২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

বাংলাদেশের বৈদেশিক দায়দেনা ছাড়িয়েছে ৪৪০২ কোটি ডলার

২২ বছরে বিদেশী ঋণের অবমুক্তি সাড়ে ৮০০ ভাগ বৃদ্ধি, অনুদান কমায় দায় বাড়ছে
-

২২ বছরে বাংলাদেশের বৈদেশিক অর্থছাড় সাড়ে ৮০০ ভাগ বৃদ্ধি পেয়ে ২০১৯-২০ সালে ৭১২ কোটি ১০ লাখ ডলারে উন্নীত হয়েছে। এটি জিডিপির ১৩ দশমিক ৩৪ শতাংশ। বৈদেশিক দায়দেনা অব্যাহতভাবে বৃদ্ধির ফলে বাংলাদেশের শুরু থেকে এ যাবৎ বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে চার হাজার ৪০২ কোটি ৩০ লাখ মার্কিন ডলার। এই ঋণের মধ্যে ৩৭ শতাংশ বিশ্বব্যাংকের, ২৪ দশমিক ৪৬ শতাংশ এডিবির, ১৭ দশমিক ৯ শতাংশ জাইকার, ৬ দশমিক ৮১ শতাংশ চীনের, ৬ দশমিক ১৪ শতাংশ রাশিয়ার, এক দশমিক ৩ ভারতের এবং অন্যান্য সংস্থা থেকে নেয়া ঋণের অংশ ৬ দশমিক ৪ শতাংশ।
গতকাল সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ভার্চুয়াল মন্ত্রিসভা বৈঠকে দেশের বৈদেশিক সহায়তা সম্পর্কে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ উপস্থাপিত প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, দেশের অর্থনীতি শক্তিশালী হওয়ায় বৈদেশিক সহায়তায় অনুদানের পরিমাণ ন্যূনতম পর্যায়ে নেমেছে। স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে বৈদেশিক সহায়তায় অনুদানের পরিমাণ ছিল ৮৪ থেকে ৮৬ শতাংশ, বাকিটা ছিল ঋণ। এখন সেই অনুদানের পরিমাণ নেমেছে তিন শতাংশে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ২০০৯-১০ সালে দেশে অনুদান এসেছে ৩০ শতাংশের মতো, ৭০ শতাংশের মতো আসে ঋণ। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে অনুদান এসেছে পাঁচ শতাংশের মতো, আর ঋণ হিসেবে এসেছে ৯৫ শতাংশ। ১৯৭১-৭২ সালে বাংলাদেশের বৈদেশিক সহায়তার আওতায় অনুদান ছিল সর্বোচ্চ ৮৪-৮৫-৮৬ শতাংশ, ঋণ ছিল ৬ থেকে ৮ শতাংশ। ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে অনুদান কমে ২-৩ শতাংশের এসে ঠেকেছে। ৯৭ শতাংশই এখন আসছে ঋণ হিসেবে। আমরা এখন আর অনুদানের ওপর নির্ভর করছি না।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, বিদেশী দায়দেনা ফেরত দেয়ার ক্ষেত্রে কোনো দিনই খেলাপি হয়নি বাংলাদেশ। তিনি জানান, ১৯৯৭-৯৮ সালে বাংলাদেশের বৈদেশিক সহায়তার অর্থছাড় ছিল ৭৪ কোটি ৮০ লাখ ডলার। তখন বাংলাদেশের জিডিপির ৩০ দশমিক ৪৭ শতাংশ ছিল ঋণ। ২০১৯-২০ সালে বাংলাদেশের অর্থছাড়ের পরিমাণ হচ্ছে ৭১২ কোটি ১০ লাখ ডলার, এটা জিডিপির ১৩ দশমিক ৩৪ শতাংশ।
তিনি আরো জানান, ১৯৮৯-৯০ অর্থবছরে বাংলাদেশের এডিপি (বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি) ছিল পাঁচ হাজার ১০৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে বৈদেশিক সাহায্য ছিল তিন হাজার ২৫৬ কোটি টাকা। এই এডিপির ৬৩ শতাংশ ছিল বৈদেশিক সহায়তা। ২০০৯-১০ অর্থবছরে এডিপির বরাদ্দ দাঁড়ায় ২৮ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে বৈদেশিক সহায়তা ছিল ১১ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। এডিপিতে বিদেশী ঋণের অবদান ছিল ৩৯ দশমিক ৬৫ শতাংশ। আর ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এডিপির পরিমাণ এক লাখ ৭৬ হাজার ৬২০ কোটি টাকা, এতে বৈদেশিক সহায়তা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫১ হাজার ৬৬০ কোটি টাকা। বৈদেশিক সাহায্য বাড়লেও শতকরা হিসাব নেমে এসেছে ২৯ দশমিক ২৫-এ। আমাদের নিজস্ব বিনিয়োগ এত বেড়ে গেছে যে, বাইরের ঋণ এলেও এটা শতাংশের হারে অনেক নিচে থাকছে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব আরো বলেন, এখন আমরা বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ করছি জিডিপির ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। ২০ শতাংশ পর্যন্ত নিরাপদ রেঞ্জ। আমরা বিপদসীমার অনেক নিচে আছি। আমাদের এখনো কোনো ঝুঁকি সৃষ্টি হয়নি। বৈদেশিক ঋণ যখন জিডিপির ৪০ শতাংশ বা এর বেশি হয়ে যায়, তখন ঝুঁকি থাকে। আমাদের জিডিপির তুলনায় বৈদেশিক ঋণ হলো ১৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ।
এক দশকে বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণ বেড়েছে ১২৫ শতাংশ : এ দিকে বাংলাদেশে এক দশকের ব্যবধানে বৈদেশিক ঋণের দায় ১২৫ শতাংশের বেশি বেড়েছে। বিশ্বব্যাংকের হিসাবে ২০০৯ সালে বাংলাদেশের সর্বমোট বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ ছিল ২৫৩৭ কোটি ২০ লাখ ডলার। ২০১৯ সালে এর স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৫৭০৮ কোটি ৮০ লাখ ডলার । অর্থাৎ এই এক দশকে ঋণের পরিমাণ বেড়েছে ২ লাখ ৬৯ হাজার ৫৮৬ কোটি টাকা বা ১২৫ শতাংশ।
ওয়াশিংটনে সংস্থার সদর দফতর থেকে প্রকাশিত ‘আন্তর্জাতিক ঋণ পরিসংখ্যান-২০২১’ শিরোনামে প্রতিবেদনে বাংলাদেশসহ স্বল্প ও মধ্য আয়ের ১২০টি দেশের বিদেশী ঋণ পরিস্থিতি তুলে ধরা হয়েছে। বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে ২০১৯ সাল পর্যন্ত পরিসংখ্যান রয়েছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশের স্থিতি হিসাবে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ৫৭০৮ কোটি ৮০ লাখ ডলারের ঋণের মধ্যে সরকারি ঋণ ৪১০৩ কোটি ৭০ লাখ ডলার। আইএমএফের ঋণ রয়েছে ১৪১ কোটি ৪০ লাখ ডলার। প্রতিবেদনে প্রত্যক্ষ বৈদেশিক বিনিয়োগ (এফডিআই), বেসরকারি খাতের বৈদেশিক ঋণ, স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি ঋণসহ বিভিন্ন তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। এতে দেখা যায়, বাংলাদেশের তুলনামূলক দীর্ঘমেয়াদি ঋণের পরিমাণই বেশি। ২০১৯ সালে এফডিআই এসেছে ১৩৭ কোটি ১০ লাখ ডলার সমপরিমাণ। দীর্ঘমেয়াদি ঋণের স্থিতি ৪৫৯৩ কোটি ৭০ লাখ ডলার। বেসরকারি খাতে ঋণ মাত্র ৪৯০ কোটি ১০ লাখ ডলার।

 


আরো সংবাদ



premium cement