হেফাজত নেতা মামুনুল হক গ্রেফতার
জুনায়েদ আল হাবিব ৭ দিনের রিমান্ডে- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ১৯ এপ্রিল ২০২১, ০০:৪৭
হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম-মহাসচিব ও ঢাকা মহানগর সাধারণ সম্পাদক মাওলানা মামুনুল হককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গতকাল বেলা পৌনে ১টার দিকে রাজধানীর মোহাম্মদপুরে জামিয়া রহমানিয়া আরাবিয়া মাদরাসা থেকে পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) হারুন-অর-রশিদের নেতৃত্বে একদল পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। মামুনুল হক গত কয়েক দিন ধরেই ওই মাদরাসায় অবস্থান করছিলেন। মামুনুল হককে গ্রেফতার করতে গেলে মাদরাসার শিক্ষার্থী ও হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীদের বাধার মুখে পড়বে এমন আশঙ্কায় প্রায় দুই শতাধিক পুলিশ সদস্য আগে মাদরাসাটি ঘিরে ফেলে। তবে শিক্ষার্থীরা কোনো বাধা না দেয়ায় খুব স্বাভাবিকভাবেই মামুনুলকে গ্রেফতার করে নিয়ে আসে পুলিশ।
মামুনুল হক হেফাজতে ইসলামের পাশাপাশি বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব। গতকাল ওই দলটির যুগ্ম-মহাসচিব মাওলানা জালাল উদ্দিন আহমেদকে মোহাম্মদপুরের বাসা থেকে ডিবি পুলিশ গ্রেফতার করেছিল। এ ছাড়া বারিধারা মাদরাসা থেকে হেফাজতের কেন্দ্রীয় যুগ্ম-মহাসচিব ও ঢাকা মহানগর সভাপতি মাওলানা জুনায়েদ আল হাবীবকেও ডিবি পুলিশ গ্রেফতার করে। এ নিয়ে গত কয়েক দিনে হেফাজতের ১০ জন কেন্দ্রীয় নেতাকে গ্রেফতার করল পুলিশ।
মামুনুল হককে গ্রেফতারের পর তাকে তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনারের কার্যালয়ে নেয়া হয়। সেখানে এক সংবাদ সম্মেলনে ডিসি হারুন-অর-রশিদ বলেন, ২০২০ সালে মোহাম্মদপুর থানায় দায়ের করা একটি ভাঙচুরের মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। তিনি বলেন, মামুনুলকে গ্রেফতারের পর মাদরাসার শিক্ষার্থী ও হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীদের বাধার মুখে পড়েনি পুলিশ। খুব স্বাভাবিকভাবেই মামুনুলকে গ্রেফতার করে নিয়ে আসা হয়। ডিসি হারুন বলেন, ২০২০ সালের মোহাম্মদপুর থানার একটি ভাঙচুর ও নাশকতার মামলায় তদন্ত চলছিল। তদন্তে হেফাজত নেতা মামুনুলের সম্পৃক্ততার বিষয়টি সুস্পষ্ট হওয়ায় তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, তা আপনারা জানেন।
এক প্রশ্নের জবাবে ডিসি হারুন বলেন, বায়তুল মোকাররম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, হাটহাজারীর ঘটনার পর থেকেই তিনি নজরদারিতে ছিলেন। তবে আপাতত মোহাম্মদপুর থানার মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। সোমবার তাকে আদালতে হাজির করা হবে। তবে রিমান্ড চাওয়া হবে কি না তা ঊর্ধ্বতনদের সাথে আলাপ করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
গত এক মাস ধরে ব্যক্তিগত জীবন থেকে শুরু করে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী অনুষ্ঠানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরের বিরোধিতা করে হেফাজতের আন্দোলনসহ নানা বিষয়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন মাওলানা মামুনুল হক।
নরেন্দ্র মোদির সফরের সময় ২৬ থেকে ২৮ মার্চ পর্যন্ত সহিংসতায় দেশে ২০ জনের মৃত্যু হয়। এসব সহিংসতার ঘটনায় সারা দেশে প্রায় অর্ধশতাধিক মামলা হয়েছে। এসব মামলায় গত কয়েক দিন ধরেই একের পর এক হেফাজত নেতাদের গ্রেফতার ও রিমান্ডে নিচ্ছে পুলিশ।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) সূত্রে জানা যায়, ২৬ মার্চ জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে সহিংসতার ঘটনায় গত ৫ এপ্রিল হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হকসহ ১৭ জনকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে। মামলায় দুই হাজার ব্যক্তিকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের উপ-দফতর সম্পাদক খন্দকার আরিফুজ্জামান বাদি হয়ে পল্টন থানায় মামলাটি করেন।
জুনায়েদ আল হাবিব ৭ দিনের রিমান্ডে : হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা মহানগরের সভাপতি এবং জমিয়তের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি আল্লামা জুনায়েদ আল হাবিবকে সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। রোববার তাকে ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করে পুলিশ। ২০১৩ সালে পল্টন থানায় হেফাজতের তাণ্ডবের ঘটনায় করা মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য তাকে ১০ দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করে পুলিশ। শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর শাহিনুর রহমান তার সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এর আগে শনিবার রাজধানীর বারিধারা এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ : হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হককে গ্রেফতারের প্রতিবাদে গতকাল রাজধানীর মোহাম্মদপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ করেছেন হেফাজতের নেতাকর্মীরা। এ ছাড়া পৃথক বিবৃতিতে হেফাজত নেতাদের গ্রেফতারের প্রতিবাদ ও অবিলম্বে মুক্তি দাবি করেছে বিভিন্ন সংগঠন।
মামুনুল হককে গতকাল বেলা পৌনে ১টার দিকে মোহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়া মাদরাসা থেকে পুলিশ গ্রেফতার করে। তাকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে মোহাম্মদপুর টাউন হল, বসিলা, কেরানীগঞ্জ, সিলেট, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ মিছিল করেছে হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীরা। এ সময় অবিলম্বে মামুনুল হককে মুক্তি দেয়ার দাবি জানান তারা। এ ছাড়া পৃথক বিবৃতিতে মামুনুল হকসহ আটককৃত হেফাজত নেতাদের মুক্তির দাবি জানিয়েছে বিভিন্ন সংগঠন।
বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস : সংগঠনের আমির শায়খুল হাদিস আল্লামা ইসমাঈল নূরপুরী, নায়েবে আমির মাওলানা ইউসুফ আশরাফ, মাওলানা আফজালুর রহমান, মাওলানা রেজাউল করিম জালালী, মাওলানা খুরশিদ আলম কাসেমী, মাওলানা আলী উসমান, মুফতি সাঈদ নূর ও যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আতাউল্লাহ আমীন, মাওলানা কোরবান আলী কাসেমী, মাওলানা আব্দুল আজীজ, মুফতি শরাফত হোসাইন গতকাল এক যুক্ত বিবৃতিতে বলেন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব এবং হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা মহানগর সাধরণ সম্পাদক আল্লামা মামুনুল হককে মোহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়া থেকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। এভাবে রমজান মাসে আলেম-উলামা ও সাধারণ মানুষকে হয়রানি ও গ্রেফতার করে দেশে একটি অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হচ্ছে। নেতৃদ্বয় হয়রানি ও গ্রেফতার বন্ধ এবং আটকৃতদের নিঃশর্ত মুক্তি দেয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। অন্যথায় আলেম-উলামারা ঐক্যবদ্ধভাবে কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবে। নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, হয়রানি ও গ্রেফতার করে আলেম-উলামাদের আন্দোলনকে ঠেকানো যাবে না। দেশের জনগণ ইসলাম ও দেশের প্রয়োজনে জীবন দিতে প্রস্তুত।
ইসলামী আন্দোলন : আলেম-উলামাদের ঢালাওভাবে গ্রেফতার ও হয়রানির কারণে লকডাউন প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, দেশের নিরীহ নিরপরাধ আলেম-উলামাদের গ্রেফতার ও হয়রানির কারণে সরকারের চলমান লকডাউন কঠোরভাবে সমালোচিত হয়েছে। যে মুহূর্তে মহমারী প্রকট আকার ধারণ করছে, সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা চরম দুর্বিষহ হয়ে উঠছে। সর্বত্র মানুষ আতঙ্কিত। এ হেন পরিস্থিতিতে আলেম-উলামাদের অযথা হয়রানি-নির্যাতন কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না।
খেলাফত মজলিস : হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা মহানগরী সভাপতি মাওলানা জুনায়েদ আল হাবীব এবং যুগ্ম মহাসিচব ও ঢাকা মহানগরীর সাধারণ সম্পাদক মাওলানা মামুনুল হক-সহ আলেম-উলামাদের গ্রেফতার ও রিমান্ডের নামে নির্যাতনের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে অবিলম্বে মাওলানা জুনায়েদ আল হাবীব ও মাওলানা মামুনুল হক-সহ গ্রেফতারকৃতদের নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানিয়েছে খেলাফত মজলিস। এক যৌথ বিবৃতিতে খেলাফত মজলিসের আমির অধ্যক্ষ মাওলানা মোহাম্মদ ইসহাক ও মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের বলেছেন, সরকার বিদেশীদের খুশি করার জন্য দেশের আলেম-উলামাদের ওপর নির্যাতনের স্টিম রোলার চালাচ্ছে। মাদরাসা-মক্তব, ইসলামী সংগঠনের বিরুদ্ধে নানামুখী ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আলেম-উলামাদের গ্রেফতার করে সাজানো-মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন চালানো হচ্ছে। দেশে এক ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। রমজান মাসে করোনার নামে লকডাউন দিয়ে আলেম-উলামাদের ওপর সরকারের এ দমন অভিযান কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। আলেম-উলামা ও দেশপ্রেমিক জনগণের ওপর হামলা, মামলা, হত্যা, গ্রেফতার নির্যাতন চালিয়ে সরকার তাদের পতনকেই ত্বরান্বিত করছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা