২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`


ভাষা আন্দোলন ও সৈনিক পত্রিকা

-

১৯৪৮ সালের ১৪ নভেম্বর প্রকাশিত হয় সাপ্তাহিক সৈনিক পত্রিকা। পত্রিকাটি বের করেন তমদ্দুন মজলিসের প্রতিষ্ঠাতা প্রফেসর আবুল কাসেম। এটি ছিল মজলিসের ভাষা আন্দোলনের মুখপত্র। তখন এর সম্পাদক ছিলেন আব্দুল গফুর।
ওই সময় আবুল মনসুর আহমদ সম্পাদিত ইত্তেহাদ ছাড়া অন্য কোনো পত্রিকা ভাষা আন্দোলনকে তেমন সমর্থন করেনি। সৈনিক পত্রিকা বের হওয়ার আগে আব্দুল ওয়াহেদ চৌধুরী সম্পাদিত সাপ্তাহিক ইনসাফ আন্দোলন সমর্থন করত। সিলেট থেকে প্রকাশিত নওবেলাল পত্রিকাটি ভাষা আন্দোলনের পক্ষে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। এ ছাড়া মিল্লাত পত্রিকা ভাষা আন্দোলনের সমর্থক ছিল। পাকিস্তান অবজার্ভার ও আজাদেও ভাষা আন্দোলনের খবর মাঝেমধ্যে গুরুত্বসহকারে ছাপা হতো।
প্রফেসর আবুল কাসেমের আজিমপুর ১৯ নম্বর বাসাই ছিল সৈনিক পত্রিকা ও তমদ্দুন মজলিসের অফিস। ভাষা আন্দোলন যেহেতু সরকার বিরোধী আন্দোলনে পরিণত হয় তাই ভাষা আন্দোলনের মুখপাত্র সৈনিক পত্রিকাটিও প্রথম সরকার বিরোধী পত্রিকা হিসেবে পূর্ব পাকিস্তানে পরিচিতি লাভ করে। সরকার বিরোধী দলগুলোর বক্তব্য বিবৃতি এবং কর্মকাণ্ড গুরুত্বসহকারে প্রকাশিত হতে থাকে এ পত্রিকায়। ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলন যখন তুঙ্গে তখন সৈনিক পত্রিকা একই দিনে কয়েকটি সংস্করণ বের হয়েছে এবং তা নিমিষেই বিক্রি হয়ে গেছে। ২২ ও ২৩ ফেব্রুয়ারি পত্রিকাটির তিনটি সংস্করণ বের হয়। মফস্বলেও ভাষা আন্দোলনের পক্ষে সাড়া জাগায় পত্রিকাটি। শুধু প্রেসনোট ছাপার সরকারি নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও পত্রিকাটি সরকারি সে আদেশ মানেনি।
সৈনিক পত্রিকার এ অবস্থানের ফলে সরকারের কোপানলে পড়ে পত্রিকাটি। সরকার প্রফেসর আবুল কাসেম ও আব্দুল গফুরকে গ্রেফতারের নির্দেশ দেয়। ফলে ২৩ ফেব্রুয়ারি সৈনিক অফিস তথা প্রফেসর আবুল কাসেমের বাসভবন ঘেরাও করে পুলিশ। প্রফেসর আবুল কাসেম সে রাতের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘আমি ও সৈনিক সম্পাদক রাতের অন্ধকারে ১৯ নম্বর বাসার পেছনে গভীর কূপের ভেতর দিয়ে দেয়াল টপকে শেখ সাহেব বাজারের মধ্য দিয়ে পলায়ন করি। আমাদের অনেকের বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি হয়। গ্রেফতার এড়ানোর জন্য নুরুল ইসলাম নামে ঢাকার এক ডাক্তারের বাসায় কিছুদিন গোপনে অবস্থান করি এবং পরে ময়মনসিংহে গিয়ে আশ্রয় নেই।’


আরো সংবাদ



premium cement