২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ইথানলে করোনার চিকিৎসা সম্ভব মনে করেন বাকৃবির গবেষক ড. আলিমুল

-

বর্তমানে নভেল করোনাভাইরাস বা কোভিড-১৯ নিয়ে পুরো বিশ্ব নাজেহাল। বিজ্ঞানীরা দিন-রাত করোনাভাইরাসের প্রতিষেধক আবিষ্কারের জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু কোনো ভাইরাসের প্রতিষেধক তৈরির জন্য প্রয়োজন অনেক সময়। অন্য দিকে মৃত্যুর মিছিল দিনে দিনে দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে। এ প্রাণঘাতী ভাইরাসের হাত থেকে বাঁচার জন্য প্রাণপণ চেষ্টার মধ্যে একটুখানি যেন আশার আলো দেখতে পাচ্ছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক।
গবেষক দলের প্রধান বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি এবং হাইজিন বিভাগের অধ্যাপক ড. মো: আলিমুল ইসলাম বলেন, এলকোহল বা ৬০ শতাংশ ইথানলে সব ধরনের ভাইরাস মারা যাবে। এমনকি কোষের সাথে লেগে থাকা ভাইরাসের চর্বির আবরণ (লিপিড এনভেলোপ) ভেঙে দিয়ে এবং আমিষ রিসেপ্টর বা এনজাইমসহ সবকিছু নষ্ট করে দিয়ে ভাইরাসকে মেরে ফেলা যাবে। এ ছাড়া কোষের ভেতরে থাকা ভাইরাসও মারা যাবে। এলকোহলের পানির প্রতি আকর্ষণ থাকায় তার সংস্পর্শে আসা কোষগুলো থেকে পানি বের করে নিয়ে শুষ্ক করে ফেলবে এবং ভাইরাসসহ কোষটি মারা যাবে। ভাইরাস ১-২ মিনিট এর মধ্যে সহজেই ধ্বংস হয়ে যাবে। এ উভয় পদ্ধতি ব্যবহারে গলা ও শ্বাসতন্ত্রের পর্দার সাথে লেগে থাকা সব মুক্ত বা ভাসমান ভাইরাস স্বল্প সময়ের মধ্যেই ধ্বংস হবে।
এ ছাড়া প্রদাহজনিত কারণে (গলাব্যথার ক্ষেত্রে) আক্রান্ত জায়গার কোষগুলো থেকে সাময়িকভাবে জলীয় পদার্থ শোষণ করলে প্রদাহ কমে যাবে এবং ব্যথা দ্রুত কমাতে সাহায্য করবে। সেই ক্ষেত্রে রোগীরা খুব আরাম বোধ করবে। যদি এক-দুই দিন কুলকুচি করলেই ব্যথা চলে যায় তাহলে আর কুলকুচি করার প্রয়োজন নেই। তবে কোভিড-১৯ এর ক্ষেত্রে দুই দিনে ব্যথা না কমলে আরো এক-দুই দিন ব্যবহার করাই ভালো।
ড. আলিমুল বলেন, তবে এলকোহল খেলে কাজ হবে না। কারণ এই ভাইরাস গলায় ও শ্বাসযন্ত্রে থাকে। তাই এক-দুই মিনিট সময় নিয়ে কুলকুচি করতে হবে যাতে ভাইরাস সম্পূর্ণরূপে মারা যায়।
তিনি বলেন, আমাদের শরীর যখন প্রয়োজনের চেয়ে বেশি মিউকাস বা শ্লেষ্মা তৈরি করে, তখনই বাড়তি মিউকাস নাক দিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে সেটাকেই আমরা বলে থাকি ‘নাক দিয়ে পানি পড়া’ যা সাধারণ সর্দি-জ্বরেও হয় আবার কোভিড-১৯ দ্বারা আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রেও তা হয়ে থাকে। প্রাথমিক পর্যায়ে সাধারণ সর্দি-জ্বর থেকে কোভিড-১৯কে পার্থক্য করা বেশ কঠিন। তাই আমরা মনে করি, রোগের প্রাথমিক স্তরে যদি এ পদ্ধতি ব্যবহার করা যায় তাহলে সাধারণ সর্দি-জ্বর, কাশি এমনকি কোভিড-১৯ এর মতো প্রাথমিক লক্ষণ থেকে খারাপ পর্যায়ে যাওয়ার আগেই সহজেই মুক্তি পেতে পারি।
তিনি জানান, জ্বর, গুরুতর গলাব্যথা, নাক দিয়ে সর্দি পড়া, নাকে জ্বালা-পোড়া করা এবং মাথাব্যথার রোগীরা (মৌসুমী ফ্লু বা কোভিড-১৯ এর লক্ষণগুলোর প্রাথমিক প্রকাশ) এবং যাদের বয়স ১২ বছরেরে ঊর্ধ্বে তারা এ পদ্ধতি ব্যবহার করতে পারবেন।
ব্যবহারবিধি সম্পর্কে তিনি বলেন, প্রথমে ৬০% ইথানলের দ্রবণ তৈরি করে তা সংরক্ষণ করা যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে একটি পরিষ্কার বোতলে তিন কাপ খাঁটি ইথানল (ইথাইল অ্যালকোহল ৯৯.৯%) এর সাথে দুই কাপ পানি মিশিয়ে শিশুদের নাগালের বাইরে রাখতে হবে।
একটি চায়ের কাপে অথবা একটি ছোট আকারের মগে ৬০ মিলি (১২ চা চমচ) ফুটন্ত গরম পানি ঢালতে হবে। তারপর এতে অ্যাসিটোন ফ্রি খাঁটি ৪০ মিলি (৮ চা চামচ) ইথানল (ইথাইল অ্যালকোহল ৯৯.৯%) ঢেলে ৩০ সেকেন্ড থেকে ১ মিনিট পর্যন্ত নাক দিয়ে ওই বাষ্প টানতে হবে। এ পদ্ধতিটি অবলম্বন করে শ্বাসনালী ও ফুসফুসে অবস্থানরত ভাইরাস মারা যাবে।
ইথানল বাষ্প টানার ঠিক ১০-১৫ মিনিট পর পরিষ্কার একটি চায়ের কাপে অর্ধেক কুসুম গরম পানি ও বাকি অর্ধেক তৈরিকৃত ৬০% ইথানল মিশিয়ে সবটুকু (৫০ মিলি বা ১০ চা চামচ) দিয়ে ৩০ সেকেন্ড করে ২ বার কুলকুচি/গড়গড়া করতে হবে। এভাবে দিনে তিন-চারবার করতে হবে। প্রতিবার কুলকুচি করার ৪-৫ মিনিট পর সাধারণ পানি দিয়ে হাল্কা কুলকুচি করে মুখ ধুয়ে ফেলতে হবে। এতে প্রথম কুলকুচিতে মিউকাস বা শ্লেষ্মা পরিষ্কার হয়ে যাবে, দ্বিতীয়বার কুলকুচিতে জীবাণু মারা যাবে।
কুলকুচি করার পর তা নির্দিষ্ট কোনো পাত্রে বা স্থানে ফেলতে হবে যেখানে ১% ব্লিচিং পাউডার রাখতে হবে। কারণ গলা থেকে ভাইরাস কুলকুচির মাধ্যমে যাতে অন্যত্র ছড়িয়ে না যায় সেদিকে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। কোনো কারণে পেটে গেলে কোনো ক্ষতির সম্ভাবনা নেই। কারণ এটি ড্রিংকিং এলকোহল। সম্ভব হলে সাথে সাথে কিছু পানি পান করা যেতে পারে। এ ছাড়া যে মাত্রায় ব্যবহার করা হবে তা স্বল্প সময়ের জন্য মোটেও ক্ষতিকারক নয়। তবে কোনো অবস্থাতেই মিথানল ব্যবহার করা যাবে না।
এ ছাড়া প্রতি ১ থেকে ২ ঘণ্টার ব্যবধানে তিন থেকে চার দিনের জন্য আদা ও দারুচিনি মিশ্রিত গরম পানি পান করা যেতে পারে। যে সব খাবার বা ফলমূলে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আছে যেমন লেবু, কমলা, মাল্টা এগুলো প্রতিদিন খেতে পারলে ভালো ফল পাওয়া যাবে।
গবেষণা দলে আরো ছিলেন, পিএইচডি শিক্ষার্থী ডা: মো: আসির উদ্দিন, ডা: মো: মুখলেছুর রহমান ও ডা: মো: এনামুল হক। এই পদ্ধতি ভাইরাল জ্বর বা কোভিড-১৯ এর লক্ষণ শুরু হওয়া ব্যক্তিদের আরোগ্যের জন্য একটি কার্যকরী উপায় বলে মনে করেন তারা।

 


আরো সংবাদ



premium cement