২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`


হাত নেই, পা দিয়ে লিখেই সফল হাবিব

হাবিবুর রহমান - ছবি : নয়া দিগন্ত

জন্ম থেকেই দুই হাত নেই হাবিবের। পুরো নাম হাবিবুর রহমান। হাত না থাকায় পড়াশোনা থেকে দুরে থাকেনি। পায়ে ধরেছে কলম। দুরে ঠেলে দিয়েছে সব প্রতিবন্ধকতা। পিএসসি, জেডিসিতে সাফল্যের পর দাখিল (এসএসসি সমমান) পরীক্ষায় জিপিএ-৪.৬৩ (এ গ্রেড) পেয়েছে হাবিবুর রহমান।

সে রাজবাড়ীর কালুখালী উপজেলার হিমায়েতখালি গ্রামের আব্দুস সামাদ ও হেলেনা খাতুনের ছেলে।

দরিদ্র মা-বাবার আপ্রাণ চেষ্টা এবং শিক্ষক-সহপাঠীদের অনুপ্রেরণায় এমন সাফল্য বয়ে আনতে পেরেছে বলে জানিয়েছে হাবিব। যদিও জিপিএ-৫ না পাওয়াতে মনের কোনো আফসোস রয়েছে।

কিন্তু ছোট বেলা থেকেই হাবিব খুব মেধাবী। পা দিয়ে লিখে পিএসসি ও জেডিসি’তেও ভালো রেজাল্ট করার পর ধারাবাহিকতা রেখেছে দাখিল পরীক্ষায়ও। এখন তার উচ্চশিক্ষা লাভে প্রধান বাধা অভাব।

দরিদ্র কৃষক পরিবারের সন্তান হাবিবুর রহমান। পরিবারের সামান্য জমিতে চাষাবাদ ও অন্যের জমিতে কাজ করে তাদের সংসার চলে। চার ভাই বোনের মধ্যে তৃতীয় হাবিব। জন্ম থেকেই তার দুই হাত নেই। ছোট বেলায় মা-বাবা, চাচা ও পরিবারের অন্যান্যদের অনুপ্রেরণায় পা দিয়ে লেখার অভ্যাস করে সে। কালুখালী উপজেলার মৃগী ইউনিয়নের হিমায়েতখালি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পা দিয়ে লিখে প্রাথমিক সমাপনীতে ৪.৬৭ পেয়েছিল সে। পরে বাড়ি থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরের পাংশা উপজেলার পুঁইজোর সিদ্দিকিয়া ফাজিল (ডিগ্রী) মাদরাসা থেকে জেডিসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ৪.৬১ পেয়ে পাস করে। পরবর্তীতে একই মাদরাসা থেকে ২০২০ সালে দাখিল (এসএসসি সমমান) পরীক্ষায় নিয়ে পায় জিপিএ-৪.৬৩। তবে প্রত্যাশিত ফলাফল না হওয়ায় অখুশি হাবিব। কিন্তু হাবিবের এই সাফল্যে খুশি শিক্ষক, অভিভাবক ও সহপাঠীরা।

হাবিবের চাচা মোঃ আব্দুল খালেক জানান, তার ভাই আব্দুস সামাদ বৃদ্ধ। চোখে কম দেখেন। নিজের বলতে সামন্য একটু জমি আছে, যা চাষাবাদ ও অন্যের জমিতে শ্রম দিয়ে তার সংসার চালান। সংসারে অভাব অনটন লেগেই থাকে। তারপরও তিনি তার তিন মেয়ে ও এক প্রতিবন্ধী ছেলেকে লেখাপড়া শেখানোর চেষ্টা করেছেন। হাবিবের জন্ম থেকে দুই হাত নেই। কিন্তু ছোট বেলা থেকে হাবিব মেধাবী। পিএসসি, জেডিসি, সবশেষ দাখিল পরীক্ষায় পা দিয়ে লিখে ভালো রেজাল্ট করেছে। এখন তার উচ্চশিক্ষায় বাধা অভাব।

তিনি বলেন, এতদিন তিনি তার নিজের পড়াশুনার পাশাপাশি হাবিবকে সহযোগিতা করেছেন। এখন মাস্টার্স শেষ করে চাকরির জন্য চেষ্টা করছেন। তাই আগের মতো আর সহযোগিতা করতে পারছেন না। হাবিবের ইচ্ছা সে বড় আলেম হবে।

হাবিবুর রহমান জানায়, দাখিল পরীক্ষায় সে যে রেজাল্ট করেছে তাতে খুশি না। মূলত অভাবই তার লেখাপড়ার উপর প্রভাবে ফেলেছে। তারপরও সে পড়াশুনা চালিয়ে যেতে চায়। কিন্তু পড়ালেখায় যে খরচ তাতে কী হবে বলতে পারছে না। তবে সে বড় আলেম হতে চায়।

সে জানায়, পরীক্ষার সময় পা দিয়ে লিখতে একটু সমস্যা হত। ওই সময় সংসারের অভাব ও লেখাপড়া করে বড় কিছু হবে ভেবে পরীক্ষা দিত।

হাবিবের মা হেলেনা খাতুন বলেন, অনেক কষ্ট করে ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া শেখানোর চেষ্টা করছি। হাবিবের দুই হাত নেই। কিন্তু পড়াশোনা করার অনেক ইচ্ছা তার। তাই ছোটবেলা থেকে পা দিয়ে লেখার অভ্যাস করিয়েছে পরিবারের সবাই। ছোট থেকেই ভালো রেজাল্ট করে আসছে সে। কিন্তু এখন তো অনেক খরচ। আর পারছি না। হাবিবের পড়ালেখায় কেউ একটু সহযোগিতা করলে ওর আলেম হওয়ার ইচ্ছা পূরণ হত।

পুঁইজোর সিদ্দিকিয়া ফাজিল (ডিগ্রী) মাদরাসার অধ্যক্ষ সাঈদ আহমেদ বলেন, এ বছর তার মাদরাসায় দাখিল পরীক্ষায় পাসের হার শতভাগ। এর মধ্যে হাবিব ছেলেটার দুই হাত না থাকার পরও পা দিয়ে লিখে ভালো রেজাল্ট করেছে। অতীতে মাদরাসা থেকে ওকে সহযোগিতা করা হয়েছে এবং ভবিষ্যতেও করা হবে।

এদিকে হাবিবের এমন সাফল্য দেখে বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় কৃষকলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক নূরে আলম সিদ্দিকী হক আগামী দুই বছর হাবিবের পড়ালেখার যাবতীয় খরচ বহন করবেন বলে জানিয়েছেন।


আরো সংবাদ



premium cement