০৬ মে ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`


পছন্দের মানুষকে জীবনসঙ্গী হিসেবে পেতে পাগলা মসজিদের দানবাক্সে চিঠি

আকুতি ভরা সেই চিঠি - ছবি - নয়া দিগন্ত

কিশোরগঞ্জে পাগলা মসজিদের দানবাক্সে এবার সাত কোটি ৭৮ লাখ ৬৭ হাজার ৫৩৭ টাকা পাওয়া গেছে, যা ওই মসজিদের দানবাক্স থেকে পাওয়া এ যাবতকালের সর্বোচ্চ!

মসজিদের নয়টি দানবাক্স বা সিন্দুক খুলে এসব টাকা পাওয়া গেছে।

শুধু কী টাকা?

প্রতিবারের মতো এবারো দানবাক্সে মিলেছে বিদেশী মুদ্রা ও সোনা-রূপার বিপুল অলঙ্কার!

এই টাকা ও অলঙ্কারের ভাঁজে ভাঁজে মিলেছে চিঠি আর চিরকুট!

প্রতিবারই আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়ায় দানবাক্সে পাওয়া এসব চিঠি। এতে মানুষ তাদের জীবনে পাওয়ার আনন্দ, না-পাওয়ার বেদনা, আয়-উন্নতির ফরিয়াদ, চাকরির প্রত্যাশা, পরীক্ষায় ভালো ফলাফলের আশা ও রোগব্যাধি থেকে মুক্তি পেতে আকুতি প্রকাশ করে। এমনকি শত্রুকে ঘায়েলের দাবিও থাকে কোনো কোনো চিঠিতে।

এবার পারভীন আক্তার নামে এক মেয়েকে জীবনসঙ্গী হিসেবে পেতে সাইফুল ইসলাম নামে হবিগঞ্জের এক তরুণের চিঠি ব্যাপক আলোড়ন তুলেছে।

দুইপাশে দাগ টানা সাদা কাগজে লেখা এই চিঠি। খুব আকুতি ভরা।

চিঠিতে তিনি লিখেছেন, 'বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম, আমি একটা মেয়েকে ভালবাসি কিন্তু মেয়েটা আমাকে ভালবাসে না। আমি আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করি যে আল্লাহ তাকে যেন আমার জীবন সঙ্গী হিসেবে কবুল করেন। মেয়েটার নাম মোছা: পারভীন আক্তার। আমার নাম সাইফুল ইসলাম। আপনারা আমাদের জন্য দোয়া করবেন। আল্লাহ যেন আমাদেরকে কবুল করেন। ঠিকানা, সিলেট হবিগঞ্জ।'

আরেকটা চিঠি সম্ভবত এক ছাত্রীর। রুল করা কাগজে লেখা এই চিঠিতে তিনি লিখেছেন, 'আল্লাহ আমি যেন একটা মান-সম্মত নাম্বার পাই। একটা ভালো কলেজে ভর্তি হতে পারি। আমার মাথার সব খারাপ চিন্তা দূর হয়ে যায়। আল্লাহ আমার মা-বাবাকে ভালো রেখ। আমি যেন রফিকুল ইসলাম কলেজে ভর্তি হতে পারি।'

ধারণা করা হচ্ছে ওই চিঠিটি ভৈরবের কোনো ছাত্রীর। কারণ কিশোরগঞ্জের ভৈরবে রফিকুল ইসলাম মহিলা কলেজ নামে মেয়েদের একটি কলেজ রয়েছে।

এসব চিঠি ছাড়াও অসংখ্য চিঠি পাওয়া গেছে দানবাক্সে।

সাধারণ মানুষের বিশ্বাস এই মসজিদে দান করলে মনের বাসনা পূরণ হয়। এই বিশ্বাস থেকেই সাধারণ মানুষ টাকা পয়সা অলঙ্কারাদি নিয়ে ছুটে আসে এই মসজিদে। মুসলমান ছাড়াও অন্য ধর্মের লোকজনও এ মসজিদে মনের আশা পূরণ করার জন্য দান করে থাকে।

আর এ কারণেই মসজিদের দানবাক্স খুললেই পাওয়া যায় কাড়ি কাড়ি টাকা। মসজিদের দানবাক্সে কী পরিমাণ টাকা পাওয়া গেল, তা নিয়ে এলাকার লোকজনেরও থাকে অনেক কৌতুহল। তাই গণনা শেষে প্রতিবারই জানিয়ে দেয়া হয় দানবাক্সের টাকার অঙ্ক।

তবে স্থানীয় অনেকে বলছেন, স্বচ্ছতার স্বার্থে আয়ের পাশাপাশি মসজিদের টাকা-পয়সা ব্যয়ের হিসাবটাও জনসম্মুখে নিয়মিত প্রকাশ করা উচিত। এছাড়াও প্রতিদিন মসজিদটিতে কোরআন মজিদ, মোমবাতি, গবাদি পশু, গাছের ফলফলাদি ইত্যাদি মানত হিসেবে দান করা হয়। টাকার মূল্যে এগুলো দান বাক্সের টাকার সমপরিমাণ বা কোনো কোনো সময় এর চেয়ে বেশি হয় বলে অনেকের ধারণা। এগুলোর হিসাব মসজিদ কমিটির পক্ষ থেকে কোনো সময়ই প্রকাশ করা হয় না। এগুলো বিক্রির টাকার হিসাব জনসম্মুখে নিয়মিত প্রকাশ করারও দাবি এলাকাবাসীর।


আরো সংবাদ



premium cement