২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`


নাগফণা নাগেশ্বর

নাগফণা নাগেশ্বর -

নাগেশ্বর নিয়ে লিখতে বসে প্রথমেই একটা চাকমা ছড়া মনে পড়ছে-
নাক্স গার্ছ রিবাং যু
ধুলন্ বুনি কেরেং যু
কেরেং যু ধুলন- কোবেদ চাক্
ওয়াং ডগত্তন চিত্তি
চুপ গরি থাক্ ।
অর্থ হল, ‘নাক্স’ মানে নাগেশ্বর ‘ধুলন’ মানে দোলনা, এই দোলনা বেতের তৈরি, ‘কেরেংযু’ অর্থ কাঁছা কোরাক বাঁশের তৈরি দোলনা যেখানে চাকমা শিশুদের শুইয়ে দোল খাওয়াতে খাওয়াতে না কাঁদিয়ে ঘুম পড়ার জন্য ওয়াং (চিলজাতীয় বৃহদাকার নিশাচর পাখিবিশেষ) এর ডাক বা শব্দের ভয় দেখানো হয়। ছড়াটির মাঝেই সুস্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে, নাক্স অর্থাৎ নাগেশ্বর চাকমা আদিবাসীরা যেখানে থাকে সেখানকার একটি সুপরিচিত ও উল্লেখযোগ্য গাছ। চাকমারা আছে রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলায়। তাই রাঙ্গামাটি যাচ্ছি শুনে নিসর্গী ও কথাসাহিত্যিক বিপ্রদাশ বড়–য়া দাদা স্মরণ করিয়ে দিলেন, যাচ্ছেন যখন, ওখানে গিয়ে নাগকেশরকে দেখে আসবেন। নাগেশ্বরই যে নাগকেশর তা রাঙ্গামাটি গিয়েই পরিষ্কার হলো। তবে ঢাকায় বিভিন্ন উদ্যানে ও রাস্তার পাশে, ভবনের প্রাঙ্গণে যেসব নাগেশ্বরের দেখা মেলে রাঙ্গামাটির নাগেশ্বরের সাথে তার কিছুটা তফাৎ আছে বৈকি। ঢাকার গাছগুলো বামন, ফুলও ছোট। অন্যদিকে পার্বত্য এলাকায় দেখা নাগেশ্বরের গাছ অনেক বেশি হৃষ্টপুষ্ট, বড়, ঝোপালো। শুধু কি তাই? ফুলও ফোটে বেশ বড় বড়। ফেব্রুয়ারিতে রাঙ্গামাটি গিয়ে গাছের মাথায় মাথায় হলদে কেন্দ্রযুক্ত সাদা পাঁপড়ির নাগেশ্বর ফুলগুলোকে ফুটতে দেখলাম। ক’দিন পর ঢাকায় ফিরে এসে ঢাকার নাগেশ্বরের দিকে তাকিয়ে ফুল খোঁজার চেষ্টা করলাম। কিন্তু হায়! ফুল কোথায়? কোনো গাছেই একটা ফুলও ফোটেনি। তাই ফুল ফোটার অপেক্ষায় রইলাম। দিন যায়। রাত যায়। অবশেষে মার্চে গিয়ে ঢাকার নাগেশ্বর গাছে ফুলের দেখা পেলাম। অবস্থান, আবহাওয়া না প্রজাতি- এর কোন কারণটা যে নাগেশ্বরের ফুল ফোটানোয় এমন পার্থক্য ঘটিয়ে দিল কে জানে? তবে পার্বত্য এলাকায় দেখা নাগকেশর তথা নাগেশ্বরের আদি নিবাস যে পার্বত্য চট্টগ্রাম সেটা মেনে নিতে সংশয় রইল না। পুঁথিপত্রে নাগেশ্বরের উৎপত্তি পেলাম ইন্দো-মালয় অঞ্চল। ভারতের পূর্বাংশ, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, শ্রীলংকা, আন্দামান, মায়ানমার, বাংলাদেশ প্রভৃতি দেশে গাছটির বিস্তৃৃতি রয়েছে। নাগেশ্বরের ইংরেজি নাম আয়রন উড ট্রি। তাহলে নাগেশ্বরই কি এ দেশের লোহা কাঠ। হবে হয়তো। কেননা, নাগেশ্বরের কাঠের রঙ লোহার মতোই লালচে ধূসর ও শক্ত। নাগেশ্বর মাঝারি আকারের চিরসবুজ বৃক্ষ। তবে বইপত্রে আর একটি গাছও লোহাকাঠ নামে এ দেশে পরিচিত। নাগেশ্বর গাছ ১৫ মিটার পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। কাণ্ড গোলাকৃতি, সরল, বাকল ধূসর ও মসৃণ। ছোট গাছকে পিরামিডের মতো দেখায়। এর গড়ন ও পাতার সৌন্দর্যের জন্যই মূলত; গাছটি পথশোভা বর্ধনকারী গাছ হিসেবে পার্কে বা রাস্তার ধারে লাগানো হয়।


আরো সংবাদ



premium cement