মানুষ একা থাকতে পারে না। সমাজবদ্ধ জীব হিসেবে তাকে সবার সাথে মিলেমিশে বাস করতে হয়। এ জন্য মানুষকে বলা হয় সামাজিক জীব। সমাজে বসবাসের জন্য প্রত্যেকের থাকতে হয় একধরনের দায়বোধ, যাকে সমাজবিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় সামাজিক দায়বদ্ধতা। সামাজিক দায়বদ্ধতার অর্থ হলোÑ মানুষ হিসেবে একে অপরের প্রতি থাকতে হয় সহমর্মিতা, সহানুভূতি, মায়া-মমতা। অন্যের বিপদে-আপদে এগিয়ে যাওয়া। এসব গুণাবলি মানুষের সহজাত প্রবণতা। কিন্তু এ স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্যগুলো যে সমাজে লোপ পায়; সেখানে সামাজিক বিশৃঙ্খলা অনিবার্য ওয়ে ওঠে। এই বিশৃঙ্খলা রোধে কাজ করাও একধরনের সামাজিক দায়বদ্ধতা। কিন্তু বর্তমানে সামাজিক দায়বোধ থেকে অন্যায় কাজের প্রতিবাদ করতে গিয়ে সংবেদনশীল মানুষকে হতে হচ্ছে লাঞ্ছিত। ক্ষেত্রবিশেষে জীবনও বিপন্ন হচ্ছে।
লক্ষণীয় বিষয়Ñ আমাদের সমাজে মানবিক এসব গুণ লোপ পেতে চলেছে। চেনাজানা চার পাশে এমন সব ঘটনা ঘটছে, যাতে পুরনো সমাজব্যবস্থা ধ্বংসের দাঁরপ্রান্তেÑ এমন প্রান্তিক মন্তব্যও শোনা যাচ্ছে। অহরহ অমানবিক ঘটনা ঘটায় আলোচনায় এসেছে সমাজব্যবস্থার পুনর্নির্মাণের কথা। সবার জানা, সৃজনশীল কাজে নিমগ্ন ব্যক্তিমাত্রই সংবেদনশীল। এ ক্ষেত্রে কবি, সাহিত্যক, দার্শনিক, উদ্ভাবক ও বিজ্ঞানীরা হলেন অগ্রগামী। অর্থাৎ সৃষ্টিশীল কাজে যারা পরিব্যাপ্ত তারাই স্বাধারণত নিজের সংবেদশীলতা উচ্চে তুলে ধরতে প্রতিনিয়ত সচেষ্ট থাকেন। তাদের কাজের বিনিময়েই বিনির্মিত হয় সুস্থ, সুন্দর ও মানবিক সমাজ। তেমনি একজন হতে চেয়েছিলেন সৈয়দ মুনাব্বির আহমেদ তনন। তিনি ছিলেন নিমগ্ন পাঠক। ছোট কাগজের সম্পাদক। একজন সংস্কৃতিকর্মী এবং রাজনীতি সচেতন তরুণ। তবে এসব কিছু ছাড়িয়ে কবি হওয়ার প্রবল বাসনা ছিল তার। কবিদেরও অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে হয়, সেই কাজটিই করেছিলেন মুনাব্বির। এটাই তার জন্য কাল হলো। একটি সরকারি খালে বাঁধ দিয়ে জনদুর্ভোগ সৃষ্টির প্রতিবাদ করায় তাকে পিটিয়ে হত্যা করেছে একদল দুর্বৃত্ত। সোমবার বিকেলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের আলিয়ারা গ্রামে নিষ্ঠুর এই ঘটনা ঘটে। মুনাব্বির ছিলেন ওই গ্রামেরই বাসিন্দা। একই সাথে তিনি ছিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে স্নাতকোত্তর শ্রেণীর শিক্ষার্থী।
গণমাধ্যমের খবরে প্রকাশ, গত ৭ নভেম্বর হরিপুর ইউনিয়নের আলিয়ারা গ্রামের কিছু যুবক মাছ ধরার জন্য গ্রামের একটি সরকারি খালে বাঁধ দিয়ে পানি নিষ্কাশন বন্ধ করে দেয়। এতে এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দিলে মানুষের চলাচলে সমস্যার সৃষ্টি হয়। এর প্রতিবাদ করেন মুনাব্বির। এ নিয়ে দোষীদের নেতার সাথে তার বাগি¦তণ্ডা হয়। পরে স্থানীয়দের মাধ্যমে বিষয়টির নিষ্পত্তির সিদ্ধান্ত হয়; কিন্তু মুনাব্বিরের প্রতিবাদ ও খালে বাঁধ দেয়া নিয়ে সালিস বৈঠকের বিষয়টি পছন্দ হয়নি সমাজবিরোধী ওই সব দুষ্কৃতকারীর। মতলব আঁটে মুনাব্বিরকে ‘শায়েস্তা’ করার। ৯ নভেম্বর বিকেলে ১০-১৫ জন দুর্বৃত্ত দেশীয় অস্ত্র নিয়ে মুনাব্বিরের ওপর হামলা চালায়। তাকে পিটিয়ে জখম করে। এ সময় মুনাব্বিরকে উদ্ধারে এগিয়ে আসায় আরো তিনজন আহত হন। গুরুতর আহত তরুণ কবি মুনাব্বিরকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে রাতে ঢাকা মেডিক্যালে নেয়ার পথে তার মৃত্যু হয়।
মুনাব্বিরের মতো নিরপরাধ সম্ভাবনাময় একজন তরুণ কবিকে সামাজিক দায়বদ্ধতার জন্য জীবন দিতে হলো, এর জন্য শুধু তার পরিবার একা নয়; সংবেদনশীল সবার জন্য বেদনার। মুনাব্বিরকে হত্যার প্রতিবাদে গত মঙ্গলবার সকালে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন স্থানীয় সংস্কৃতিকর্মীরা। তারা খুনিদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছেন। আমরাও চাই তরুণ এই কবির হত্যাকারীদের গ্রেফতার করে বিচারের মুখোমুখি করা হোক। এটি এখন আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর দায়িত্ব। তবে দেশে বিচারহীনতার সংস্কৃতি যেভাবে জেঁকে বসেছে; তাতে মুনাব্বিরের খুনিদের বিচারের মুখোমুখি হওয়া নিয়ে সন্দেহ করা অমূলক নয়। আমাদের মনে রাখা প্রয়োজন, এ ধরনের ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে আমরা ব্যর্থ হলে; আগামীতে কেউ সামাজিক দায়বোধ থেকে অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে সাহসী হবেন না। একই সাথে এগিয়ে আসতে আগ্রহী হবেন না। এটি হলে আমাদের সমাজ মনুষ বাসের অনুপযোগী হয়ে উঠবে। এটি কারো জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে না। তবে সব কিছুর পরও সবাইকে নিজেদের স্বার্থে অন্যায়ের প্রতিবাদে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে, যাতে সামাজিকভাবে অশুভ শক্তিকে পরাস্ত করা যায়।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা