আসন্ন বায়রা নির্বাচনের ভোটার তালিকা থেকে মোহাম্মদ রুহুল আমিন স্বপন ও জয়নুল আবেদিন জাফরসহ কয়েকজনের নাম বাদ দেয়ার সিদ্ধান্ত স্থগিত করে দেয়া হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ বাতিল করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপীল বিভাগের পূর্নাঙ্গ বেঞ্চ। বৃহস্পতিবার এ সংক্রান্ত তিনটি পিটিশনের ওপর সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের পূর্নাঙ্গ বেঞ্চে উভয় পক্ষের উপস্থিতিতে শুনানি শেষে এ আদেশ দেয়া হয়।
আগামী ২২ মে বায়রা’র ২০২১-২৩ মেয়াদকালের নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা থাকলেও করোনা প্রাদুর্ভাব বিবেচনায় এই নির্বাচন স্থগিত ঘোষণা করে নির্বাচন বোর্ড। এই নির্বাচনে মোহাম্মদ রুহুল আমিন স্বপন সম্মিলিত গণতান্ত্রিক জোটের প্যানেল প্রধান। তিনি ক্যাথারসিস ইন্টারন্যাশনালের মালিক এবং বায়রা’র সাবেক মহাসচিব। বায়রা’তে তার ৩২ লাখ টাকা কল্যাণ ফি বকেয়া রয়েছে, এমন প্রেক্ষিতে চূড়ান্ত ভোটার তালিকা থেকে তার নাম বাদ দেয় নির্বাচনী বোর্ড। একইসাথে আরো ২৮ জনের নামও বাদ যায় তালিকা থেকে। রুহুল আমিন স্বপন ও জয়নুল আবেদিন জাফর তাদের নাম বায়রা নির্বাচন, ২০২১ এর চূড়ান্ত ভোটার তালিকায় না আসাকে চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্ট বিভাগে রিট (পিটিশন নং ৪১৮৭/২০২১) দায়ের করেন। হাইকোর্ট বিভাগ গত ১১ এপ্রিল রিট পিটিশনের শুনানি শেষে 'ফাইনাল ভোটার তালিকা'য় তাদের নাম না প্রকাশ হওয়া কেন অবৈধ ও বেআইনী নয় এ মর্মে রুল ইস্যু করেন। আদেশে তাদেরকে ফাইনাল ভোটার তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত করে নেয়ার নির্দেশনা দেন। মামলায় বাণিজ্য সচিব, বাণিজ্য সংগঠনগুলোর পরিচালক (ডি.টি.ও) এবং বায়রাকে বিবাদি করা হয়।
এদিকে, স্বপনের পক্ষে দেয়া হাইকোর্টের রায়ের বিপক্ষে লিভ টু আপিল দায়ের করেন বায়রা’র সাবেক যুগ্ম মহাসচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, বায়রা এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। শুনানিতে বায়রা’র পক্ষে এটর্নি জেনারেল এ.এম আমিন উদ্দিন, অন্যদিকে আপিলকারীদের পক্ষে ছিলেন সিনিয়র আইনজীবী কামরুল হক সিদ্দিকী, মোহাম্মদ ওজিউল্লাহ ও আবু তালেব। তবে প্রধান বিচারপতি আপীলকারীদের পক্ষে এটর্নি জেনারেলকে শুধুমাত্র একজন সিনিয়র কাউন্সেল হিসেবে বায়রার পক্ষে শুনানীর সুযোগ দেন। অন্যদিকে রিটকারীদের পক্ষে শুনানী করেন সিনিয়র আইনজীবী আকতার ঈমাম ও সরোয়ার আলম।
শুনানি শেষে প্রধান বিচারপতিসহ অন্য ৫ জন বিচারপতির সমন্বয়ে গঠিত আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ ভোটার তালিকা থেকে বাদ পড়া রিটকারী রুহুল আমীন স্বপন ও জয়নুল আবেদিন জাফরের পিটিশন ও চেম্বার জজ আদালতে দেয়া এ সংক্রান্ত বায়রার সিদ্ধান্ত স্থগিতের আদেশটি বাতিল রাখেন। একইসঙ্গে তাদের সদস্যপদ স্থগিতে বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ তাজুল ইসলামের আবেদনটি বহাল করেন।
পুর্ণাঙ্গ বেঞ্চে এ আদেশের ফলে রিটকারীদের নাম চূড়ান্ত ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে নেয়ার জন্য যে আদেশ চেম্বার আদালতে দেয়া হয়েছিলো, তা চূড়ান্ত আদেশে বাতিল হলো। এ আদেশের পর রিট পিটিশনারদের আর কোনো আবেদনের সুযোগ থাকবে না বলে জানিয়েছেন আইনজীবী আবু তালেব।
তিনি জানান, একইসঙ্গে আদালতের এ আদেশের ফলে রিট পিটিশনজনিত কারণে জনশক্তি রফতানিকারকদের এই সংগঠনে নির্বাচন অনুষ্ঠানে আর কোনো প্রতিবন্ধকতা থাকবে না। যদিও নির্বাচনী প্রক্রিয়া করোনা মহামারির কারণে স্থগিত করা হয়েছে। তিনি জানান, প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন আপীল বিভাগ সিদ্ধান্ত দিয়েছেন যে, যেহেতু রিট পিটিশনটিই অচল, সেহেতু হাইকোর্টের প্রাথমিক আদেশও বেআইনী। তাই এ আদেশ স্থগিত করা হয়েছে। তিনটি লিভ টু আপীল একত্রে নিস্পত্তি হয়েছে।
এবিষয়ে রুহুল আমিন স্বপনকে ফোন দিলে তিনি রিসিভ করনেনি। তবে গত ১২ এপ্রিল এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি দাবি করেন, বায়রাতে তার কোনো বকেয়া নেই। নির্বাচন থেকে সরাতেই তিনিসহ আরো কয়েকজনকে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেয়া হয়েছে।
জানা যায়, আসন্ন বায়রা নির্বাচনে একটি প্যানেলের প্রধান হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বায়রা’র সাবেক সভাপতি ও যুবলীগ নেতা আবুল বাশার। এই প্যানেলের সাথে রয়েছেন সাবেক সভাপতি বেনজীর আহমেদ এমপি, শামীম আহমেদ চৌধুরী নোমনসহ আরো দু'জন প্রভাবশালী সাবেক সভাপতি। অন্য আরেকটি প্যানেলে রয়েছেন বায়রা’র সাবেক সিনিয়র সহসভাপতি ড. মোহাম্মদ ফারুক। তবে, বায়রা’র সদস্যরা মনে করছেন মূলত আবুল বাশারের সাথে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতো রুহুল আমিন স্বপনের নেতৃত্বাধীন প্যানেলের সাথেই।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা