৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫
`


বুঝতে পারলেন না কেন মাহমুদউল্লাহ!

মাহমুদউল্লাহ - ছবি : সংগ্রহ

বয়সটা ৩৭ ছুঁই, ছুঁই। চুলেও পাক ধরেছে, শরীরী ভাষায়ও পরিবর্তন এসেছে। সেই আগের উচ্ছ্বলতা, উদ্দামতা আর নেই, নেই সেই দুর্লভ দূর্ভেদ্য মানসিকতা। ভাটা পড়েছে প্রানোচ্ছল স্রোতে, প্রফুল্লতাও ঢাকা পড়েছে বয়সের ভারে। বয়স নাকি ভালোবাসার মতো, যা লুকিয়ে রাখা যায় না কোনো আবরণে। প্রকাশ পেয়ে যায় কোনো না কোনো সমীকরণে।

ভালোবাসা কি কখনো ভোলা যায়, ভালোবাসার মানুষ থেকে দূরে থাকার কথা কি কভুও ভাবা যায়? আর প্রথম প্রেম? সে তো হৃদয়ে যায় মিশে, মিশে যায় রক্তের স্রোতে। তেমনি তার প্রথম প্রেম মিশে আছে ক্রিকেটে, ক্রিকেট তার রন্ধ্রে রন্ধ্রে। ফলেই হয়তো এমন দ্বিধা-দ্বন্ধ, এতো সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগা। ক্রিকেট থেকে দূরে! ভাবতেই পারেন না এই কথা।

কিন্তু ভালোবাসারও কিছু সংজ্ঞা আছে। সত্যিকার প্রেমিক তো প্রেমিকার খুশিকেই নিজের খুশি ভাবে। তার হাসিমুখেই সুখ খুঁজে নেয়, তার ভালো থাকাকেই আপন করে নেয়। দুঃখ, জ্বালা, যন্ত্রণা বুকে চাপা দিয়ে, প্রেমিকার আনন্দকেই প্রাধান্য দেয়। প্রেমিকা যখন অন্যের হবে, দহন তো হবেই বুকে; তবুও দাঁতে দাঁত চেপে তা মেনে নেয় হাসিমুখে। হয়তো অনেক কঠিণ হবে, কিন্তু যখন জানবেন আপনি আক্রান্ত মরণব্যাধি ক্যান্সারে! তখন? তখন নিশ্চয়ই প্রিয় মানুষটাকে নিজের করে পাওয়ার থেকে, তার সুখই বেশি প্রয়োজন।

উপমা ছেড়ে এবার বাস্তবতায় ফিরি। আঁধারের আলো তিনি, দূঃসাহসী দুর্বার কান্ডারি। তিনি দুঃসময়ের পরম নির্ভরতা; বলছিলাম মাহমুদউল্লাহর কথা। তার অতীত, ইতিহাস আর অবদান; তা তো সবার জানা। তার হাতে লেখা হয়েছে কত শত রূপকথা। বাংলার ক্রিকেটের ধূসর কালো মলিন অধ্যায়টা দূরে ঠেলে, নীলাভ রঙিন ছবিটা আঁকা হয়েছে তারই তুলিতে। ১৫-এর বিশ্বকাপ মনে আছে? সেখানেই তো বাংলাদেশের ক্রিকেটের বদলে যাওয়ার শুরুই তো সেখানে!

আরো কত অধ্যায় আছে, সাহসিকতা আর বীরত্বগাঁথা আছে। নিদাহাস ট্রফিও স্মৃতিতে ভাসে। ১৫ বিশ্বকাপ পরবর্তী সময়ে, তিনিই তো শিখিয়ে ছিলেন ইমপ্যাক্ট কাকে বলে। তবে সময়ের ব্যবধানে, বেলার পর বেলা গড়িয়ে আজ সেই মাহমুদউল্লাহই গোধূলি লগ্নে। যখন জীবনের সবচেয়ে কঠিন প্রশ্নটা সম্মুখে, তখনই কিনা তিনি পড়ে গেলেন দ্বিধা-দ্বন্দ্বে!

ব্যক্তি থেকে দেশ বড়, জীবন থেকে জাতি বড়; কথায় কথায় হরহামেশাই তা বলে থাকি অহরহ। কিন্তু যখন এমই সময় এলো সম্মুখে, সিদ্ধান্ত নিতে হবে দেশ, জাতি আর ভবিষ্যতের স্বার্থে। তখন সম্মানের পথটাই বেছে নেয়া উচিৎ, জ্ঞানীরা তাই মনে করে। মাহমুদউল্লাহর সামনেও তেমন পথ ছিল দুটি; হয়তো নিজেকে নিজেই সরিয়ে নেয়া, নয়তো অপমান মেনে নেয়া। অপমানই বটে, তার মতো ক্রিকেটারকে যখন রাখা হয় না দলে, তাকে অপমানই বলে। তবে তা হঠাৎই আসা সিদ্ধান্ত নয়, তিনিও জানতেন এমন হতে পারে। ফলে, সম্মানের সাথে নিজেকে সরিয়ে নেয়াই ভালো হতো, বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়ে।

যে পথে হেঁটেছেন প্রিয় বন্ধু-ভাই মুশফিকুর রহিম। যখন বুঝেছেন, পারফরম্যান্সে ভাটা পড়েছে। দলের এগিয়ে যাবার পথে বাধা মনে হচ্ছে নিজেকে। তখন নিজেই সম্মানের সাথে সরিয়ে নিয়েছেন নিজেকে। ফলে ধন্যবাদ পেয়েছেন সবার থেকে। একই পথে হেঁটেছেন তামিম ইকবাল খান ও মাশরাফী কাপ্তান। কিন্তু এত কাছে থেকেও, সব কিছু দেখেও মাহমুদউল্লাহ কেন পড়লেন সিদ্ধান্তহীনতায়, তা প্রশ্ন রয়েই যায়।

হয়তো আরো কিছুদিন সুযোগ পেতেন। তবে যখন বুঝেছেন নিজের আলো হারিয়েছেন, তখন অন্যের আলোয় চলার থেকে বিদায় বলাকেই সম্মানের ভেবেছেন। সিদ্ধান্ত নিতে দেরি করেননি, দলের বোঝা হয়ে থাকতে চাননি। বলছিলাম ফিঞ্চের কথা। একই গল্প মরগানকে নিয়ে লেখা৷ বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক তিনি। পারফর্মটা করতে পারছিলেন না মনের মতো, তবে নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন বাঘের মতো। কিন্তু মন্দের ভালো থাকতে চাননি, হয়ে যাচ্ছিলেন বিবেকের কাছে ঋণি। মাহমুদউল্লাহ কি পারতেন না, এখান থেকেও খানিকটা শিখে নিতে!

বয়সের গল্প তো আগেই লিখেছি। বয়স তো আর অস্বীকার করার সুযোগ নেই। সবাই তো আর এলিস্টার কুক কিংবা শোয়েব মালিক নয়; বয়সকেও যারা করেছেন জয়। বয়স ছাপিয়ে পারফরম্যান্সও আলোচনায় এসেছে। সর্বশেষ ১১ ম্যাচে মাত্র ১৬.৫৪ গড়, স্ট্রাইক রেট ১০২.৮২। তবে খেলার সময় বিবেচনায় ধরন নিয়েই বেশি প্রশ্ন জনমনে, এত বাজে ব্যাটিং এপ্রোচ দেখা যায়নি কখনো আগে।

তাছাড়া দলের টানা ব্যর্থতায়, দলকে খোলনলচে বদলে ফেলে নতুন আঙ্গিকে গড়তে ম্যানেজমেন্ট নজর দিয়েছে তারুণ্যে। এখনি হয়তো অভাব পূরণ হবে না, তবে আগামী দিনে ভালো কিছুর প্রত্যাশায় সিনিয়রদের রাখা হচ্ছে দূরে সরিয়ে। যাতে তরুণরা শিখতে পারে, নিজেদের গড়তে পারে। ফলেই মাহমুদউল্লাহ জায়গা হারিয়েছেন বলা চলে। তবে কতই না ভালো হতো, অবস্থা আর ইশারা ইঙ্গিত বুঝে, তরুণদের সুযোগ দিতে নিজেই সরে যেতেন দূরে! তবে উপমা হয়ে থাকতেন প্রজন্মের কাছে, একটা ধন্যবাদও পেতেন স্বার্থহীনতার বদলে।


আরো সংবাদ



premium cement
বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত হয়েছে : প্রধানমন্ত্রী ‘ইসলামী সমাজ বিপ্লব ছাড়া মানুষের মুক্তি সম্ভব নয়’ ইসরাইলে জার্মানির অস্ত্র বিক্রির ওপর নিষেধাজ্ঞা দিতে আইসিজের অস্বীকৃতি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেন শাহরাস্তি উপজেলা আ’লীগ সভাপতি গ্রীষ্মের ছুটি কি এপ্রিলে এগিয়ে আনা দরকার? আইডিবি ২৮ দশমিক ৯ কোটি ডলারের ঋণ সহায়তা দিবে গাজায় সাহায্য সরবরাহ বাড়ানোর উপায় নিয়ে আলোচনায় ব্লিঙ্কেনের জর্ডান যাত্রা বৃষ্টি আইনে ভারতের কাছে বাংলাদেশের হার ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে রংপুরে শ্রম আদালতের মামলার কার্যক্রম হাইকোর্টে স্থগিত নোয়াখালীতে নজিরবিহীন লোডশেডিং ‘আইসিজের গ্রেফতারি থেকে বাঁচতে যুক্তরাষ্ট্রকে চাপ দিচ্ছে ইসরাইল’

সকল