১৩ মে ২০২৪, ৩০ বৈশাখ ১৪৩১, ০৪ জিলকদ ১৪৪৫
`


চট্টগ্রাম চেম্বারে সেমিনারে ট্যারিফ কমিশন চেয়ারম্যান

এলডিসি উত্তরণ- পরবর্তী সময়ে কমে আসবে রফতানিমুখী খাতের প্রণোদনা

-


বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান ড. আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন বলেছেন, অনেক প্রতিকূলতার মধ্যেও বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। ২০২৬ সালের মধ্যে বাংলাদেশ এলডিসি থেকে উত্তরণ করবে। ফলে আমাদের আমদানি-রফতানি বাণিজ্যে বিভিন্ন ধরনের চ্যালেঞ্জ আসবে। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে আমদানি-রফতানি স্বাভাবিক রাখা, দেশীয় শিল্পকে সুরক্ষা করা এবং বিভিন্ন দেশের সাথে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যে সর্বাধিক সুযোগ-সুবিধা কিভাবে লাভ করা যায় সেই লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে ট্যারিফ কমিশন। এ ছাড়াও দেশীয় শিল্পের স্বার্থ সংরক্ষণ, বিশ্ববাজারে বাংলাদেশী পণ্যের প্রসারে এফটিএ এবং পিটিএ ও ট্যাক্স টু জিডিপি রেশিও বাড়াতে কাজ করছে কমিশন। তিনি বলেন, এলডিসি উত্তরণ পরবর্তী সময়ে আস্তে আস্তে কমে আসবে রফতানিমুখী খাতের প্রণোদনা। তাই এ ক্ষেত্রে সরকার উৎপাদনমুখী শিল্পগুলোকে উৎপাদনশীলতা বাড়াতে মানবসম্পদ উন্নয়ন ও গবেষণা খাতে কিভাবে সহযোগিতা করা যায় তা নিয়েও কাজ করছে কমিশন। তিনি বলেন, দেশে বিভিন্ন সঙ্কটকালীন সময়ে এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ীরা পর্যাপ্ত মজুদ থাকা সত্ত্বেও প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয়। ফলে ভোগান্তি হয় সাধারণ জনগণের, ভাবমর্যাদা নষ্ট হয় সরকারের। তাই কারসাজির মাধ্যমে কারা এসব বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে তা উন্মোচন করতে ব্লক চেইন টেকনোলজি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

গতকাল চট্টগ্রামে ‘দেশীয় শিল্পের স্বার্থ সংরক্ষণে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের ভূমিকা’ শীর্ষক আয়োজিত এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন। চট্টগ্রাম চেম্বার ও বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের যৌথ উদ্যোগে চেম্বার সভাপতি ওমর হাজ্জাজের সভাপতিত্বে সেমিনারে বিশেষ অতিথি ছিলেন চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার মো: তোফায়েল ইসলাম ও চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজের কমিশনার মোহাম্মদ ফাইজুর রহমান। এ ছাড়া চেম্বার সহ-সভাপতি রাইসা মাহবুব, কনফিডেন্স সিমেন্টের এমডি জহির উদ্দিন আহমেদ, বিএসআরএমের সিনিয়র ম্যানেজার আলী মাহবুব হোসেন, শিপার্স কাউন্সিলের পরিচালক লোকপ্রিয়া বড়–য়া সেমিনারে বক্তব্য রাখেন। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের সদস্য শীষ হায়দার চৌধুরী।

সেমিনারে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজের কমিশনার মোহাম্মদ ফাইজুর রহমান বলেন, দেশের বিশেষায়িত অর্থনৈতিক জোন এবং হাইটেক পার্কে উৎপাদনমুখী শিল্পের এক ধরনের ট্যারিফ, আবার বাইরের এলাকাগুলোর শিল্পকারখানাগুলো এক ধরনের ট্যারিফ। ফলে দেশীয় শিল্পকারখানাগুলো বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। তাই এই বিষয়টি কমিশনের পর্যালোচনা করা দরকার। এ ছাড়াও পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে মিসডিকলারেশনে ২০০-৪০০% পর্যন্ত যে জরিমানা করা হয় তা হ্রাস করার জন্য এনবিআরকে জানানো হয়েছে। আশা করি আগামী বাজেটে তার একটি প্রতিফলন পাওয়া যেতে পারে। তিনি হ্যাজার্ডাস পণ্য এবং বিপজ্জনক দ্রব্য ও রেডিয়েশন হয় এ ধরনের পণ্যের ক্ষেত্রে আমদানি নীতি পর্যালোচনা করার সুপারিশ করেন। চেম্বার সভাপতি ওমর হাজ্জাজ বলেন, শিল্পায়ন ব্যতীত জাতীয় অর্থনৈতিক অগ্রগতি সম্ভব নয়। তাই টেকসই অর্থনীতি গড়ে তুলতে হলে বেসরকারি খাতে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ বৃদ্ধি, রফতানি বৈচিত্র্যকরণ, নতুন নতুন পণ্য উদ্ভাবন এবং বাণিজ্য ক্ষেত্রে বাধাগুলো দূর করতে হবে। এছাড়া বৈশ্বিক ও দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলা করে প্রতিযোগী রপ্তানিকারক দেশের সাথে দক্ষতা ও উৎপাদনশীলতার ব্যবধান কমাতে এলডিসি উত্তরণ পরবর্তী আরো কয়েক বছর সময়ের প্রয়োজন। এ প্রেক্ষাপটে সরাসরি প্রণোদনা দেয়া না গেলেও পরোক্ষভাবে রফতানিমুখী শিল্পকে গবেষণা, টেকনোলজি, উদ্ভাবন ও দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য উৎসাহমূলক প্রণোদনার বিকল্প পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন।

 


আরো সংবাদ



premium cement