন, রাজশাহী বিভাগে ছয়জন, খুলনা বিভাগে আটজন, রংপুর বিভাগে চারজন, ময়মনসিংহ বিভাগের দুইজন, সিলেট বিভাগে দুইজন ও বরিশাল বিভাগে একজন রয়েছেন। এদের মধ্যে সরকারি হাসপাতালে মারা গেছেন ৪২ জন, বেসরকারি হাসপাতালে তিনজন ও বাড়িতে দুইজন রয়েছেন।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশনে এসেছেন এক হাজার ১৩২ জন ও ছাড় পেয়েছেন ৪৬৯ জন। এ পর্যন্ত আইসোলেশনে এসেছেন এক লাখ ৪৬ হাজার ৭৮৭ জন। ছাড়পত্র নিয়েছেন এক লাখ ২২ হাজার ১৬৯ জন। বর্তমানে আইসোলেশনে আছেন ২৪ হাজার ৬১৮ জন।
চুয়াডাঙ্গা সংবাদদাতা জানান, চুয়াডাঙ্গায় একদিনে আরো ৩৭ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। গতকাল সকালে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ এ তথ্য জানায়। নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্তের হার ৬৬ শতাংশ। এদিকে নতুন আক্রান্ত ৩৭ জনের মধ্যে দামুড়হুদা উপজেলারই ২০ জন। এ ছাড়া চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার দুই, আলমডাঙ্গার তিন ও জীবননগরের ১২ জন রয়েছে। আক্রান্তদের বয়স ২১ থেকে ৭৫ বছরের মধ্যে। এ নিয়ে জেলায় মোট করোনা আক্রান্ত হয়েছে দুই হাজার ২২২ জন। জানা যায়, গত ৯ জুন ৮০টি নমুনা পরীক্ষায় ৩৭ জনের ফলাফল পজিটিভ আসে, শনাক্তের হার ছিল ৪৬.২৫ শতাংশ। গত শুক্রবার ৩৯ জনে ১০ জন আক্রান্ত হয়, শনাক্তের হার কমে ২৩ শতাংশে দাঁড়ায়। এদিকে গতকাল ৫৬টি নমুনা পরীক্ষায় ৩৭ জনের ফলাফল পজিটিভ এসেছে। এতে জেলায় শনাক্তের হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৬ শতাংশে।
চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জন অফিসের সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী জেলা থেকে এ পর্যন্ত নমুনা সংগ্রহ ১০ হাজার ৯৫৪টি, ফলাফল ১০ হাজার ৫৩১টির, পজিটিভ দুই হাজার ২২২ জন। এখন পর্যন্ত জেলায় ২৬৫ জন করোনা রোগী চিকিৎসাধীন আছেন। আক্রান্তদের মধ্যে বর্তমানে ২২৪ জন হোম আইসোলেশনে আছেন। প্রাতিষ্ঠানিক আইসোলেশনে আছেন সদর উপজেলার ১৪ জন।
সাতক্ষীরা সংবাদদাতা জানান, করোনায় আক্রান্ত ও উপসর্গ নিয়ে মাত্র সাড়ে ৮ ঘণ্টার ব্যবধানে সাতক্ষীরা মেডিক্যাল কলেজ ও সদর হাসপাতালে চারজনের মৃত্যু হয়েছে। শনিবার রাত সাড়ে ৮টা থেকে রোববার ভোর ৫টার মধ্যে তাদের মৃত্যু হয়। এদের মধ্যে করোনা আক্রান্ত হয়ে দুই ও উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন দুইজন। মৃত ব্যক্তিরা হলেন, করোনা আক্রান্ত যশোরের কেশবপুর উপজেলার সাগরদাড়ি গ্রামের জনাব আলী সানার ছেলে ইসমাইল হোসেন (৪৫) ও সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ধুলিহর ইউনিয়নের ভালুকা চাঁদপুর গ্রামের মৃত দলিল উদ্দিনের ছেলে আব্দুর রহিম (৮৫) এবং উপসর্গ নিয়ে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ফিংড়ী ইউনিয়নের ফিংড়ী গ্রামের মৃত নুর আলীর ছেলে নজরুল ইসলাম (৭০) ও আশাশুনি উপজেলার শোভনালী ইউনিয়নের শোভানালী গ্রামের মৃত গফ্ফার আলী গাজীর ছেলে মুক্তার আলী গাজী (৬৫)। সদর হাসপাতালের ডা: ফয়সাল আহমেদ এ তথ্য জানান।
এদিকে সাতক্ষীরায় করোনা সংক্রমণের হার ৫০ শতাংশের নিচে নেমেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আরো ৪৪ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। রোববার সাতক্ষীরা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আরটি পিসিআর ল্যাবে ৯২টি নমুনা পরীক্ষা করে ৪৪ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের হার ৪৭ দশমিক ৮২ শতাংশ। এর আগের দিন শনিবার সংক্রমণের হার ছিল ৬৪ দশমিক ২০ শতাংশ।
সাতক্ষীরায় দ্বিতীয় মেয়াদের লকডাউনের দ্বিতীয় দিন পার হয়েছে কিছুটা ঢিলেঢালা ভাবে। সকাল থেকে পুলিশ শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে ব্যারিকেড বসিয়ে মানুষ ও যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা চেষ্টা করেছে। তবে অন্য দিনের তুলনায় রোববার কিছুটা গা ছাড়া ভাব লক্ষ্য করা গেছে। সাতক্ষীরা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা: কুদরত-ই-খোদা জানান, মেডিক্যালে কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটের শয্যা সংখ্যা বাড়িয়ে ১৫০ করা হয়েছে। রোববার দুপুর পর্যন্ত সেখানে ১৩৬ জন রোগী ভর্তি ছিল। এ ছাড়া আইসিইউ ৮টি বেডের মধ্যে পাঁচটি করোনা পজেটিভ ও বাকি তিনটিতে সাসপেকটিভ রোগী ভর্তি রয়েছে।
রাজশাহী ব্যুরো জানায়, করোনাভাইরাসে ও উপসর্গে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এক দিনের ব্যবধানে আবারো বেড়েছে মৃত্যুর সংখ্যা। গত ২৪ ঘণ্টায় রামেক হাসপাতালে আরো ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর আগের ২৪ ঘণ্টায় চারজনের মৃত্যু হয়েছিল। এর আগে গত ৪ জুন সর্বোচ্চ ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছিল। গতকাল সকালে রামেক হাসপাতালের উপপরিচালক ডা: সাইফুল ফেরদৌস সাংবাদিকদের এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় রামেক হাসপাতালে মারা যাওয়া ১৩ জনের মধ্যে ছয়জন করোনা পজিটিভ ছিলেন। অন্য সাতজন মারা গেছেন করোনা উপসর্গ নিয়ে। করোনা পজিটিভ হয়ে মারা যাওয়া পাঁচজনের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জে ও একজনের বাড়ি নওগাঁয়। এ ছাড়া হাসপাতালে করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া সাতজন রোগীর মধ্যে দুইজনের বাড়ি রাজশাহীতে, একজনের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জে, একজনের বাড়ি নাটোরে, নওগাঁয় দুইজন এবং কুষ্টিয়ার রয়েছেন একজন।
ডা: সাইফুল ফেরদৌস আরো বলেন, চলতি মাসের প্রথম ১৩ দিনে রামেক হাসপাতালের করোনা ইউনিটে মারা গেছেন ১২৪ জন। এর মধ্যে ৭০ জনই মারা গেছেন শনাক্ত হওয়ার পর। বাকিরা উপসর্গ নিয়ে মারা যান। এ ছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা ইউনিটে ভর্তি হয়েছেন ৪২ জন। রোববার সকাল ৬টা পর্যন্ত করোনা ওয়ার্ডে ভর্তি আছেন ২৯৪ জন। অথচ শয্যা সংখ্যা ২৭১টি। অর্থাৎ ধারণক্ষমতার বেশিসংখ্যাক রোগী বর্তমানে ভর্তি রয়েছেন।
টাঙ্গাইল সংবাদদাতা জানান, টাঙ্গাইলে গত ২৪ ঘণ্টায় তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। তারা টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। তাদের দু’জনের বাড়ি দেলদুয়ার এবং একজনের বাড়ি কালিহাতী উপজেলায়। এ নিয়ে জেলায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেলেন ৯৫ জন। এ ছাড়া জেলায় নতুন করে ৭১ জনের নমুনা পরীক্ষায় ২৩ জনের দেহে পাওয়া গেছে এ ভাইরাস। নতুন আক্রান্তদের মধ্যে ঘাটাইলে ১০ জন, দেলদুয়ারে সাতজন, কালিহাতীতে পাঁচজন ও গোপালপুরে একজন রয়েছেন। এ নিয়ে রোববার সকাল পর্যন্ত জেলায় করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল পাঁচ হাজার ৪৫৫ জনে।
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, চট্টগ্রামে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন আরো দুইজন। একই সময়ে নতুন ৬৭ জনের শরীরে ভাইরাস শনাক্ত হয়। সংক্রমণ হার ৯ দশমিক ০৪ শতাংশ। গতকাল রোববার চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন অফিস থেকে করোনা সংক্রান্ত বুলেটিনে এমন তথ্য দিয়েছে। বুলেটিনে দেখা যায়, নগরীর ছয়টি ও কক্সবাজার মেডিক্যাল কলেজ ল্যাবে চট্টগ্রামের ৭৪১ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। নতুন শনাক্ত ৬৭ জনের মধ্যে শহরের বাসিন্দা ৪৯ জন এবং পাঁচ উপজেলার ১৮ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া দুইজনসহ মোট করোনায় মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬৪২ জন হয়েছে।
নড়াইল সংবাদদাতা জানান, নড়াইলের কয়েকটি এলাকায় গত শনিবার সন্ধ্যা থেকে এক সপ্তাহের লকডাউন শুরু হয়েছে। প্রতিদিন সন্ধ্যা ৬টা থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত এই লকডাউন চলবে। লকডাউনের আওতাভুক্ত এলাকার মধ্যে রয়েছেÑ নড়াইল পৌর এলাকা, নড়াইল সদর উপজেলার কলোড়া ও সিঙ্গাশোলপুর ইউনিয়ন এবং লোহাগড়া উপজেলা সদরের বাজার এলাকা ও শালনগর ইউনিয়ন। আগামী ১৯ জুন পর্যন্ত এ লকডাউন চলবে। করোনাভাইরাস প্রতিরোধসংক্রান্ত জেলা কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান জানান, লকডাউন চলাকালে সংশ্লিষ্ট এলাকায় ১১টি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ৬৭ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৩৪ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে।
নাটোর সংবাদদাতা জানান, নাটোর পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে করোনা সংক্রমণ গণহারে বেড়ে যাওয়ায় এবার পৌরসভা ভবণে অনির্দিষ্টকালের জন্য নতুন করে লকডাউন ঘোষণা করেছে মেয়র। রোববার দুপুরে নাটোর পৌরসভার মেয়র উমা চৌধুরী জলি পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত এই লকডাউন চলবে বলে ঘোষণা দেন। মেয়র বলেন, পৌরসভায় কর্মরত ৪০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর মধ্যে রোববার পর্যন্ত ১৪ জনের করোনা সংক্রমণ পজেটিভ হয়েছে। আরো অনেকে অসুস্থ থাকায় তাদেরও নমুনা পরীক্ষা করতে দেয়া হয়েছে। তারা এখন নিজ নিজ বাড়িতে অবস্থান করছেন।


আরো সংবাদ



premium cement