২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

যেখানে বাংলাদেশ

-


ইট-পাথরের এ রঙমহলে আর নয়, আমি যাবো মাটির নিঝুম
দ্বীপে। সেখানে বাংলাদেশ রাজকুমারীর মতো রূপকথা হয়ে আছে
আজো। তার রূপে বুঁদ হয়ে আছে নীলাকাশ। বিচিত্র পাখিরা
স্বাধীনতা ঠোঁটে নিয়ে উড়ে যায় ঝাঁক বেঁধে আকাশের কাছে,
তারপর ফিরে আসে সবুজাভ শীতল জমিনে ফের। কি-নিশ্চিন্তে
কাঁকড়ারা, হাত-পা ছড়িয়ে শুয়ে থাকা অলস সৈকতে, মেতে ওঠে
আনন্দখেলায়! চেয়ে চেয়ে দ্যাখে তা দুদÑ একটি কচ্ছপ; তারপর
ধীর পায়ে নেমে যায় ঢেউ তোলা অথই পানিতে। শিশির জড়ানো
ভোরের রোদ্দুরে বনের ভেতর থেকে বের হয়ে আসে একদল
চিত্রল হরিণ; তাদের চঞ্চল পায়ের আঘাতে নিস্তব্ধ মাঠের
সুগন্ধি ঘাসেরা কেঁপে কেঁপে ওঠে যেন ভয়ে। হঠাৎ কোথাও
ডেকে ওঠে গাঙচিল; সেই শব্দে খসখস আওয়াজ ছড়িয়ে
শুকনো পাতায় হয়ে যায় মুহূর্তে উধাও তারা বনের গভীরে।
কেওড়ার ডালে বসে একটি নিঃসঙ্গ ঘুঘু ডেকে চলে অবিরাম তার
খেলার সাথীকে মাথা কুটে কুটে। সারা দিন বুনো খরগোশ আর
কাঠবিড়ালীর চলে কত লুকোচুরি খেলা বনময়! ডাইনোসরের মতো
গুইসাপ ফণা তুলে চলে হেলেদুলে। সন্ত্রস্ত পেঁচারা দলবেঁধে উড়ে উড়ে
করে চেঁচামেচি। দূর থেকে উঁকি মারে এক জোড়া লাজুক নেউল;
এদিক-ওদিক তাকায় কয়েকবার, তারপর ছুটে যায় নিরুদ্দেশে
মুখ নিচু করে। আলো ও ছায়ায়, রৌদ্র ও বৃষ্টিতে দুপুর ও
বিকেল সেখানে ধরে কত মোহনিয়া রূপ! সেই রূপ ম্লান করে
তারপর যখন সেখানে নেমে আসে সুদর্শনা রাত চাঁদ-তারা
সাথে নিয়ে, মনে হয়, পৃথিবীতে দুচোখ ধাঁধানো এত রূপ
দ্যাখেনি কখনো কেউ এর আগে। সোনারঙ জোছনার জলে
ভিজে যাওয়া কেওড়া পাতার আবডালে আমি যেন দেখতে
পাই এক দুধসাদা রূপসীর মুখ, যে আমাকে অত্যাশ্চর্য তার
সবুজ চোখের ইশারায় ডেকে নিয়ে যায় তার হৃদয়ের কাছে,
যে হৃদয়ে কিলবিল করে বুনোহাঁস, পাতিঘুঘু, চিত্রল হরিণ
আর এক ঝাঁক বুজকুড়ি তোলা খরসুলা মাছ।ু

 


আরো সংবাদ



premium cement