বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার রীভা দাস গাঙ্গুলী। ভারতের বিভিন্ন স্মার্ট সিটির আদলে বাংলাদেশে স্মার্ট সিটির গড়ে তোলার পরামর্শ দেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালকে।
সোমবার অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সঙ্গে শেরেবাংলা নগরে তার দপ্তরে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন ভারতীয় হাইকমিশনার। এ সময় তারা আখাউড়া-আগরতলা রেলপথ প্রকল্পের নির্মাণকাজ, দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উন্নয়ন, বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন।
মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
স্মার্ট সিটির পরামর্শের বিষয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের স্মার্ট সিটি তৈরির যথেষ্ট সম্ভাবনা ও স্থান রয়েছে। ভারত আগ্রহী হলে আমরা যেকোনো সময়ে উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে স্মার্ট সিটি তৈরি করার জন্য প্রস্তুত রয়েছি।’
আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক ঐতিহাসিক। সময়ের আবর্তনে এ সম্পর্ক পারস্পরিক বিশ্বাসের ওপর ভর করে পরিপক্বতা লাভ করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার ভারতের সঙ্গে বহুবিধ সম্পর্ক গড়ে তুলতে প্রকৃতপক্ষে ভালো সম্পর্ক, বিশ্বাস, পারস্পরিক স্বার্থ ও সম্মানের ভিত্তিতে নীতি গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশ ভারতের সঙ্গে সম্পর্ককে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে থাকে। তৃতীয় লাইন অব ক্রেডিটের আওতায় ৪৫০ কোটি ডলারের ঋণে ভারতের সঙ্গে বিদ্যুৎ, রেলপথ, সড়ক, জাহাজ চলাচল, বন্দরসহ অবকাঠামো খাতে ১৭টি অগ্রাধিকার প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ এখন বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতি পেয়েছে বাংলাদেশ। অর্থনৈতিক গতিশীলতার কারণে শুধু শহরেই নয়, উন্নয়ন হয়েছে গ্রামীণ জনপদেও।
ভারতীয় হাইকমিশনার রীভা গাঙ্গুলী বাংলাদেশকে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বন্ধুপ্রতিম দেশ হিসেবে অভিহিত করে বলেন, পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে প্রতিবেশি দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে। আঞ্চলিক সংযোগ বৃদ্ধি এ অঞ্চলের সব দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি বয়ে আনবে। বাংলাদেশের প্রকল্প পরিচালনা ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত সুন্দর। রীভা গাঙ্গুলী বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার সাম্প্রতিক যোগাযোগব্যবস্থা বিশেষ করে রেল ও সড়ক যোগাযোগ উন্নয়নের বিষয়টি তুলে ধরেন। বাংলাদেশকে এই উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে হলে অবশ্যই যোগাযোগব্যবস্থা ও প্রাতিষ্ঠানিক উন্নয়নের দিকে আরও বেশি জোর দিতে হবে। ভারত বাংলাদেশের উন্নয়নের সহযোগী হিসেবে বাংলাদেশের এলএনজি, বিদ্যুৎ খাতসহ বিভিন্ন খাতে আরও বেশি বিনিয়োগ করতে আগ্রহী।
এ সময় অর্থমন্ত্রী বিদ্যমান দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের বিষয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন। অর্থমন্ত্রী বাংলাদেশের কৌশলগত ভৌগোলিক অবস্থানের কথা উল্লেখ করে বলেন, ভৌগোলিক অবস্থান দেশটিকে আঞ্চলিক যোগাযোগ, বিদেশি বিনিয়োগ এবং গ্লোবাল আউট আউটসোর্সিংয়ের একটি কেন্দ্রে পরিণত করেছে। বাংলাদেশে এখন জনমিতিক লভ্যাংশ (ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড) কাল চলছে, যা ২০৬১ সাল পর্যন্ত থাকবে। দক্ষ জনবল হিসেবে গড়ে তুলতে দেশের তরুণ-তরুণীদের বিভিন্ন ট্রেড প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। সরকার ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন করছে। বর্তমান যুগ হলো আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্স, ম্যাটেরিয়াল সায়েন্স, বায়োকেমিস্ট্রি, ব্লক চেইন টেকনোলজি, কোয়ান্টাম সায়েন্স, রোবটিকস, ন্যানো টেকনোলজি ইত্যাদির যুগ। আগামীর চাহিদা পূরণে শিক্ষা সংস্কারের মাধ্যমে আমাদের ক্লাসরুমগুলোতে পর্যায়ক্রমে এসব বিষয়ে শিক্ষা দিতে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ভারত চাইলে এই খাতেও বিনিয়োগ করতে পারে। ভ্যাট আদায়ে ফাঁকি রোধে ইলেকট্রনিক ফিসকাল ডিভাইস বা ইএফডি ব্যবহার বাধ্যতামূলক করার লক্ষ্যে ইএফডি ক্রয়প্রক্রিয়া এনবিআরে চলমান আছে। এ প্রক্রিয়াতেও ভারতকে অংশগ্রহণ করার জন্য আহ্বান জানান মন্ত্রী। পাশাপাশি বাংলাদেশে ভারত এনবিআরের অটোমেশন, ব্যাংকিং খাত, জ্বালানি মজুতকেন্দ্রসহ বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ করতে পারে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা