২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

তিস্তাসহ অভিন্ন নদীর পানি বণ্টনে জেআরসি বৈঠক ডাকতে ঐকমত্য

বাংলাদেশ-ভারত পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠক
জেসিসি বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আব্দুল মোমেন -

তিস্তাসহ অভিন্ন নদীর পানি বণ্টনে দ্রুততম সময়ে মন্ত্রী পর্যায়ের যৌথ নদী কমিশনের (জেআরসি) বৈঠক আয়োজনে একমত হয়েছে বাংলাদেশ ও ভারত। ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের গুলিতে ক্রমবর্ধমান হারে বাংলাদেশী হত্যার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সরকার। এ ছাড়া ভারতের অর্থায়নে নেয়া প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে গতি সঞ্চারে উচ্চ পর্যায়ের পর্যবেক্ষণ কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। বাংলাদেশ ও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের যৌথ পরামর্শক কমিশনের (জেসিসি) ষষ্ঠ সভায় এসব সিদ্ধান্ত হয়। গতকাল মঙ্গলবার ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আব্দুল মোমেন আর ভারতীয় প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। এতে দুই দেশের হাইকমিশনারসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকতারা যোগ দেন।
তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তির ইস্যুটি বাংলাদেশের অগ্রাধিকারে থাকলেও দীর্ঘদিন ধরে এর নিষ্পত্তি হচ্ছে না। এ জন্য বাংলাদেশ বহু বছর ধরে জেআরসি বৈঠক আহ্বানের অনুরোধ জানিয়ে আসছে। প্রতিবারই ভারতের সাথে উচ্চপর্যায়ের সভায় জেআরসি বৈঠক শিগগিরই অনুষ্ঠানের তাগাদা দেয়া হলেও শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। ভারতের শীর্ষ পর্যায় থেকে বারবার প্রতিশ্রুতি দেয়া সত্ত্বেও মূলত পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির বিরোধিতার কারণে এই চুক্তি সই হচ্ছে না। ভারত এখন তিস্তা ছাড়া অন্যান্য অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন চুক্তির ওপর গুরুত্বারোপ করছে। গত বছর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিল্লি সফরে সময় ধরলা, দুধকুমার, গোমতী, খোয়াই, মনু ও মুহুরী নদীর পানিবণ্টন চুক্তি দ্রুততার সাথে করার জন্য পানিপ্রবাহের তথ্য-উপাত্ত হালনাগাদ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। গতকাল দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে তিস্তার পানি বণ্টন নিয়ে কার্যত কোনো অগ্রগতি হয়নি।
চলতি বছর সীমান্ত হত্যা হঠাৎ করেই বেড়ে গেছে। ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হর্ষ বর্ধন শ্রিংলার সাম্প্রতিক ঢাকা সফরের সময় বাংলাদেশ এ ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করে। দুই দেশের সীমান্তরক্ষীদের মহাপরিচালক পর্যায়ের বৈঠকেও বিষয়টি আলোচনা হয়েছে। বিএসএফ সীমান্ত হত্যা শূন্যে নামিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি বারবার দিলেও বাস্তবে তার প্রতিফলন ঘটছে না। গতকালের বৈঠকেও এই ইস্যুতে বাংলাদেশ উদ্বেগের কথা পুনর্ব্যক্ত করেছে। এতে দুই মন্ত্রী সমন্বিত সীমান্ত ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনার কার্যকর বাস্তবায়নের ওপর জোর দিয়েছেন। লাইন অব ক্রেডিটের আওতায় ভারতের দেয়া ঋণের অর্থে বাংলাদেশের যোগাযোগ ও অবকাঠামো খাতে বেশকিছু প্রকল্প হাতে নেয়া হলেও তার বাস্তবায়ন গতি খুবই ধীর। এতে গতি আনতে বৈঠকে একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব এবং ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনারের নেতৃত্বে এই কমিটি গঠিত হবে। কমিটি এ সব প্রকল্প বাস্তবায়ন অগ্রগতি পর্যালোচনা করবে।
ভারতে, বিশেষ করে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে বাংলাদেশী পণ্য রফতানির ক্ষেত্রে অশুল্ক বাধা ও যথাযথ বাণিজ্যিক সুবিধার অভাবের বিষয়টি জেসিসি বৈঠকে উত্থাপন করা হয়। বাংলাদেশী পণ্য রফতানির বাধাগুলো দূর করতে ভারতকে মান সনদ, নির্দিষ্ট বন্দরের বাধ্যবাধকতা এবং বন্দরের অবকাঠামোগত সীমাবদ্ধতাগুলো সমাধানের তাগিদ দেয় সরকার। বাংলাদেশ একই সাথে বিনিয়োগ নীতির ক্ষেত্রে সমতা আনার অনুরোধ জানায়।
ভারত গত বছরের মতো চলতি মাসেও কোনো ধরনের পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই হঠাৎ করে পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে দেয়। এতে নিত্যপ্রয়োজনীয় এ খাদ্যপণ্যটির দাম আকস্মিকভাবে বেড়ে যায়। চলতি বছরের জানুয়ারিতে দুই দেশের বাণিজ্যসচিব পর্যায়ের বৈঠকে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের ওপর পূর্ব ঘোষণা ছাড়া নিষেধাজ্ঞা না দেয়ার জন্য ভারতকে অনুরোধ করেছিল বাংলাদেশ। গত বছর দিল্লি সফরকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও একই ধরনের অনুরোধ জানান। কিন্তু ভারতের বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয় গত ১৪ সেপ্টেম্বর পেঁয়াজ রফতানির ওপর হঠাৎ নিষেধাজ্ঞা দেয়। জেসিসি বৈঠকে পেঁয়াজ রফতানি আকস্মিকভাবে বন্ধের ভারতীয় সিদ্ধান্তে বাংলাদেশের বাজারের ওপর নেতিবাচক প্রভাব তুলে ধরা হয়।
করোনা মহামারীর সময়ে ‘এয়ার বাবল’ পদ্ধতির আওতায় বিশেষ ব্যবস্থায় দুই দেশের মধ্যে সমতার ভিত্তিতে ফ্লাইট চলাচলের বিষয়টি বৈঠকে আলোচনা হয়। জাতিসঙ্ঘ নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী সদস্য হিসেবে রোহিঙ্গাদের টেকসই ও নিরাপদ প্রত্যাবাসনে ভারত আরো অর্থপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে বাংলাদেশের প্রত্যাশার কথা জানানো হয়।
বৈঠকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও ভারতের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে নেয়া বিভিন্ন কর্মসূচি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা হয়। এ উপলক্ষে বিজয়ের মাস ডিসেম্বরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ভার্চুয়াল বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে বলে জানানো হয়। করোনাভাইরাসের টিকা পেতে বাংলাদেশকে অগ্রাধিকার দেয়ার ভারতের নিশ্চয়তায় সন্তোষ প্রকাশ করেন ড. মোমেন।
এ ছাড়া জেসিসি বৈঠকে কানেক্টিভিটি, নিরাপত্তা, রাজনৈতিক ইস্যু, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে সহযোগিতার পাশাপাশি দুই দেশের জনগণের মধ্যে বন্ধন আরো বাড়ানোর উপায় নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

 


আরো সংবাদ



premium cement