২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`
২ হাজার কোটি টাকার মানিলন্ডারিং মামলা

ফরিদপুরে আলোচনায় রুবেল-বরকতের প্রভাবশালী পৃষ্ঠপোষকরা

সাজ্জাদ হোসেন বরকত ও ইমতিয়াজ হাসান রুবেল - ছবি : সংগৃহীত

ফরিদপুরে রাজনৈতিক ক্ষমতাকে পুঁজি করে দুই হাজার কোটি টাকা উপার্জন ও পাচারের ঘটনায় দায়েরকৃত মানি লন্ডারিং মামলায় একের পর এক গ্রেফতারে ফরিদপুরের জনমনে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী নেতাদের মাঝে গ্রেফতার আতঙ্ক বিরাজ করছে। ইতোমধ্যে বহুল আলোচিত দুই ভাই সাজ্জাদ হোসেন বরকত ও ইমতিয়াজ হাসান রুবেলসহ গ্রেফতার হয়েছেন আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের আরো ১৬ জন নেতা। আরো অনেকেই গ্রেফতারের প্রক্রিয়ায় রয়েছেন।

তবে তাদের সাথে শহর ছেড়ে জেলার সর্বত্র এবার তুমুল আলোচনা চলছে এই বরকত ও রুবেলদের পৃষ্ঠপোষক কারা? তাদের গ্রেফতারের বিষয়টি সর্বত্র ব্যাপকভাবে আলোচিত হচ্ছে। আওয়ামী লীগের দ্বায়িত্বশীল নেতৃবৃন্দের অভিযোগ, সাবেক মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও তার ভাই মোহতেসাম হোসেন বাবরের হাত ধরে রাজনীতিতে আসা বরকত ও রুবেল রাতারাতি ফরিদপুরের রাজনীতির নিয়ন্ত্রক হয়ে ওঠেন।

ফরিদপুরের পুলিশ সুপার আলিমুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেছেন, ফরিদপুরে আর কাউকে সন্ত্রাসী ও অপরাধমূলক কর্মকা- করতে দেয়া হবে না। কারো বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ পেলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

জানা গেছে, সম্প্রতি পুলিশের চলমান অভিযানের শুরুতেই গত ৭ জুন রাতে ৭ সহযোগীসহ গ্রেফতার হন সাজ্জাদ হোসেন বরকত ও তার ভাই ইমতিয়াজ হাসান রুবেল। বরকত ছিলেন ফরিদপুর শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। ২০১৫ সালে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েই তিনি শহর যুবলীগের সভাপতি হন। এছাড়া জেলা বাস মালিক গ্রুপের সভাপতিও হন। তারপরই শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদ পান।

তার ভাই ইমতিয়াজ হাসান রুবেলের সাংবাদিকতার কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতা ছাড়াই ফরিদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি হন এবং একটি পত্রিকার ডিক্লারেশনও নেন। ওই পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন রুবেল আর প্রকাশক হন বরকত।

এছাড়া ফরিদপুরের বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনও তারা কব্জায় নেন। বিরুদ্ধমতকে দমন করতে তারা স্থানীয় রাজনৈতিক ক্ষমতাকে ব্যবহার করে চরমপন্থার একের পর এক জঘণ্য নজির সৃষ্টি করেন তারা। রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায় সন্ত্রাস, জমি দখল, টেন্ডারবাজিসহ নানা অপকর্ম করে বেড়াতেন তারা। এরপর একের পর এক বিভিন্ন সরকারি সংস্থা দখল করে টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি ও জমি দখল করে সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলেন। যাকে খুশি তাকে মারধর ও লাঞ্ছিত করতেন। তাদের আক্রমণের শিকার অনেকে শহর থেকে পালিয়ে অন্যত্র চলে যান।

ফরিদপুরের বাইরেও খুলনা, গোপালগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, মাগুরা, পটুয়াখালী, শেরপুর, সিলেট, গাজীপুর ও দিনাজপুরেও ঠিকাদারি কাজের নিয়ন্ত্রণ ছিলো তাদের।

গ্রেফতারের পর ঢাকায় সিআইডি পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদ ও আদালতে দেয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে তারা এসব জানিয়েছেন।

পুলিশ জানিয়েছে, জবানবন্দিতে অন্যান্য আরো অনেক সহযোগীর নামও বলেছেন তারা। তাদের গ্রেফতারের প্রক্রিয়া চলছে।

ফরিদপুর জেলা পুলিশের সূত্র জানায়, মানি লন্ডারিং মামলায় সর্বশেষ ঈদের আগের দিন ও ঈদের দিনে ফরিদপুর শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি নাজমুল ইসলাম খন্দকার ওরফে লেবি, শহর যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসিবুর রহমান ওরফে ফারহান এবং জেলা শ্রমিক লীগের কোষাধ্যক্ষ বিল্লাল হোসেনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের ঢাকায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

ফরিদপুরের জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি শামসুল হক ভোলা মাষ্টার বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফরিদপুরের বিভিন্ন উন্নয়নে যেসকল কর্মকান্ড অনুমোদন করেছেন তার সব ক্ষেত্রেই দুর্নীতি হয়েছে। তার অভিযোগ, এই লুটপাটে বরকত-রুবেলকে ব্যবহার করেছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন এবং তার ভাই খন্দকার মোহতেশাম হোসেন বাবর। এখন সবার সম্পদের হিসাব নিলেই মূল খবর বেরিয়ে আসবে।

ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মাসুদ হোসেন বলেন, রুবেল-বরকতের জন্ম হঠাৎ করে হয়নি। আশ্রয়-মদদদাতাদের কারণে তাদের উত্থান হয়েছে। তাদের দাপটে আওয়ামী লীগের নিবেদিত কর্মীরা কোণঠাসা হয়ে ছিলো। সকলকেই আইনের আওতায় আনতে হবে, যাতে ক্ষমতা পেলেই কেউ যা খুশি তা-ই করতে না পারে।

জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক বিপুল ঘোষ বলেন, ফরিদপুর মেডিকেল কলেজের দুর্নীতির সাথে সরকারি একটি গণমাধ্যমে কাজ করে এক সাংবাদিকের সম্পৃক্ততার কথা উঠে এসেছে। পাশাপাশি বরকতের শ্বশুর ও তার শ্যালকদের চাঁদাবাজি ও জমি দখলের ঘটনাগুলোর সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া দরকার।

সব সন্ত্রাসীকে আইনের আওতায় আনার জোর দাবি জানান জেলা আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক আইভী মাসুদ। তিনি দুর্নীতিবিরোধী এ অভিযানের জন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান।

ফরিদপুুর সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অমিতাভ বোস বলেন, দলের সুবিধাভোগীরাই আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার আসামি নূর মোহাম্মদ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা শওকত আলী, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মনির হোসেনকে কুপিয়ে আহত করেছিলেন। তারা ফরিদপুর প্রেসক্লাবে একাধিক বারের সভাপতি ও ‘নাগরিক বার্তা’ পত্রিকার সম্পাদক কবিরুল ইসলাম সিদ্দিকী, প্রথম আলোর সাংবাদিক পান্না বালা এবং ফরিদপুর মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ মো: হালিমকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে।

ফরিদপুর সচেতন নাগরিক কমিটির সাবেক সভাপতি মজিবর রহমান বলেন, দখলদারদের অবৈধ সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে যার যার সম্পত্তি তাদের কাছে ফিরিয়ে দেয়া হোক। এছাড়াও যেসব সম্পদ অবৈধভাবে উপার্জন করেছে সেগুলো বাজেয়াপ্ত করে রাষ্ট্রীয় কোষাগারের জমা দেয়ার আহ্বান জানান।


আরো সংবাদ



premium cement
যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশী শ্রমিকদের ভিসা সহজ করার আহ্বান প্রবাসী প্রতিমন্ত্রীর চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিদ্বন্দ্বী না হয়ে অংশীদার হওয়া উচিত : শি জিনপিং ওকাব সভাপতি নজরুল ইসলাম, সম্পাদক জুলহাস আলম পাবনায় ১০ কোটি টাকার অনিয়মে ৩ ব্যাংক কর্মকর্তা কারাগারে চুয়েট ১১ মে পর্যন্ত বন্ধ, শিক্ষার্থীদের আন্দোলন স্থগিত নরসিংদীতে হিট স্ট্রোকে শিশুর মৃত্যু হিলিতে ভটভটি-মোটরসাইকেলের সংঘর্ষে নিহত ২ ‘গাজার ধ্বংসাবশেষ পরিষ্কার করতে ১৪ বছর লাগতে পারে’ সখীপুরে ছাগল চুরির মামলায় মা-ছেলে কারাগারে ‘অন্যায়ের সাথে নয়া দিগন্তের সাংবাদিকরা কখনোই আপোষ করেন না’ রাজশাহীতে হলে ঢুকতে না দেয়ায় রাস্তায় বিসিএস পরীক্ষার্থীর কান্না

সকল