৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫
`


লবণের উৎপাদন ছাড়াল সাড়ে ১৭ লাখ মেট্রিক টন

লক্ষ্যমাত্রা ২৫ লাখ ২৮ হাজার মেট্রিক টন
-

রোদের তাপমাত্রা বৃদ্ধির সাথে সাথে দেশের উপকূলে লবণ উৎপাদনও বৃদ্ধি পেয়েছে। গত রোববার পর্যন্ত চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার উপকূলে ১৭ লাখ ৪৪ হাজার ১৬২ মেট্রিকটন লবণ উৎপাদন ছাড়িয়ে গেছে। ১৪ এপ্রিল এক দিনেই লবণ উৎপাদন হয়েছে ৩০ হাজার ৫২০ মেট্রিকটন। অপর দিকে গত মৌসুমে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত লবণ উৎপাদন হয়েছিল ১৫ লাখ ৮৫ হাজার ৫৮৬ মেট্রিকটন। চলতি মৌসুমে (২৩-২৪) লবণ উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২৫ লাখ ২৮ হাজার মোটিকটন।
বিসিক লবণ প্রকল্পের জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) জাফর ইকবাল ভূঁইয়া গতকাল বিকেলে নয়া দিগন্তকে জানান, বর্তমানের তাপদাহ বা তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ায় লবণ উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে। তিনি জানান, উৎপাদনের এই ধারা অব্যাহত থাকলে চলতি মৌসুমের লবণ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ার প্রত্যাশা করছেন তিনি। এ দিকে গতকাল মাঠে উৎপাদিত অপরিশোধিত প্রতি মণ লবণ পাইকারি বিক্রি হয়েছে ৩৫৫ টাকা ধোলাই খরচ ছাড়া। তবে একই সময়ে গত মৌসুমে প্রতি মণ লবণ পাইকারি বিক্রি হয়েছিল ধোলাই খরচ ছাড়া প্রতি মণ ৪০০ টাকার উপরে। মাঠে উৎপাদিত লবণের দাম কমে যাওয়ায় উপকূলে হাজার হাজার লবণচাষি উৎপাদিত লবণ নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছেন। বাঁশখালী সনুয়ার লবণ চাষি মো: বেলাল বলেন, মাঠে লবণের মূল্য বেশি কমে যাচ্ছে সে কারণে তারা খুবই চিন্তিত। তিনি জানান, সরকারিভাবে চাষিরা দির্ঘদিন যাবৎ মাঠে উৎপাদিত লবণের মূল্য সরকারি বেঁধে দেয়া হলে চাষিরা লবণ উৎপাদন টেনশনে থাকত না। সে কারণে তিনি উৎপাদিত লবণের মূল্য সরকারিভাবে নির্ধারণ করার দাবি করেছেন।
মাঠে উৎপাদিত লবণের পাইকারি মূল্য হ্রাস পাওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিসিক লবণ প্রকল্পের জেনারেল ম্যানেজার মোহাম্মদ জাফর ইকবাল ভূঁইয়া বলেন, এটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। প্রতি বছরই যখন লবণ উৎপাদন বেশি হয় তখন বাজারে লবণের পাইকারি মূল্য কিছুটা কমে আসে। তিনি জানান, চট্টগ্রাম কক্সবাজারের চাষিদেরকে প্রতি মণ অপরিশোধিত লবণ উৎপাদনে গড়ে ২৮০ টাকা থেকে ৩০০ টাকার মধ্যে।
চলতি মৌসুমে সাগর উপকূলে লবণ উৎপাদনে চাষিরা আগাম প্রস্তুতি নিয়ে মাঠে নামলেও ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী ঘন কুয়াশা ও মাঝেমধ্যে বৃষ্টিপাত হওয়াসহ বৈরী আবহাওয়ার কারণে চলতি মৌসুমে দেশের উপকূলে লবণ উৎপাদন ব্যাহত হয়ে আসছিল। তবে সেই অনিশ্চয়তা কেটে এখন জোরে চলছে লবণ উৎপাদন। জানা গেছে, দুই বছর ধরে মাঠে পাইকারি লবণের মূল্য বেশি হওয়ার পাশাপাশি সরকারি বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা পাওয়ার কারণে চলতি লবণ উৎপাদন মৌসুম শুরু হওয়ার পূর্বে মধ্য অক্টোবর থেকেই মাঠে নতুন লবণ উৎপাদন মাঠে নামছে চাষিরা। মাঠে পাইকারি লবণের দাম বেশি পাওয়ায় গত ২০২২-২০২৩ মৌসুমে লবণ চাষের পরিধি ও লবণ চাষি ও মৌজা এবং ঘোনার সংখ্যা বেড়েছে।
সে কারণে গত মৌসুম লবণ চাষের মাঠের পরিমাণ বেড়ে ৬৬ হাজার ২৯১ একরে দাঁড়িয়েছিল। অপর দিকে লবণ চাষির সংখ্যা বেড়ে হয়েছিল ৩৯ হাজার ৪৬৭ জনে পৌঁছে। অন্য দিকে ২টি নতুন মৌজাসহ গত মৌসুমে মৌজার সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ৭৭ এবং লবণ চাষে ঘোনা আগের ৮৮৮ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯৫৯টিতে।

জানা গেছে, এক সময়ে দেশে প্রতি বছর সোডিয়াম সালফেটের আড়ালে লাখ লাখ মেট্রিকটন সোডিয়াম সালফেট আমদানি করত অসাধু ব্যবসায়ীরা, এ ছাড়া মিথ্যা ঘোষণার মাধ্যমেও লাখ লাখ মেট্রিকটন লবণ আমদানি করত। সে কারণে দেশে লবণ উৎপাদন করে চাষিরা লাভের মুখ দেখত না। এ নিয়ে নয়া দিগন্তে একাধিকবার সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে সরকার লবণ শিল্প ও চাষিদের স্বার্থ সমুন্নত রাখতে বিদেশ থেকে লবণ আমদানির উপরে শুল্কহার ৩২ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৮৯ শতাংশ করেছে।
আমদানিকৃত লবণের দাম বেশি হওয়ার কারণে আমদানিকারকগণ অতিরিক্ত লবণ আমদানিতে নিরুৎসাহিত হওয়ায় দেশে লবণ শিল্পে প্রাণ ফিরে আসে। বিদেশ থেকে লবণ আমদানি শুল্ককর বৃদ্ধি করার কারণে আমদানি করা লবণের চেয়ে দেশে উৎপাদিত লবণের কদর বেড়েছে ।
জানা গেছে প্রতি বছর লবণ উৎপাদনের অফিসিয়ালি ১৫ নভেম্বর থেকে পরের বছরের ১৫ মে পর্যন্ত লবণ উৎপাদন মৌসুম ধরা হয়।

 

 


আরো সংবাদ



premium cement