৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫
`


শোলাকিয়ায় ঈদের জামাতে ৫ লাখ মুসল্লি

কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে ঈদুল ফিতরের জামাত : নয়া দিগন্ত -


ঈদুল ফিতরের দিন কিশোরগঞ্জের আকাশ সকাল থেকেই ছিল কিছুটা মেঘাচ্ছন্ন। বেলা বাড়ার সাথে সাথে তাপমাত্রা বাড়ে। তবে আগের কয়েক দিনের মতো তাপমাত্রা বেশি ছিল না। সূর্য ছড়িয়ে দেয় নরম আলো। এরকম রোদ ঝলমলে নরম আবহাওয়ায় ঐতিহ্যবাহী শোলাকিয়া ঈদগাহে গত বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় ঈদের জামাত শুরু হয়। এবার ছিল ওই ঈদগাহে ১৯৭তম ঈদ জামাত।
জামাতে এবার স্মরণকালের সবচেয়ে বেশি মুসল্লি অংশ নেন।
২০০ বছরের ইতিহাসে করোনা মহামারীর কারণে ২০২০ ও ২০২১ সালে এ মাঠে বন্ধ ছিল ঈদের জামাত।
গত ২০২২ সাল থেকে আবার পূর্বের ধারাবাহিকতা রক্ষা করে মাঠে নামাজ শুরু হয়। এবার মানুষের আগ্রহ ছিল এই মাঠের দিকে বেশি।
ঈদগাহ পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ ধারণা দেন, এবার শোলাকিয়া ঈদগাহে ঈদুল ফিতরে পাঁচ লাখের বেশি মানুষ অংশ নেন জামাতে।
বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় এই ঈদ জামাতে দূর-দূরান্ত থেকে আসা মুসল্লিরা দেশ, জাতি ও মুসলিম উম্মাহর শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য দোয়া করেন। বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সকাল থেকেই মুসল্লিরা এই মাঠের দিকে আসতে থাকেন। এক পর্যায়ে মুসল্লিদের ঢল নামে শোলাকিয়া মাঠের দিকে।

বেলা বাড়ার সাথে সাথে দূর-দূরান্ত থেকে আসা টুপি পাঞ্জাবি পরা হাঁটা মুসল্লিদের ভিড় এই বিশাল মাঠে এসে পরিণত হয় জনসমুদ্রে। সুশৃঙ্খলভাবে মুসল্লিরা মাঠে এসে প্রবেশ করেন।
তবে মাঠে জায়নামাজ ছাড়া কোনোরকম ব্যাগ ও মোবাইল নিয়ে আসা নিষিদ্ধ ছিল।
অন্তত ১০টি নিরাপত্তা তল্লাশির ভেতর দিয়ে মাঠে প্রবেশ করতে হয়েছে মুসল্লিদের।
মাঠ ও এর আশপাশে ছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চার স্তরের নিরাপত্তা।
সিসি ক্যামেরায় মনিটর করা হয় মাঠের ভেতর ও চারপাশ। মাঠের চারপাশে ছিল ছয়টি ওয়াচ টাওয়ার। চারটি শক্তিশালী ড্রোন ক্যামেরা মনিটর করে মাঠ ও এর আশপাশ এলাকা।
সকাল ৮টার দিকেই মুসল্লিতে কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায় মূল মাঠ।
জামাত শুরুর এলান দেয়ার সাথে সাথে মাঠ ছাড়িয়ে আশপাশের রাস্তা, ফাঁকা জায়গা, বাড়ি, বাড়ির ছাদে মুসল্লিরা নামাজের প্রস্তুতি নিয়ে দাঁড়িয়ে পড়েন।
সকাল ১০টা বাজতেই ঐতিহাসিক এই মাঠের ইমাম এলান দেন, শোলাকিয়ার ১৯৭তম ঈদুল ফিতরের জামাত শুরু হতে যাচ্ছে। দীর্ঘ দিনের রেওয়াজ অনুযায়ী জামাত শুরু হওয়ার ৫ মিনিট, ৩ মিনিট ও ১ মিনিট পূর্বে যথাক্রমে ৩টি, ২টি ও ১টি গুলির আওয়াজ করা হয় শটগানে।

শুরু হয় ঐতিহাসিক শোলাকিয়ায় উপমহাদেশের সবচেয়ে বড় ঈদ জামাত।
ঝলমলে রোদের মধ্যে মুসল্লিরা তাকবিরে তাহরিমা বলে জামাতে অংশ নেন।
জামাতে ইমামতি করেন মাওলানা শোয়াইব বিন আবদুর রউফ।
জেলা প্রশাসক মো: আবুল কালাম আজাদ, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মো: জিল্লুর রহমান, কিশোরগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মাহমুদ পারভেজসহ বিশিষ্টজনরা এ জামাতে শরিক হন।
নামাজ শেষে মুসল্লিদের জন্য দিকনির্দেশনামূলক খুতবা দেন ইমাম। এর পর কাক্সিক্ষত মুনাজাত।
মাঠের লাখো মানুষ অংশ নেন মুনাজাতে। দেশের সমৃদ্ধি, পাপ থেকে মুক্তি এবং পরম করুণাময়ের অপার সন্তুষ্টি অর্জনে দুই হাত তুলে কান্নায় ভেঙে পড়েন অনেকে।
মাঠে নামাজ পড়তে আসা কটিয়াদীর করগাঁও গ্রামের আব্দুল মান্নান (৬২) বলেন, ৪০ বছর ধরে তিনি এই ঈদগাহে নামাজ পড়েন। ছোট সময় বন্ধুবান্ধব মিলে ফজরের সময় রওনা হতেন এই মাঠের দিকে।

 


আরো সংবাদ



premium cement