২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`


রাতভর ৫০টি যুদ্ধবিমান তাণ্ডব চালায় গাজায়

জাতিসঙ্ঘের বৈঠক ব্যর্থ, সঙ্ঘাত বন্ধের আহ্বান গুতেরেসের

গাজায় ইসরাইলি বিমান হামলায় বিধ্বস্ত বাড়ি থেকে নিজেদের খেলনা নিয়ে ফিরছে ২ শিশু : এএফপি -

ফিলিস্তিন ও ইসরাইলের মধ্যকার সঙ্ঘাত বন্ধের আহ্বানসংবলিত ঘোষণা দেয়ার লক্ষ্যে জাতিসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদের তৃতীয় বৈঠকও ব্যর্থ হয়েছে। তবে সত্বর এই সঙ্ঘাত বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসঙ্ঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস। এর আগে রুদ্ধদ্বার দু’টি বৈঠকও ব্যর্থ হয়। পরে তৃতীয় দফায় রোববার উন্মুক্ত বৈঠক আহ্বান করা হয়। এতে ইসরাইল ও ফিলিস্তিনি প্রতিনিধিদলও অংশ নেয়। আলজাজিরা, গার্ডিয়ান ও বিবিসি।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে যুদ্ধ-সঙ্ঘাত বিরতির আহ্বানের আশায় বৈঠকে বসে জাতিসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদ; কিন্তু ইসরাইলি বিমান হামলায় গাজায় বিভিন্ন ভবনের ধ্বংসস্তূপ থেকে মানুষকে জীবিত ও মৃত উদ্ধারে ইসরাইলের সাথে সাময়িক অনুমতির চুক্তিতেও পৌঁছাতে পারেনি নিরাপত্তা পরিষদ।
নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে অ্যান্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির দিকে যেতে সব পক্ষকে নিয়ে কাজ করছে জাতিসঙ্ঘ। মধ্যস্থতা কার্যক্রমকে ত্বরান্বিত ও সফল করতে সবার সহযোগিতা প্রয়োজন।’ চলমান সঙ্ঘাতকে ‘চরম ভয়াবহ’ বলে বর্ণনা করেন জাতিসঙ্ঘের মহাসচিব। অ্যান্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘এই সহিংসতা শুধু অধিকৃত ফিলিস্তিন এবং ইসরাইলই নয়, পুরো অঞ্চলটিকে একটি নিয়ন্ত্রণহীন নিরাপত্তা ও মানবিক সঙ্কটে নিমজ্জিত করতে পারে। আরো চরমপন্থা উৎসাহিত করতে পারে।’
বৈঠকে ফিলিস্তিনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রিয়াদ আল-মালিকি বলেন, ‘‘গাজায় ‘মানবতাবিরোধী অপরাধ’ করছে ইসরাইল। অনেকে ‘যুদ্ধাপরাধ’ বা ‘মানবতাবিরোধী অপরাধ’ শব্দ দুটো ব্যবহার করতে চাইছেন না, তবে তারা জানেন যে, এখানে এটা ঘটছে।’’ জাতিসঙ্ঘে ইসরাইলের রাষ্ট্রদূত গিলাড এরডান হামাসের রকেট হামলাকে ‘পূর্বপরিকল্পিত’ বলে আখ্যা দেন। ক্ষমতা ধরে রাখতে হামাস এই হামলা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ ইসরাইলি রাষ্ট্রদূতের।
নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তিপ্রক্রিয়া কার্যক্রমে জাতিসঙ্ঘের সহ-সমন্বয়ক টর ওয়েনেসল্যান্ড বলেন, ‘গাজায় বিদ্যুতের ঘাটতির ফলে লাখ লাখ মানুষ খাবার পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। বিদ্যুতের ঘাটতিতে গাজার স্বাস্থ্যব্যবস্থা হুমকির মুখে পড়েছে। চলমান সঙ্ঘাতের ফলে গুরুতর আহতদের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে হাসপাতালগুলোকে।’
গাজায় ইসরাইল চারটি হাসপাতালসহ ৪০টি স্কুল এবং ১৮টি ভবন গুঁড়িয়ে দিয়েছে বলে জানান জাতিসঙ্ঘের এই কর্মকর্তা। ইসরাইলের সাথে ফিলিস্তিনিদের নতুন করে সঙ্ঘাত শুরুর পর রোববার সবচেয়ে বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে গাজায়। এ দিন গাজায় ইসরাইলের বিমান হামলায় ৪০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন বলে ফিলিস্তিনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। রোববার নিহত ৪২ জনসহ গাজায় এক সপ্তাহের ইসরাইলি হামলায় ৫৮টি শিশু ও ৩৪ জন নারীসহ মোট ১৯৭ জন নিহত হয়েছেন বলে ভূখণ্ডটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। অপর দিকে ইসরাইলে দু’টি শিশু ও এক সৈন্যসহ ১০ জন নিহত হয়েছেন।
ইসরাইলের সামরিক বাহিনী সূত্রে জানা গেছে, রোববার মধ্যরাতের পর ইসরাইলের বিমানবাহিনীর ৫০টি যুদ্ধবিমান পুরো ২০ মিনিট ধরে গাজার মূল শহর ও তার তার আশপাশের এলাকায় গোলা বর্ষণ করেছে। ইসরাইলের সেনাকর্মকর্তারা বলেন, বিমানবাহিনী ইসরাইলের জন্য ‘বিপজ্জনক’ ৩৫টি লক্ষ্যবস্তু ও হামাস যোদ্ধাদের ব্যবহৃত বেশ কয়েকটি সুড়ঙ্গপথ, যেগুলোর সম্মিলিত দৈর্ঘ্য ১৫ কিলোমিটার ধ্বংস করতে সমর্থ হয়েছে।
তবে গাজার সরকারি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ইসরাইলি সেনাবাহিনীর বিমান হামলায় সেখানকার কয়েকটি বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ প্রচুরসংখ্যক বাড়িঘর, আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবন ধ্বংস হয়েছে। বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় গাজার বেশির ভাগ এলাকা রয়েছে বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায়। বিদ্যুৎ না থাকায় সবচেয়ে বিপন্ন অবস্থায় আছেন গাজার হাসপাতালগুলোতে ভর্তি থাকা করোনা রোগীরা। একাধিক হাসপাতালের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গাজার বেশির ভাগ হাসপাতালে বিদ্যুৎ নেই। জ্বালানি সঙ্কট চলার কারণে জেনারেটরও চালু করা যাচ্ছে না।
তারা আরো জানান, ইসরাইলি সামরিক বাহিনীর বিমান হামলায় গাজার এলাকার বেশির ভাগ সড়ক ও মহাসড়ক ধ্বংস হয়ে গেছে। স্থানে স্থানে পড়ে আছে ধ্বংসস্তূপ। ফলে গাজার বেশির ভাগ এলাকায় জ্বালানি সরবরাহ বর্তমানে বন্ধ আছে, যেসব যায়গায় সরবরাহ চালু আছে তাও একেবারেই অনিয়মিত। অবশ্য গাজা অঞ্চলের প্রধান রাজনৈতিক দল হামাসও নিশ্চুপ বসে ছিল না। রোববার রাতভর ইসরাইলের বিভিন্ন স্থাপনা লক্ষ্য করে হামাস তিন হাজারেরও বেশি রকেট ছুড়েছে বলে জানিয়েছেন ইসরাইলের সামরিক কর্মকর্তারা।
অ্যান্টি মিসাইল ডিফেন্স ডিভাইস আয়রন ডোম দিয়ে সেগুলোর অনেকগুলো ধ্বংস করা গেলেও কয়েকটি রকেট ইসরাইলের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম হয়েছে। সম্প্রতি ইসরাইল ফিলিস্তিনের জেরুসালেমে আল জাররাহ এলাকা দখলে নেয়ার প্রচেষ্টা চালায়। এ নিয়ে সেখানকার ফিলিস্তিনি বাসিন্দাদের মধ্যে থেমে থেমে উত্তেজনা চলে আসছিল। গত ৭ মে পবিত্র মাহে রমজানের শেষ জুমা অর্থাৎ জুমাতুল বিদা আদায় করতে বিপুল মুসল্লি আল-আকসা মসজিদে সমবেত হলে ইসরাইলি বাহিনী তাদের ওপর চড়াও হয়।
মসজিদে ঢুকে মুসল্লিদের লক্ষ্য করে রাবার বুলেট ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে ইসরাইলি বাহিনী। এর দু’দিন পর শবেকদরেও আল-আকসা মসজিদে ইসরাইলি বাহিনীর সাথে মুসল্লিদের সংঘর্ষ হয়। এর প্রতিবাদে গাজা সীমান্তে বিক্ষোভ শুরু হয়। পরে গত সোমবার থেকে গাজায় বিমান হামলা শুরু করে ইসরাইল।


আরো সংবাদ



premium cement