২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

পোশাক খাতের রফতানি বাড়াতে ভূমিকা রাখছে যেসব ফ্যাক্টর

পোশাক খাতের রফতানি বাড়াতে ভূমিকা রাখছে যেসব ফ্যাক্টর - সংগৃহীত

বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের রফতানি কিছুটা ইতিবাচক ধারায় ফিরেছে বলে জানিয়েছে কারখানা মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ। গত বছরের এই সময়ের তুলনায় এ বছর রফতানি বেশ বেড়েছে বলে সংগঠনটি জানিয়েছে।

তবে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ অব্যাহত থাকা আর আসন্ন মার্কিন নির্বাচনের কারণে পুরোপুরি আশাবাদী হতে পারছেন না অনেক উদ্যোক্তা।

তৈরি পোশাক কারখানা মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান বলেছেন, এ খাতের রফতানি পুনরুদ্ধার শুরু হয়েছে। সার্বিকভাবে বড় দুটি বাজার অর্থাৎ ইউরোপীয় ইউনিয়নে বেড়েছে আর যুক্তরাষ্ট্রের বাজার ইতিবাচক ধারায় ফিরছে।

‘গত জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি সময়ে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও যুক্তরাজ্যে রফতানি বেড়েছে। কিছুদিন আগে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে আমরা বলেছিলেন ২০২৪ সালে খুচরা ব্যবসা ফিরে আসার ইঙ্গিত আছে,’ গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে বলেছেন হাসান।

অর্থনীতিবিদ ড. মুস্তাফিজুর রহমান বিবিসি বাংলাকে বলছেন, রফতানি প্রবৃদ্ধির মূল কারণ হলো অর্থনৈতিক পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হওয়ায় ইউরোপ আমেরিকার বাজারে চাহিদা বেড়েছে সাম্প্রতিক সময়ে এবং এর ফলে বাংলাদেশের পোশাক খাতের ব্যবসায়ীরা অর্ডার পাচ্ছেন।

যদিও গত দু’মাসের রফতানির তথ্য দিয়ে সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা না করার পরামর্শ দিয়েছেন বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান।

‘আমাদের মনে রাখতে হবে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ না হলে এবং আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন শেষ না হওয়া পর্যন্ত ইউরোপ আমেরিকার বাজার স্বাভাবিক হবে না। তাই এখনকার পরিস্থিতিতে নেতিবাচক না বলেও খুব বেশি ইতিবাচক অবস্থায় এসেছে এমনটি বলা যাবে না,’ বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন তিনি।

প্রসঙ্গত, সরকারি তথ্য অনুযায়ী চলতি বছরের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে বাংলাদেশ থেকে মোট পোশাক রফতানি ৯ দশমিক ৪৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৩ দশমিক ১৫ শতাংশ বেশি।

‘অর্থবছরের প্রথম ছয় মাস অর্থাৎ ২০২৩ সালের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে রফতানি বেশ চ্যালেঞ্জিং ছিল এবং এই বছরের জানুয়ারিতে সেটি পুনরুদ্ধার শুরু হয়েছে,’ ফারুক হাসান বলেছেন তার বিবৃতিতে।

তবে সাবেক সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলছেন পোশাক খাতের জন্য বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জগুলো কাটেনি এবং সে কারণে এই প্রবৃদ্ধি কতটা ধরে রাখা যাবে কিংবা আর কতটা বাড়ানো যাবে, সেটি দেখতে হলে আরো অপেক্ষা করতে হবে।

রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর হিসেবে, চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে তিন হাজার ২৮৬ কোটি ডলারের পোশাক রফতানি হয়েছে, যা আগের অর্থ বছরের একই সময়ের তুলনায় ৪ দশমিক ৭৭ শতাংশ বেশি।

পুনরুদ্ধারে কোন ফ্যাক্টর কাজ করছে
অর্থনীতিবিদ ড. মুস্তাফিজুর রহমান বলছেন, উত্তর আমেরিকা, ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলো ও যুক্তরাজ্যের অর্থনীতি কিছুটা ভালো হতে শুরু করেছে। সে কারণেই সেখানকার বাজারগুলোতে চাহিদার কিছুটা চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে।

‘আমার মনে হয় এ কারণেই ইউরোপ আমেরিকায় রফতানি বেড়েছে। এছাড়া ডলারের তুলনায় টাকার অবমূল্যায়ন হওয়ার বিষয়টিকে উদ্যোক্তারা প্রতিযোগিতার সক্ষমতার জন্য কাজে লাগাতে পারছেন,’ বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন তিনি।

পোশাক খাতের সাথে জড়িতরা বলছেন, মূলত যুক্তরাজ্য, কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রের বাজার কিছুটা ইতিবাচক হওয়ার কারণেই চলতি বছরের প্রথম দু'মাসে রফতানি আগের বছরের একই সময়ে তুলনায় কিছুটা বেড়েছে।

করোনা মহামারী ও পরে ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ইউরোপ আমেরিকার বাজার নিয়ে উত্থান-পতনের মধ্য দিয়েই যাচ্ছিলো পোশাক খাত। ব্যবসায়ীরা মন করছেন এ দুটি বিষয়ের প্রভাবে পোশাক ক্রয় ক্রেতারা কমিয়ে দিলেও এখন আবার ব্যবসা বাড়তে শুরু করেছে।

এছাড়া বাংলাদেশের দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন আর পোশাক খাতের শ্রমিক ও কর্মপরিবেশ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন যে চাপ তৈরি করেছিল সে পরিস্থিতিতে থেকেও কিছুটা বেরিয়ে এসেছে বাংলাদেশের পোশাক খাত।

‘নির্বাচনের বিষয়টি ছিল রাজনৈতিক। আমার জানা মতে পশ্চিমা ক্রেতারা এ নিয়ে কখনো কোনো প্রশ্ন আমাদের করেনি,’ বলছিলেন সিদ্দিকুর রহমান।

তবে ২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রে রফতানি প্রবৃদ্ধি ক্রমাগত হ্রাস পাওয়ার ক্ষেত্রে নির্বাচন সংক্রান্ত বিষয়ে পশ্চিমা চাপ ভূমিকা রেখেছিল বলে মনে করেছিলেন অনেকে।

যদিও ফারুক হাসান তার বিবৃতিতে প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখা আরো একটি বিষয়ের কথা উল্লেখ করেছেন। সেটি হলো- অপ্রচলিত বাজারে রফতানি বৃদ্ধি।

‘জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে রফতানি উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এ সময়ে এসব বাজারে রফতানি ১ দশমিক ৭৬ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ১ দশমিক ৬৪ বিলিয়ন ডলার,’ ফারুক হাসান বলেছেন তার বিবৃতিতে।

সরকার ও বিজিএমইএ’র তথ্য অনুযায়ী অপ্রচলিত বাজার বলতে তুরস্ক, সৌদি আরব, চীন, সংযুক্ত আরব আমিরাত, রাশিয়া, অস্ট্রেলিয়া ও কোরিয়ান প্রজাতন্ত্রে রফতানি বৃদ্ধির কথা বলা হয়েছে।

এছাড়া ইউরোপের বড় বাজার জার্মানিতে রফতানি গত কয়েক মাস ধরে কিছুটা কমলেও স্পেন, ফ্রান্স, ইতালি ও ডেনমার্কে রফতানি বৃদ্ধির কারণে সার্বিকভাবে ইউরোপে রফতানি কিছুটা বেড়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের বাজারই বড় চিন্তা
গত অর্থবছরেও একক দেশ হিসেবে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাত সবচেয়ে বেশি আয় পেয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র থেকেই। কিন্তু তারপরেও এই বাজার চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল কারণ ওই বছর যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে রফতানি ক্রমাগত কমছিল।

২০২২ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে প্রায় আড়াই বিলিয়ন ডলার রফতানি কম হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে।

অনেকেই মনে করেছিল নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সাথে টানাপড়েন আর শ্রম অধিকার নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর অবস্থানের প্রভাব পড়তে শুরু করার কারণেই তখন রফতানি কমেছিল।

যদিও সিদ্দিকুর রহমানের মতে ওই সময় রফতানি কমেছিল ব্যবসায়িক কারণে, যাতে বড় প্রভাব ছিল রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের।

ড. মুস্তাফিজুর রহমান বলছেন, অপ্রচলিত বাজারে বাংলাদেশের অংশীদারিত্ব কিছুটা বাড়লেও এর বড় অংশই এখনো অধরা রয়ে গেছে। এই বাজার ধরতে পারলে তৈরি পোশাক খাতের রফতানি অনেকাংশে বাড়ানো সম্ভব বলেও মনে করেন তিনি।
সূত্র : বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে হিট স্ট্রোকে পর্যটকের মৃত্যু জামালপুরে বউ-শাশুড়ি দ্বন্দ্বের জেরে সংঘর্ষ : নিহত ১, আহত ২ ঈশ্বরদীর তাপমাত্রা ৪১.৫ ডিগ্রি, বেঁকে যাচ্ছে রেলপথ আটক জাহাজের ক্রুদের ছেড়ে দেবে ইরান ফতুল্লা ৮৩০ গার্মেন্টেস শ্রমিক বিরুদ্ধে মামলা শ্রীনগরে ২ সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলার প্রতিবাদ টানা চতুর্থবার কমলো স্বর্ণের দাম দেশের রাজনীতি ঠিক নেই বলেই অর্থনীতির ভয়ঙ্কর অবস্থা : সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন বগুড়ায় ২ বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে একজন নিহত, আহত ৫ সোনারগাঁওয়ে বৃষ্টির জন্য ইসতিসকার নামাজ আদায় নেপালের পানিবিদ্যুৎ কিনছে ভারত, বাংলাদেশের অগ্রগতি কতটুকু?

সকল