২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`
৪০ গ্রামের দরকার মাত্র ২টি সেতু

উন্নয়নের জোয়ারেও দুর্ভোগ ঘোচেনি

-

গত শনিবার একটি জাতীয় পত্রিকার দু’টি সচিত্র খবর। একটির শিরোনাম, ৪৮ বছরেও নির্মাণ হয়নি সেতু, দুর্ভোগে ২০ গ্রামের মানুষ। অন্য সংবাদটির শিরোনাম হলো, একটি সেতু বদলে দিতে পারে ২০ গ্রামের মানুষের ভাগ্য। প্রথম খবরের সাথে একটি ছবি। এতে দেখা যায়, সেতুর অভাবে একটি নৌকায় ধানের বোঝা, মোটরসাইকেল, বাইসাইকেল ইত্যাদি তুলে লোকজন মানিকগঞ্জের একটি গ্রামে ধলেশ্বরী পাড়ি দিচ্ছেন। অন্য ছবিটির মর্মার্থ হলো, রাজশাহীর একটি পৌর এলাকায় সেতু না থাকায় মানুষ বাঁশের সাঁকো দিয়ে বড়াল নদী পার হচ্ছে। উল্লেখিত দু’টি প্রতিবেদনের মধ্যে সবচেয়ে বড় মিল হচ্ছে, উভয় ক্ষেত্রেই একটি মাত্র সেতুর অভাবে অন্তত ২০টি গাঁয়ের বাসিন্দাদের দুর্ভোগ; আর যে দু’টি নদীর ওপর সেতু হয়নি আজ পর্যন্ত, সেই ধলেশ্বরী আর বড়ালের নাম বাংলাদেশের মানুষের কাছে সুপরিচিত। অর্থাৎ নিছক কোনো খাল কিংবা অখ্যাত ছোট নদীর সাথে সংশ্লিষ্ট নয় ব্যাপারটি।
খবর দু’টির একটিতে জানানো হয়েছে, মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার বরাইদ ইউনিয়নে স্বাধীনতার পর দীর্ঘ ৪৮ বছরেও ধলেশ্বরীর ওপর সেতু নির্মিত হয়নি। এতে ২০টি গ্রামের মানুষ চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। এ অবস্থায় পারাপারের আশায় ভোর থেকে দীর্ঘ লাইনে তাদের দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। সবচেয়ে বেশি অসুবিধা হচ্ছে ছাত্রছাত্রীদের। আর প্রধানত কৃষিজীবী মানুষের সমস্যা এবং হাটবাজারের অসুবিধা তো আছেই। খেয়া নৌকা একবার দেরি করলে ঘণ্টাখানেক পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয় তাদের। নৌকার ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি শিক্ষার্থীকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নদী পারাপার হতে হচ্ছে। এখানে নদীর দু’পারেই হাটবাজার থাকায় লোকজনের যাতায়াতও বেশি।
অন্য এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, একটি মাত্র সেতু ২০ গ্রামের মানুষের ভাগ্য বদলে দিতে পারে। তবুও রাজশাহীর আড়ানি পৌরসভার ২০টি এলাকার মানুষের সুবিধার্থে, পদ্মার শাখা নদী বড়ালের ওপর আলোচ্য সেতুটি তৈরি করা হয়নি আজো। অথচ প্রায় অর্ধলক্ষ মানুষ উপকৃত হবে এটি নির্মাণ করা হলে। কাছেই আড়ানিতে বিখ্যাত হাট রয়েছে, যেখানে ব্যবসায়ীরা ঢাকাসহ নানা স্থান থেকে পণ্য নিয়ে আসেন। কিন্তু একটি মাত্র সেতুর অভাবে প্রতিদিন নৌকায় বড়াল পাড়ি দিয়ে হাটে যেতে হয়। তা ছাড়া, ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় নষ্ট হয় নৌকার জন্য অপেক্ষার কারণে। অন্যথায় দুই কিলোমিটার পথ ৫-৬ কিলোমিটার ঘুরে যেতে হয় ।
মানিকগঞ্জের সেতুটির ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ‘ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা পরিদর্শনের পর জরিপকাজ চলছে। প্রকল্পটি পাস করা হলে সেতু নির্মাণের কাজ শুরু হবে।’ আর রাজশাহীর বাঘা উপজেলার ব্রিজটি সম্পর্কে জানানো হয়েছে, ‘সেতু তৈরি করার বিষয়ে মন্ত্রণালয়ে কাগজপত্র পাঠানো হয়েছে।’
বাংলাদেশে নদ-নদী ও খালবিল অজস্র। তাই এখানে সেতুর প্রয়োজনও বেশি। কিন্তু একবিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় দশক শেষ হতে চললেও এবং হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে দেশজুড়ে ‘উন্নয়নের জোয়ার’ বইয়ে দেয়া হলেও, বহু এলাকার মানুষ আজো সেতুর অভাবে বিষম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। আমাদের প্রত্যাশা, জনদুর্ভোগ লাঘবে কর্তৃপক্ষ অবিলম্বে প্রয়োজনীয় সেতু নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণের কার্যকর উদ্যোগ নেবে।

 


আরো সংবাদ



premium cement

সকল