২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

পোড়ামাটির ঘোড়া বৃত্তান্ত

-


আজ তোমরা জানবে পোড়ামাটির ঘোড়া সম্পর্কে। আধুনিক ও যান্ত্রিক খেলনাসামগ্রী আসার আগে পোড়ামাটির ঘোড়া ছিল এ দেশের শিশু-কিশোরদের বিশেষ খেলনা।
লিখেছেন মৃত্যুঞ্জয় রায়

জানো, বাংলার পোড়ামাটির বিভিন্ন লোকজ খেলনার মধ্যে বিভিন্ন পশুপাখি অন্যতম? শিশুরা এসব খেলনা পেয়ে যারপরনাই আনন্দিত হয়। আধুনিক ও যান্ত্রিক খেলনাসামগ্রী আসার আগে ওগুলোই ছিল এ দেশের শিশু-কিশোরদের প্রধান খেলনা। এগুলোর মধ্যে পোড়ামাটির ঘোড়া এক বিশেষ ঐতিহ্যের পরিচায়ক। সুপ্রাচীনকালেও বঙ্গদেশে ওর অস্তিত্ব ছিল বলে প্রমাণ পাওয়া যায়। এ দেশে পোড়ামাটির ঘোড়ার সবচেয়ে বেশিসংখ্যক নিদর্শন পাওয়া গেছে পাহাড়পুরে। পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার থেকে সংগৃহীত পোড়ামাটির ঘোড়ার কিছু নিদর্শন বগুড়ার মহাস্থানগড় জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে। সেগুলোর রূপ অনেকটা রাজকীয় ঘোড়ার মতো। ময়নামতির একটি পোড়ামাটির ফলকেও জিন চাপানো ঘোড়া খোদাই করা আছে। পাহাড়পুরে এত বেশিসংখ্যক পোড়ামাটির ঘোড়া পাওয়ার পেছনে কোনো টোটেম বা ধর্মবিশ্বাস সম্পর্কিত রয়েছে বলে ধারণা করা হয়। এখনো ঠাকুরগাঁওয়ের কোনো কোনো জায়গার মানুষ কঠিন ব্যাধিতে আক্রান্ত হলে মুক্তির আশায় ‘দেবতার থানে’ (দেবতার স্থানে) মাটির তৈরি ঘোড়া দান করেন।
পোড়ামাটির খেলনা ঘোড়ার মধ্যেও রয়েছে হরেক রকম বৈচিত্র্য। দেশের সব জায়গার পোড়ামাটির ঘোড়া এক রকম নয়। তবে পটচিত্রধর্মী আদি গড়নের পোড়ামাটির ঘোড়াই হলো বাংলার আদি ঐতিহ্যবাহী খেলনা ঘোড়া। সেসব ঘোড়ার চার পা আলাদা ও পাগুলোর সাথে পোড়ামাটির সুগোল চাকতির মতো চাকা লাগানো। ঘোড়ার গলায় সুতো বেঁধে মাটির উপর রেখে টানলে তা চলে বলে শিশুরা এসব ঘোড়া নিয়ে খেলতে খুব মজা পায়। পরবর্তীকালে যেসব পোড়ামাটির খেলনা ঘোড়া তৈরি করা হয়েছে সেগুলো অনেকটা রিয়েল ফিগার বা প্রকৃত অবয়বভিত্তিক, ডাইস বা ছাঁচে গড়াÑ এসব ঘোড়ার পা আলাদা নয়। এগুলোর রঙেও রয়েছে বেশ সাজানোর ঢং, লাল নীল হলুদ সাদা ইত্যাদি রঙের বাহার। সত্যিকার ঘোড়ার রঙ নেই কোনোটিতেও। তবে এ দু’শ্রেণীর ঘোড়ার মধ্যেই আকারগত একটা সামঞ্জস্য আছে, উভয়ই ছোট আকারের। ইদানীং বড় থেকে বিশাল আকারের কিছু ঘোড়া তৈরি করা হচ্ছে যেগুলোয় পোড়ামাটির প্রকৃত রঙকেই রেখে দেয়া হয়। এগুলো ঘর সাজানোয় বেশি ব্যবহৃত হয়, শহরের লোকেরা ড্রয়িংরুম বা বৈঠকখানার শোভা বাড়ানোর জন্য কেনেন। এসব ঘোড়ার শিল্প ও নান্দনিক রূপ অনেক উন্নত। ঢাকার ধামরাই, সাভার ও মানিকগঞ্জের মৃৎশিল্পীরা সাধারণত এসব ঘোড়া বেশি তৈরি করেন।

 


আরো সংবাদ



premium cement