রংপুরসহ উত্তরাঞ্চলে এবার ঈদ পরবর্তী বাস, ট্রেন ও বিমানের টিকিট কালোবাজারে বিক্রি হচ্ছে। টিকিটের জন্য কালোবাজারিদের দিতে হচ্ছে দুই থেকে তিন গুণ দাম। স্টেশন, বাসটার্মিনাল ও স্ট্যান্ডের কাউন্টারগুলোতে দিশেহারা মানুষের ভিড় প্রতিনিয়তই বাড়ছে। অনলাইনেও নেই সঠিক তথ্য। এতে ঈদ পরবর্তী লাখ লাখ ঢাকাগামী কর্মজীবী মানুষ পড়েছেন বিপাকে। তারা মহা টেনশনে আছেন সঠিক সময়ে কর্মস্থলে ফেরা নিয়ে। যদিও কর্তৃপক্ষ বলছেন, ঈদের দ্বিতীয় দিন থেকে টানা এক সপ্তাহের টিকিট আগাম বিক্রি হওয়ায় এ দুর্ভোগ।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, রংপুর মহানগরীর কামারপাড়া ঢাকা স্ট্যান্ডের বিভিন্ন কাউন্টারে ঈদ পরবর্তী টিকিট পাওয়া যাচ্ছে না। তাই ঈদ উদযাপন শেষে নির্দিষ্ট সময়ে কর্মস্থলে ফেরা নিয়ে তাদের মধ্যে বিরাজ করছে সংশয়।
সাধারণ যাত্রীদের অভিযোগÑ কাউন্টারগুলোতে টিকিট নেই বললেও বাইরে ঠিকই টিকিট পাওয়া যাচ্ছে। এসব নিয়ন্ত্রণ করছে স্থানীয় একটি কালোবাজারি চক্রসহ বাস মালিক ও শ্রমিকেরা। গতকাল ডিপজল ট্রাভেলস কাউন্টারের পাশে কথা হয় নগরীর আলমনগর কলোনি এলাকার বাসিন্দা রিশিত সরকারের সাথে। তিনি জানান, ঈদের ছুটি শেষ হওয়ার আগে কর্মেেত্র পৌঁছতে না পারলে হয়তো চাকরি হারাতে হবে। কাউন্টারে গেলে বলা হচ্ছে টিকিট নেই। তাই বাধ্য হয়ে তিন গুণ দামে টিকিট ক্রয় করলাম বাইরে থেকে।
অন্য দিকে তারাগঞ্জের বালাবাড়ি এলাকার আল আমিন নামের এক যাত্রীর অভিযোগÑ প্রতিবারই কালোবাজারিদের কাছ থেকে টিকিট কিনতে হয়। এবারো একই অবস্থা। এ সময় তিনি কালোবাজারিদের টিকিট ব্যবসা বন্ধসহ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণে প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান।
এসআর ট্রাভেলসের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা সুমাইয়া তারিন উপমা এবং সিদরাতুল মুনতাহা নামের দুই বিশ^বিদ্যালয় পড়–য়া শিক্ষার্থী জানালেন, তারা দু’জন তিন হাজার আট শত টাকা দিয়ে এসি বাসের দুইটি টিকিট নিয়েছেন।
কর্মীরাসহ একটি মহল বাড়তি দামে টিকিট বিক্রির আশায় ঈদের পরের কয়েক দিনের টিকিট আটকে রেখেছেন। নির্ধারিত দামের চেয়ে বাড়তি দাম পেলেই হাত বদল হচ্ছে এসব টিকিট।
সরেজমিনে কামারপাড়া ঢাকা কোচ স্ট্যান্ডে শ্যামলী পরিবহন, এসআর, নাবিল পরিবহন, হানিফ পরিবহন, ডিপজল পরিবহন, শাহ্ ফতেহ আলী পরিবহনসহ বেশ কয়েকটি কাউন্টারে টিকিটের জন্য যাত্রীদের ধরণা দিতে দেখা গেছে। কলারবয় ও গাড়ির স্টাফরা কাউন্টারে টিকিট নেই বলে সাফ জানিয়ে দিলেও তাদেরই কয়েকজনকে বাইরে টিকিট ম্যানেজ মিশনে ব্যস্ত সময় কাটাতে দেখা যায়।
রিপন ও মোস্তফা নামে দুই পরিবহন শ্রমিক জানান, টিকিট পাওয়া গেলেও দাম অনেক বেশি। সিট কন্ডিশন খুব ভালো হবে না। তারপরও যদি কেউ পায় সেটা তার ভাগ্য।
নাম না প্রকাশের শর্তে শাহ ফতেহ আলী ট্রাভেলসের স্টাফ বলেন, ২৫ তারিখ পর্যন্ত টিকিট দেয়া যাচ্ছে না। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, স্থানীয় যুবকদের একটি সিন্ডিকেট আগে থেকেই বিভিন্ন নামে-বেনামে জনপ্রতি ৫০ থেকে ৭০টি করে টিকিট কিনে রেখেছে। ওই টিকিটগুলো তারা এখন কালো বাজারে চড়া দামে বিক্রি করছে।
কালোবাজারিরা কিভাবে টিকিট পাচ্ছে? এ বিষয়ে কিছু না বললেও তিনি বলেন, এখন যারা কাউন্টার থেকে টিকিট পাচ্ছে, তাদের বেশির ভাগই পরিচিত লোকজন। টিকিটের এই পরিকল্পিত সঙ্কট ঈদের ১০ দিন পর্যন্ত থাকবে বলে তিনি জানান।
এ দিকে বাসের টিকিটের মতো আগুন লেগেছে ট্রেনের টিকিটেও। প্রায় দেড় যুগের মতো বন্ধ থাকার পর চালু হওয়া রংপুর এক্সপ্রেস আন্তঃনগর ট্রেন আবারো যাত্রীসেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। রংপুর রেলস্টেশনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এখানেও খোঁজ নেই ঈদ পরবর্তী সাত দিনের টিকিট। সাধারণ যাত্রীরা ধরণা দিয়ে টিকিট না পেলেও সামান্য হায় হ্যালোতে টিকিট মিলছে প্রভাবশালী নামীদামি মানুষের। সে ক্ষেত্রে গুনতে হচ্ছে দুই থেকে তিন গুণ বেশি দাম। বাসের টিকিটের মতো ট্রেনের টিকিটও কালোবাজারে পাওয়া যাচ্ছে। ট্রেনের যাত্রীরা বলছেন, টিকিট নিয়ে সব জায়গাতেই এখন বাণিজ্যের মহোৎসব শুরু হয়েছে। অথচ সরকার ও স্থানীয় প্রশাসনের কোনো নজরদারি নেই।
সেন্টার ফর স্টাটিকসটিক অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট-সিএসডি নামের একটি জরিপ প্রতিষ্ঠান থেকে পাওয়া তথ্য মতে, রংপুরসহ উত্তরাঞ্চলের দুইটি বিভাগীয় নগরী, ১৪টি জেলা শহর এবং ১৪০টি উপজেলা শহরে বাস এবং পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের প্রতিটি আন্তঃনগর ট্রেন সার্ভিস স্টপ স্টেশনগুলোতেই চলছে কালোবাজারিদের দৌড়াত্ম্য। এতে যাত্রীরা বিপাকে পড়লে প্রশাসনের কোনো হুঁশ হচ্ছে না।
এ ব্যাপারে রংপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাইফুর রহমান সাইফ জানান, টিকিট কালোবাজারি হচ্ছে এটা সঠিক। কিন্তু কারা এটা করছে তাদের ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ কোনো যাত্রী আমাদের করছেন না। ফলে আমরা ব্যবস্থা নিতে পারছি না।
এ দিকে বিমানের টিকিটেও হাঁকা হচ্ছে তিন গুণ বেশি দাম। ঢাকা থেকে উত্তরাঞ্চলে আসতে প্রতি যাত্রীকে এক হাজার ৮০০ থেকে ২ হাজার টাকার টিকিট বিক্রি হচ্ছে ৭ হাজার ২০০ থেকে ৯ হাজার ২০০ টাকায়। ঈদের পরবর্তী এক সপ্তাহজুড়েও উত্তরাঞ্চল থেকে ঢাকা যাওয়ার বিমানের একটি টিকিটেরে জন্য যাত্রীদের গুনতে হবে ৭ হাজার ২০০ থেকে ৯ হাজার ২০০ টাকায়। এ ছাড়াও কালোবাজারে বিমানের ঈদ পরবর্তী টিকিটে নিতে যাত্রীদের খরচা করতে হচ্ছে ১০ হাজার টাকার ওপরে।
ব্লু মুন ট্রাভেলসের পরিচালক নোমান হোসাইন নাজির জানান, ঢাকা থেকে সৈয়দপুর আসতে এখন একটি টিকিট পাওয়া যাচ্ছে মোটামুটি ৯ হাজার টাকার মধ্যে। কিন্তু ঢাকায় যেতে দুই হাজার টাকার মধ্যেই হচ্ছে। ঈদ পরবর্তী সময়ে বিষয়টি হবে উল্টো। এখন চাহিদা বেশি, তাই এমন হচ্ছে। তবে কালোবাজারিদের কাছ থেকে বিমানের টিকিট না নেয়ার দাবি জানান তিনি।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা