২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

বুড়িগঙ্গা দূষণে অন্যতম ওয়াশিং কারখানা

-

রাজধানীর প্রাণকেন্দ্র বুড়িগঙ্গা নদী। তা এখন দখল দূষণে একাকার। প্রায় শতাধিক ওয়াশিং কারখানার বর্জ্য নামছে নদীতে। এসব কারখানা বন্ধে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা থাকলেও গড়িমসি করছে প্রশাসন। অভিযোগ রয়েছে, ওইসব কারখানা মালিকদের কাছ থেকে নিয়মিত বখরা নেয় থানা পুলিশ, পরিবেশ অধিদফতরের পরিদর্শক ও স্থানীয় কিছু হলুদ সাংবাদিক।
জানা গেছে, এক সময়ে বুড়িগঙ্গা দূষণের জন্য দায়ী ছিল ট্যানারি। ওই সব কারখানার বিষাক্ত বর্জ্য সরাসরি নদীতে নামতো। ট্যানারিগুলো সাভারে স্থানান্তর করা হয়েছে। এতে পানির দুর্গন্ধ অনেকটা কমলেও রঙ রয়েছে কালো। এ কারণে বুড়িগঙ্গা দূষণকারীদের বিরুদ্ধে মামলার নির্দেশ হাইকোর্টের।
কেরানীগঞ্জের ৩০টি ওয়াশিং প্ল্যান্টসহ দায়ী ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও কারখানার বিরুদ্ধে মামলা করতে পরিবেশ অধিদফতরের প্রতি নির্দেশনা এসেছে উচ্চ আদালত থেকে। বুড়িগঙ্গা দূষণরোধে জনস্বার্থে করা একটি রিট আবেদনের ওপর রুল শুনানির ধারাবাহিকতায় চলতি মাসের ৩ জানুয়ারি বিচারপতি গোবিন্দ চন্দ্র ঠাকুর ও বিচারপতি মোহাম্মদ উল্লাহর হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। ঢাকা জেলা পরিবেশ অধিদফতরের পরিচালককে ৩০ দিনের মধ্যে বুড়িগঙ্গা দূষণকারী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা করতে বলা হয়। সে বিষয়ে তদারকি এবং আইনগত ব্যবস্থা নিতে ঢাকার জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, কেরানীগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান, নির্বাহী কর্মকর্তা ও কেরানীগঞ্জ থানার ওসিকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তবে তা এখনো কার্যকর হয়নি।
ওই ৩০ ওয়াশিং প্ল্যান্ট হলো- আহামদ হোসেন ওয়াশিং, আমেনা ওয়াশিং, সানমুন ওয়াশিং, ইডেন ওয়াশিং, বিসমিল্লাহ ওয়াশিং, লোটাস ওয়াশিং, গ্লোবাল ওয়াশিং, রুবেল ওয়াশিং, আনুশকা ওয়াশিং, সততা ওয়াশিং, চঞ্চল ওয়াশিং, আব্দুর রব ওয়াশিং, ঢাকা ওয়াশিং, আজান ওয়াশিং, নিউ সাহারা ওয়াশিং, দোহার ওয়াশিং, রিলেটিভ ওয়াশিং, নিউ নাশা ওয়াশিং, ইউনিক ওয়াশিং, মৌ ওয়াশিং, সেতু ওয়াশিং, কোয়ালিটি ওয়াশিং, জুয়েনা ওয়াশিং, কামাল ওয়াশিং, ওয়াটার কালার ওয়াশিং, পারজোয়ার ওয়াশিং, জিএম ওয়াশিং, কুমিল্লা ওয়াশিং, আছিয়া ওয়াশিং ও লিলি ওয়াশিং।
এর আগে নদীর পানিদূষণ রোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা চেয়ে ২০১০ সালে মানবাধিকার ও পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি) পক্ষে করা একটি রিট আবেদনের ওপর চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০১১ সালের ১ জুন বুড়িগঙ্গা দূষণরোধে তিন দফা নির্দেশনাসহ রায় দেন হাইকোর্ট। রায়ে বুড়িগঙ্গায় বর্জ্য ফেলা বন্ধে অবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া, নদীতে সংযুক্ত সব স্যুয়ারেজ লাইন ও শিল্পকারখানার বর্জ্য নিঃসরণের লাইন ছয় মাসের মধ্যে বন্ধ করতে বলা হয়। নির্দেশনা যথাযথভাবে প্রতিপালিত না হওয়ায় ২০১৯ সালের ৩০ এপ্রিল হাইকোর্টে সম্পূরক আবেদন করে এইচআরপিবি।
শুনানির এক পর্যায়ে বুড়িগঙ্গা দূষণরোধে হাইকোর্টের রায় ও আদেশ বাস্তবায়ন না করা, অসত্য তথ্য দিয়ে আদালতের কাজে বিঘœ সৃষ্টির অভিযোগে ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তাকসিম এ খানের বিরুদ্ধে গত বছরের ২৩ জানুয়ারি আদালত অবমাননার রুল জারি করেন হাইকোর্ট। এ ছাড়া আবেদনের ওপর শুনানিকালে ওয়াসার এমডিকে তলবের পরিপ্রেক্ষিতে গত বছর ৪ মার্চ তিনি আদালতে হাজির হয়ে রায় বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দেন। পরবর্তীকালে ১৮ আগস্ট, ৭ সেপ্টেম্বর এবং ১৪ সেপ্টেম্বর ওয়াসার পক্ষ থেকে তিনটি প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করা হলেও হাইকোর্টের রায় ও নির্দেশনা বাস্তবায়নের কোনো অগ্রগতি না থাকায় তা গ্রহণ করেননি উচ্চ আদালত।
একাধিক ওয়াশিং কারখানা মালিক বলেছেন, পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে এতে আমরা দায়ী না। সরকার আমাদের চাপ দিচ্ছে। আমাদেরকে নির্দিষ্ট স্থানে জায়গা করে দিলে আমরা ইটিপি প্ল্যান করে কাজ করব। এ ব্যাপারে স্থানীয় চেয়ারম্যান ও এমপি দায়িত্ব নিয়ে যদি বলতো এই তোমরা আসো এভাবে এভাবে কর তাহলে সুন্দর হতো। এখন ধরে সবগুলো বন্ধ করে নাই, সব চলতাছে আমি একলা বন্ধ করে কী করব। ঢোকার জন্য যে গেট আছে তার তালা বন্ধ। সাইডের গেটের তালা তো প্রশাসন লাগায় নাই। আমাদের জন্য যে জায়গা নির্ধারণ করা হয়েছে তার তো আমাদেরকে দিচ্ছে না তারা। আমাদের জায়গা বুঝিয়ে দিলে আমরা চলে যাবো। নদীতো শুধু ড্রাইংয়ের পানিতে নষ্ট হচ্ছে না। ঢাকা শহরের সব বর্জ্য নদীতে পড়ে পানি নষ্ট হচ্ছে। আগে ঢাকা শহরের বাড়িগুলোর পায়খানার বর্জ্য ট্যাংকার এসে দিয়ে যেত। এখন তা ড্রেন দিয়ে সরাসরি নদীতে পড়ে।
ওই সব বর্জ্য নদীতে পড়ায় পানির সাথে মিশে বাল্কহেডের পাখায় গোলা হয়ে নদী দূষণ হয়। আমরা এখন ভাড়া জায়গায় ওয়াশিং চালাচ্ছি, শাহিন চেয়ারম্যান আশা দিয়েছে আমাদের স্থায়ী জায়গা দিবে বলেছে। কিন্তু বুঝিয়ে দিচ্ছেন না তিনি। এখন আমরা কী করব। ৭০-৮০ লাখ টাকা ব্যয় করে পরের জায়গায় আমরা কী করে ইটিপি প্ল্যান করব নিজের জায়গা না বুঝিয়ে দিলে। জায়গা বুঝিয়ে না দেয়ায় আমরা স্থান পরিবর্তন করতে পারছি না। সবার কারেন্ট কটেছে কিন্তু আমাদেরটি কাটেনি। যাদের কারেন্ট লাইন কেটে দিয়েছে তারা চোরাই কারেন্ট লাইন জয়েন্ট দিয়ে ওয়াশিং কারখানা চালাচ্ছে। পল্লীবিদ্যুৎ অফিসে যোগাযোগ করেই তারা ওয়াশ ফ্যাক্টরির বিদ্যুৎ সংযোগ করে নিছে তা না হলে কী করে ওইসব কারখানা চলছে বলে জানান তারা।
কেরানীগঞ্জ ইউএনও অমিত দেবনাথ নয়া দিগন্তকে বলেন, আদালতের নির্দেশনা মোতাবেক প্রায় ৪০টি কারখানা সিলগালা করা হয়েছে। তাছাড়া গ্যাস ও বিদ্যুৎলাইন বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। তারপরও যদি কোনো কারখানা মালিক আবার ওইসব কারখানা চালু করে থাকে, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।


আরো সংবাদ



premium cement
যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশী শ্রমিকদের ভিসা সহজ করার আহ্বান প্রবাসী প্রতিমন্ত্রীর চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিদ্বন্দ্বী না হয়ে অংশীদার হওয়া উচিত : শি জিনপিং ওকাব সভাপতি নজরুল ইসলাম, সম্পাদক জুলহাস আলম পাবনায় ১০ কোটি টাকার অনিয়মে ৩ ব্যাংক কর্মকর্তা কারাগারে চুয়েট ১১ মে পর্যন্ত বন্ধ, শিক্ষার্থীদের আন্দোলন স্থগিত নরসিংদীতে হিট স্ট্রোকে শিশুর মৃত্যু হিলিতে ভটভটি-মোটরসাইকেলের সংঘর্ষে নিহত ২ ‘গাজার ধ্বংসাবশেষ পরিষ্কার করতে ১৪ বছর লাগতে পারে’ সখীপুরে ছাগল চুরির মামলায় মা-ছেলে কারাগারে ‘অন্যায়ের সাথে নয়া দিগন্তের সাংবাদিকরা কখনোই আপোষ করেন না’ রাজশাহীতে হলে ঢুকতে না দেয়ায় রাস্তায় বিসিএস পরীক্ষার্থীর কান্না

সকল