২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

জাপানের সাথে সম্পর্ককে কৌশলগত পর্যায়ে নিতে চায় বাংলাদেশ : পররাষ্ট্র সচিবপর্যায়ের বৈঠক

-

জাপানের সাথে সম্পর্ককে কৌশলগত পর্যায়ে উন্নীত করতে চায় বাংলাদেশ। অন্য দিকে মুক্ত ইন্দো-প্যাসেফিক কৌশলে বাংলাদেশকে সম্পৃক্ত করতে আগ্রহী জাপান। আগামী বছর কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের ৫০ বছর পূর্তিতে দুই দেশ সম্পর্কের একটি নতুন অধ্যায় রচনা করার পরিকল্পনা নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ-জাপান পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠকে এসব বিষয়ে আলোচনা হয়। এতে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন। জাপানের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্বে ছিলেন দেশটির পররাষ্ট্র সম্পর্ক বিষয়ক সিনিয়র ডেপুটি মিনিস্টার (পররাষ্ট্র সচিব) হিরোশি সুজুকি। ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠিত প্রায় আড়াই ঘণ্টার বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় ইস্যুর পাশাপাশি আঞ্চলিক বিষয়েও আলোচনা হয়েছে।
বৈঠক শেষে মাসুদ বিন মোমেন সাংবাদিকদের বলেন, ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাপান সফরে গিয়েছিলেন। এরপর জাপানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে বাংলাদেশ সফরে আসেন। এ সময় আমরা দুই দেশের সম্পকর্কে ‘সমন্বিত’ হিসাবে আখ্যায়িত করেছিলাম। এতে কূটনৈতিক সম্পর্কের পাশাপাশি বাণিজ্য ও বিনিয়োগের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছিল। এখন আমরা এই সম্পর্ককে ‘কৌশলগত’ পর্যায়ে উন্নীত করতে চাই। এর উপাদানগুলো কি হবে, কিসের ওপর ভিত্তি করে এই সম্পর্ক গড়ে উঠবে, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এ ব্যাপারে জাপানের যথেষ্ট আগ্রহ রয়েছে। করোনা মহামারীর কারণে চলতি বছর সুষ্ঠু কোনো পরিকল্পনা হাতে নেয়া যাচ্ছে না উল্লেখ করে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, আগামী বছর বাংলাদেশ-জাপান সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উদযাপিত হবে। ১৯৭২ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি স্বাধীন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয় জাপান। এ উপলক্ষে বেশ কয়েকটি কর্মসূচি হাতে নেয়া হবে। এর মধ্যে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর সফর বিনিময়ের পরিকল্পনা রয়েছে। এ ছাড়া রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ টোকিও সফরে গিয়ে জাপানের সম্রাটকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। আমরা আশা করছি, ২০২২ সালে দুই দেশের সম্পর্কে একটি নতুন অধ্যায় রচিত হবে।
বিগ-বি উদ্যোগের আওতায় দক্ষিণ চট্টগ্রাম নিয়ে জাপানের বড় পরিকল্পনা রয়েছে উল্লেখ করে মাসুদ বিন মোমেন বলেন, মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্র বন্দর ও কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ঘিরে ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চলছে। দক্ষিণ চট্টগ্রাম, মিয়ানমার ও ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলো নিয়ে আঞ্চলিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে বিগ-বি কিভাবে আরো কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে, তার পরিকল্পনা নিয়ে জাপান অগ্রসর হচ্ছে।
পররাষ্ট্র সচিব বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে জাপানের সাথে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানের পর এই ইস্যুর সর্বসাম্প্রতিক পরিস্থিতি আমরা তুলে ধরেছি। আমরা বলেছি, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনই বাংলাদেশের অগ্রাধিকার। জাপান জানিয়েছে, তারা এ ব্যাপারে বাংলাদেশের অবস্থান অনুধাবন করতে পারছে এবং এটিকে তারা সম্মান করে। প্রত্যাবাসনে আমরা জাপানের সহযোগিতা চেয়েছি। প্রত্যাবাসনের পর রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা ও টেকসই জীবিকা নিশ্চিত করতে জাপানের সহযোগিতা চেয়েছি।
বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) সইয়ের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উত্তরণের পরও বাংলাদেশের জন্য জিএসপি সুবিধা অব্যাহত থাকবে বলে নিশ্চয়তা দেয় জাপান। দুই দেশ জাতিসঙ্ঘসহ আন্তর্জাতিক ফোরামে সহযোগিতা জোরদার করতে সম্মত হয়। জাতিসঙ্ঘ নিরাপত্তা পরিষদে জাপানের স্থায়ী সদস্য পদের উদ্যোগকে সমর্থন জানায় বাংলাদেশ। সবুজ জ্বালানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে সহায়তা দিতে আগ্রহ দেখিয়েছে জাপান। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ঢাকা-টোকিও ফ্লাইট আবারো চালুর পরিকল্পনা সম্পর্কে হিরোশি সুজুকিকে অবহিত করেন পররাষ্ট্র সচিব।
বৈঠকে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (পূর্ব) মাসফি বিনতে শামস, মহাপরিচালক (পূর্ব এশিয়া ও প্যাসিফিক) খন্দোকার তালহাসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা যোগ দেন।


আরো সংবাদ



premium cement