২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

রাজারবাগ পীরের ওপর নজর রাখতে সিটিটিসিকে হাইকোর্টের নির্দেশ

-

উগ্রবাদী সম্পৃক্ততার অভিযোগ ওঠায় রাজারবাগ পীর দিল্লুর রহমান ও তার অনুসারীদের নজরদারিতে রাখতে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটকে (সিটিটিসি) নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। তদন্তের স্বার্থে প্রয়োজনে সিআইডি, কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট ও দুদক চাইলে তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞাও দিতে পারবে। এ ছাড়া ৪৯ মামলার আসামি একরামুল আহসান কাঞ্চন পীর দিল্লুর রহমান ও তার অনুসারীদের বিরুদ্ধে মামলা করতে চাইলে সিআইডির প্রতিবেদনকে আমলে নিতে বলা হয়েছে।
গতকাল বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো: মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এই নির্দেশ দেন। পাশাপাশি দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) ৬০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করার নির্দেশ দিয়ে আগামী ১৩ ফেব্রুয়ারি মামলার শুনানির দিন নির্ধারণ করা হয়েছে।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির ও এমাদুল হক বশির। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার। দুদকের পক্ষে ছিলেন জাহিদ হোসেন দোলন।
এর আগে রাজারবাগ দরবার শরিফের পীর দিল্লুর রহমানসহ চারজনের বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা চেয়ে বৃহস্পতিবার হাইকোর্টে আবেদন করা হয়। পীর দিল্লুর রহমান ছাড়া অন্যরা হলেন শাকিরুল কবির, ফারুকুর রহমান ও মফিজুল ইসলাম।
গতকাল রোববার আদালতে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের একটি প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করা হয়। প্রতিবেদনের মতামত অংশে বলা হয়, রাজারবাগ দরবারের নিয়ন্ত্রণাধীন দৈনিক আল ইহসান ও মাসিক আল বাইয়্যিনাত পত্রিকার বিভিন্ন সংখ্যা, তাদের তত্ত্বাবধানে প্রকাশিত বিভিন্ন বই, ইতঃপূর্বে তাদের কার্যক্রম এবং বিভিন্ন জেলায় তাদের অনুসারীদের কার্যক্রমের কারণে রুজুকৃত মামলা ও মামলাগুলোর তদন্তের ফলাফল পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, তারা ইসলাম ধর্মের নামে এবং অনেক ক্ষেত্রে পবিত্র কুরআন ও হাদিসের খণ্ডিত ব্যাখ্যার মাধ্যমে এ দেশের ধর্মভীরু মানুষকে ভুল পথে পরিচালনা করে। ধর্মের নামে মানুষ হত্যা ও তথাকথিত জিহাদকে উসকে দিচ্ছে। এ দেশের নিষিদ্ধঘোষিত উগ্রবাদী সংগঠনগুলো যে উদ্দেশ্য নিয়ে তাদের মতবাদ প্রচার করছে ও কার্যক্রম চালাচ্ছে, রাজারবাগ দরবার শরিফের পীর, তার সহযোগী ও অনুসারীদের কার্যক্রম উগ্রবাদীদের কার্যক্রমের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।
মতামতে আরো বলা হয়, ভিন্ন ধর্মের মানুষকে, তাদের ভাষায় ‘মালাউনদের হত্যা করা ঈমানি দায়িত্ব’ উল্লেখ করে ফতোয়া দিয়েছে এবং এ ক্ষেত্রে কতল করার আদেশ দিয়েছে, যা মূলত বাংলাদেশের নিষিদ্ধঘোষিত উগ্রবাদী সংগঠন নব্য জেএমবি ও আনসার আল ইসলামের মানুষকে হত্যা করার ফতোয়ার অনুরূপ। এটি ইসলামের নামে নিষিদ্ধ উগ্রবাদী সংগঠনগুলোর মতো একই প্রক্রিয়ায় বিরোধীদের অর্থাৎ ভিন্ন ধর্মালম্বীদের হত্যা করার ও ইসলামী রাষ্ট্র কায়েম করার কৌশল। তাদের এ ধরনের বক্তব্য মানুষকে উগ্রবাদীদের দিকে ধাবিত করবে, অসহিষ্ণু করবে, অসাম্প্রদায়িক চেতনা নষ্ট করতে ভূমিকা রাখবে। তা ছাড়া তারা ছোঁয়াচে রোগবিরোধী ও বাল্যবিবাহের পক্ষে বিভিন্ন বক্তব্য ও ফতোয়া দিয়ে ধর্মভীরু ও সহজ-সরল সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করছে। এর আগে ব্যবসায়ী একরামুল আহসান কাঞ্চনের বিরুদ্ধে নারী নির্যাতন, ধর্ষণ, চুরি, ডাকাতি, মানবপাচারসহ বিভিন্ন অভিযোগে ৪৯টি ভুয়া মামলার নেপথ্যে রাজারবাগের কথিত পীর দিল্লুর রহমানের নাম উঠে আসে তদন্তে। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) হাইকোর্টে ওই তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে। গত ১৯ সেপ্টেম্বর রাজারবাগ দরবার শরিফের সব সম্পদের তথ্য খুঁজতে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), তাদের জঙ্গি সম্পৃক্ততা আছে কি না তা তদন্ত করতে কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) এবং উচ্চ আদালতে রিটকারী আটজনের বিরুদ্ধে করা হয়রানিমূলক মামলার বিষয়ে তদন্ত করতে সিআইডিকে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। এরপর সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো পীর সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে তদন্ত কার্যক্রম শুরু করে।

 

 


আরো সংবাদ



premium cement