২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`
যে ক থা হ য় নি ব লা

লেখক হওয়ার জন্য প্রয়োজন সাধনা-প্রতিভা Ñ সাজজাদ হোসাইন খান

-

লেখক না হলে কী হতেন?
লেখক হওয়ার জন্য প্রয়োজন সাধনা-প্রতিভা। যাদের সেটি আছে তাদের প্রতি আল্লাহর অশেষ অনুগ্রহ বলতে হবে। লেখক না হলে কী হতাম কে জানে। তবে শৈশব থেকেই লেখালেখির প্রতি একটা ঝোঁক ছিল। হয়েতো সেটিই প্রলম্বিত হয়েছে। তবে ডাক্তার হবো এ-াতীয় ইচ্ছাও পোষণ করতাম কলেজ জীবনে। কিন্তু সেটি আর হয়ে ওঠেনি।
লেখক জীবন ও ব্যক্তি জীবনের কী ব্যবধান দেখেন?
আমার কাছে তো তেমন কোনো পার্থক্য আছে বলে মনে হয় না। আসন্ধ্যা লেখালেখির মধ্যেই জড়িয়ে থাকি। ঘরে যখন অবস্থান করি তখন একধরনের লেখা আবার অফিসে অন্য ধরনের। পত্রিকার জন্য এক রকম চিন্তা আবার সাহিত্য সৃষ্টিতে অন্য কিসিমের চিন্তা। দু’টিই তো লেখা, ব্যক্তি জীবন আর লেখক জীবন আমার কাছে একাকার।
ছড়া কালকে ধারণ করে নাকি কাল ছড়াকে ধারণ করে?
একটি অপরটির পরিপূরক। সব ছড়াই তো আর কালকে ধারণ করে না। আবার কালও সব ছড়ার প্রতি আগ্রহী নয়। তবে সে ক্ষেত্রে ছড়াকারের শক্তি সামর্থ্যটাই আসল। কালকে অতিক্রম করার চিন্তাভাবনা, সমাজ ও পাঠকের অন্তরকে কামড়ে ধরতে পারে এমন শিল্পীত শব্দের সমাহার থাকা চাই। তবেই তো একটি ছড়াকালোত্তীর্ণ হয়।
সমাজের প্রতি একজন কবির কী দায়?
সমাজের প্রতি কোনো রকম দায়ের চিন্তাভাবনা নিয়ে তো আর কোনো কবি কবিতা রচনায় যুক্ত হয় না। আমি মনের আনন্দে লেখি। আমার এ আনন্দ যদি পাঠককেও তৃপ্ত করে সেখানেই একজন কবির সার্থকতা। পাঠক তো সমাজেরই একটা অংশ।
সৃজনশীল রচনা শিল্পসম্মত হওয়ার পূর্বশর্ত কী?
প্রথমত, পাঠকের ভালোলাগা। পাঠক ও লেখকের হৃদয় যখন এক সরলরেখায় চলতে থাকে তখন বুঝতে হবে এ লেখায় শিল্প আছে; যা কিনা অন্তরকে আন্দোলিত করে। ঝুলে থাকে বহুদিন। ভাবায় হাসায় কাঁদায়। আসলে উপস্থাপনের কলাকৌশল একটি লেখাকে শিল্পসম্মত করে তোলে। রচনার মুন্সিয়ানা, উপমা উৎপ্রেক্ষার জুতসই ব্যবহার একটি রচনাকে উজ্জ্বল করে। শিল্পসম্মত করে।
ছড়া কবিতা না হওয়ার কারণ কী?
ছড়া কবিতা নয় এমন ধারণা আসলে সঠিক নয়। ছড়া কবিতারই ভিন্ন ধরন। বলা যায় কবিতারই একটি রূপ। একজন ছড়াকার চার কী ছয় লাইনে অনেক বার্তা পৌঁছাতে সক্ষম। তাকে অবশ্য সৃষ্টিশীল হতে হবে। তীক্ষè ও তির্যক ভাষায়, শব্দে। পাঠককে তা বহন করতেও অসুবিধা হয় না। হৃদয় থেকে হৃদয়ে পৌঁছে দেয়া যায় চটজলদি। তা ছাড়া সব কবি ছড়া লেখায় পারঙ্গম নন। ভিন্ন দিকে অনেক ছড়াকারই কবিতায় পারদর্শী। মোদ্দাকথা, একজন ভালো কবিই হতে পারবেন ভালো একজন ছড়াকার। তাই ছড়া ও কবিতা এক ও অভিন্ন। উভয়েরই বসবাস হৃদয় গহিনে, মস্তিষ্কে।
জীবনের ব্যর্থতার কথা বলুন?
ব্যর্থতার চিন্তাভাবনার সময় এখনো আসেনি।
কবিতা যেমন উন্নত হতে হবে, কবিকেও হতে হবে উন্নত মানুষ, আমাদের কবিরা কি এ কথা ভাবেন?
যারা ভাবেন না তারা তো ভাবনার পশ্চাতেই পড়ে থাকেন। উন্নত মানুষের মস্তিষ্কেই জন্ম নেয় উন্নত চিন্তা। আমার যা চিন্তাভাবনা আমার আচরণে তো তারই প্রকাশ ঘটবে। সেটিই তো স্বাভাবিক। একজন কবির কবিতা পাঠ করলে সে কবির অন্তরের অবস্থানটা সহজেই বোঝা যায়। তেঁতুলগাছে তো আঙুর প্রত্যশা করা এক ধরনের আহম্মকি।
সমসাময়িক বাংলা ছড়া কিভাবে দেখছেন?
ছড়ার জন্য অনেকটাই সম্প্রসারিত হয়েছে। শক্তিশালী ছড়াকারও উঠে আসছেন। কৌশলগত পরিবর্তন দেখা গেলেও বিষয়ভাবনায় আরো অগ্রসর হওয়া প্রয়োজন। ভালো-মন্দ মিলিয়ে বাংলাদেশের ছড়ার জগৎ বলতে গেলে উজ্জ্বল। অনেক মেধাবী ছড়াকার এখন ছড়ার ভুবনকে শাসন করছে। বলতে গেলে সমগ্র বাংলা সাহিত্যকে।
আপনার জীবন দর্শন কী?
দর্শন টর্শন নিয়ে তেমন কোনো চিন্তাভাবনা নেই। তবে জীবন যত দিন চলমান থাকে, আল্লাহ রাখেন, তত দিন সত্যকে আঁকড়ে থাকতে চাই। সুন্দর ও শোভনের বাগানে স্বচ্ছন্দে হাঁটাহাঁটি করতে পারলেই যথেষ্ট।
খ্যাতির তৃষ্ণা একজন কবির জন্য ক্ষতিকর নয় কি?
তৃষ্ণা থাকা ভালো। তবে কেবল তৃষ্ণাই তো সব কিছু নয়। সে জন্য কর্ম ও উদ্যম প্রয়োজন। অতিরিক্ত তৃষ্ণা অনেক মহৎ উদ্যোগকেই ভণ্ডুল করে দেয়। এ বিষয়েও সজাগ ও সচেতনতা বাঞ্ছনীয়। খ্যাতির জন্য প্রয়োজন মেধা ও সাধনা।
নিজের সম্পর্কে যে অভিযোগ মিষ্টি মনে হয়?
সব অভিযোগকেই আমি সহজভাবে গ্রহণ করি। প্রধান অভিযোগ ক’টি আসে আমি স্বল্পপ্রজ লেখক, অলস লেখক।
এখনো অপূর্ণ যে স্বপ্ন?
স্বপ্ন বেশির ভাগ সময় অপূর্ণই থাকে।
কোন বই পড়ার ইচ্ছা এখনো তাড়িত করে?
সময়ের অভাব। অনেক বই-ই এখনো পাঠের আওতায় আনতে পারিনি।
পাঠকের ভালোবাসা কেমন পান?
পাঠকের ভালোবাসা আমাকে উজ্জীবিত করে। তৃপ্ত করে।
এখনো উজ্জীবিত রাখে যে বাণী?
‘মুমিন কখনো হতাশ হয় না’ আল-কুরআন।

সাক্ষাৎকার গ্রহণ : মেজবাহ মুকুল


আরো সংবাদ



premium cement