মেঘনা নদীর অংশবিশেষ ১৮৬৮ বিঘা জমিতে ছয়টি মৌজায় মো: নূর আলীর মালিকানাধীন সোনারগাঁও প্রপার্টি রিসোর্ট সিটি ও তথাকথিত অর্থনৈতিক অঞ্চল সোনারগাঁও ইকোনমিক জোন কর্তৃক মাটি ভরাটের কাজকে অবৈধ ঘোষণা করে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। গতকাল বুধবার বিচারপতি মো: আশফাকুল ইসলাম ও বিচারপতি রাজীক আল জালীলের হাইকোর্ট বেঞ্চ সোনারগাঁয়ের ছয়টি মৌজায় কৃষিজমি, নিচু জমি ভরাট করে ইউনিক গ্রুপের ইউনিক প্রপার্টিজ ‘সোনারগাঁও রিসোর্ট সিটি’ নির্মাণসংক্রান্ত বিষয়ে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) আবেদনের শুনানি শেষে এ রায় দেন।
রায়ে আদালত শিল্পপতি মো: নূর আলীর মালিকানাধীন এই দু’টি প্রতিষ্ঠানসহ ওই এলাকায় আর যেসব প্রতিষ্ঠান কৃষি, নদীর জলাভূমি ও নিচু ভূমি ভরাট করেছে তাদের মাটি সরিয়ে ছয় মাসের মধ্যে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নিতে নির্দেশ দিয়েছেন। একই সাথে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ক্ষতিপূরণ ধার্য করে তা মাটি ভরাটকারীর কাছ থেকে আদায় করে দিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। জমির হিসাবের তথ্য অনুযায়ী জানা গেছে, সেখানে প্রায় ১২০ একর জমি রয়েছে।
আদালতে বেলা’র পক্ষে আইনজীবী ছিলেন ব্যারিস্টার ফিদা এম কামাল, অ্যাডভোকেট সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, মিনহাজুল হক চৌধুরী, আলী মুস্তফা খান ও সাঈদ আহমেদ কবীর। অপরপক্ষে ছিলেন মুরাদ রেজা, অ্যাডভোকেট আহসানুল করিম, আবু তালেব প্রমুখ।
আদালত বলেছেন, ইকোনমিক জোন করতে আগ্রহী প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করার আগে নদী রক্ষা কমিশন থেকে অনাপত্তি এবং পরিবেশ অধিদফতর থেকে ছাড়পত্র গ্রহণ করতে হবে।
আইনজীবীরা জানান, নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁও উপজেলার ছয়টি মৌজার (পিরোজপুর, জৈনপুর, ছয়হিস্যা, চরভবনাথপুর, বাটিবান্ধা ও রতনপুর) কৃষিজমি, জলাভূমি ও মেঘনা নদীর অংশ ভরাট করে ‘সোনারগাঁও রিসোর্ট সিটি’ ও ‘সোনারগাঁও ইকোনমিক জোন’ নির্মাণ কার্যক্রমকে অবৈধ বলে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট।
ইউনিক প্রপার্টিজ ডেভলাপমেন্ট লিমিটেড নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁও উপজেলার পিরোজপুর ইউনিয়নের পিরোজপুর, জৈনপুর, ছয়হিস্যা, চরভবনাথপুর, বাটিবান্ধা ও রতনপুর মৌজার কৃষিজমি, জলাভূমি, মেঘনা নদীর অংশ ভরাট করে সোনারগাঁও রিসোর্ট সিটি প্রকল্প নির্মাণ করছিল। এই নির্মাণ কার্যক্রম অবৈধ ঘোষণার জন্য বেলা ২০১৪ সালে রিট আবেদন করে। এ আবেদনে ওই বছরের ২ মার্চ হাইকোর্ট প্রকল্প এলাকার মাটি বা বালু ভরাটের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। একই সাথে এরই মধ্যে ভরাটকৃত ভূমি হতে মাটি বা বালু অপসারণের নির্দেশ দেন হাইকোট।
এ আদেশের পর কিছু এলাকা থেকে মাটি ও বালু সরিয়ে জমি আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা হয়। কিন্তু আদেশ পুরোপুরি বাস্তবায়ন না করে একই কোম্পানি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়। ওই এলাকায় সরকার মাটি ভরাটের অনুমতি দিয়েছে দাবি করে আগের আদেশ অকার্যকর ঘোষণা চেয়ে হাইকোর্টে ২০১৬ সালে আবেদন করে প্রতিষ্ঠানটির সহযোগী প্রতিষ্ঠান ইউনিক হোটেল অ্যান্ড রিসোর্ট লিমিটেড। এ আবেদনে হাইকোর্ট ওই বছরের ২৫ অক্টোবর মাটি ভরাট কার্যক্রম পরিচালনার আদেশ দেন।
এ আদেশের বিরুদ্ধে বেলা আপিল করলে আপিল বিভাগ ওই বছরের ৩ নভেম্বর এক আদেশে হাইকোর্টের আগের (২০১৬ সালের ২৫ অক্টোবরের) আদেশ স্থগিত করেন। এর পরও ওই এলাকায় মাটি ভরাট কাজ অব্যাহত রাখা হলে বেলা ২০১৯ সালের ১৬ জানুয়ারি আদালত অবমাননার মামলা করে। নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক হাইকোর্টে হাজির হয়ে অঙ্গীকার করেন যে মাটি ভরাট প্রতিহত করবেন। এরপর বন্ধ হয়ে যায় মাটি ভরাট।